ব্রিটেনের কমন্সসভা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি সভার মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা করো(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, মাইনর সিলেবাস)।
ভূমিকাঃ আলোচনা শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশ ব্রিটেনের আইনসভা পার্লামেন্ট নামে পরিচিত। আর সে দেশের পার্লামেন্ট দুটি কক্ষ- উচ্চ কক্ষ এবং নিম্নকক্ষ। পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হল লর্ডসভা। রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসন ব্যবস্থার দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা কংগ্রেস নামে পরিচিত। তবে কংগ্রেসের দুটি কক্ষ উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ। কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হলো জনপ্রতিনিধি সভা। আর এক্ষেত্রে উভয় দেশের নিম্নপক্ষ কমন্সসভা ও প্রতিনিধি সভার মধ্যে তুলনামূলক আলোচনায় আমরা দেখি-
উভয় দেশের নিম্নকক্ষের মধ্যে কিছু মিল বা সাদৃস্য লক্ষ্য করা যায়।আর সেই সদস্য গুলি হল-
উভয় দেশের নিম্নকক্ষের সদস্যরা জনগণ দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত হন এবং উভয় দেশের নিম্নকক্ষ আইন প্রনয়ন সংক্রান্ত কাজের সঙ্গে যুক্ত। সভার কার্যাদি পরিচালনা করেন স্পিকার এবং নিম্নকক্ষ বিভিন্ন কমিটির মাধ্যমে বিভাগীয় কার্যাদি সম্পাদন করেন। তবুও উভয় দেশের নিম্নকক্ষের মধ্যে বেশ কিছু বৈসাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। আর সেই বৈসাদৃশ্য গুলি হল-
উদ্ভবগত পার্থক্যঃ
ব্রিটেনের কমন্সসভা সাংবিধানিক আইন দ্বারা সৃষ্ট নয়। ব্রিটেনের প্রচলিত বিভিন্ন প্রথা, রীতিনীতি,ঐতিহ্য ও প্রথাগত আইনের মাধ্যমে কমন্সসভার উদ্ভব হয়েছে। কিন্তু-
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রতিনিধি সভা সাংবিধানিক আইন দ্বারা সৃষ্ট।
সদস্য সংখ্যাগত পার্থক্যঃ
কমেন্সসভার সদস্য সংখ্যা জনপ্রতিনিধি সভার সদস্য সংখ্যার তুলনায় অনেক বেশি। বর্তমানে কমন্সসভার সদস্য সংখ্যা ৬৫৯।কিন্তু- জনপ্রতিনিধি সবার সদস্য সংখ্যা ৪৩৫।
কার্যকালের মেয়াদঃ
ব্রিটিশ কমন্সসভার কার্যকালের মেয়াদ পাঁচ বছর। কার্যকালের মেয়াদ শেষ হবার আগে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী রাজা বা রানী কমন্সসভা ভেঙে দিতে পারেন। কিন্তু-
মার্কিন জনপ্রতিনিধি সভার কার্যকালের মেয়াদ ২ বছর। কার্যকালের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে জনপ্রতিনিধি সভাকে ভেঙে দেওয়া যায় না।
বিতর্কের প্রকৃতিগত পার্থক্যঃ
ব্রিটিশ কমন্সসভায় বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয় সরকার এবং বিরোধী দলের মধ্যে। আর এখানে বিরোধী দল সরকারের নীতি ও কর্মসূচির বিরোধিতা করে। কিন্তু-
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জনপ্রতিনিধি সভায় এরূপ সরাসরি সরকার এবং বিরোধী দলের মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব লক্ষ্য করা যায় না। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসন বিভাগের সদস্যরা আইনসভার সদস্য নন।
স্পিকারের ভূমিকাগতঃ
ব্রিটিশ কমন্সসভার স্পিকার রাজনীতির ঊর্ধ্বে থেকে সভার কাজকর্ম পরিচালনা করেন। আবার তিনি দলের সদস্যপদ ত্যাগ করতে পারেন। কিন্তু-
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিনিধি সভার স্পিকার রাজনীতির ঊর্ধ্বে থেকে সবার কাজকর্ম পরিচালনা করেন না। তিনি নিজে দলের স্বার্থ রক্ষার ব্যাপারে সর্বদা সচেতন থাকেন।
আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রেঃ
ব্রিটেনে কমন্সসভা আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সর্বেসর্বা।কারণ অর্থবিলের ক্ষেত্রে লর্ডসভার কোন ক্ষমতা নেই।আর সাধারণ বিলের ক্ষেত্রে লর্ডসভা একবছর বিলম্ব করতে পারে মাত্র। কিন্তু-
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে উভয় কক্ষ সমান ক্ষমতা ভোগ করে। অর্থাৎ আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে কমন্সসভার তুলনায় জনপ্রতিনিধি সভার ক্ষমতা কম।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, ব্রিটেনের নিম্নকক্ষ কমন্সসভার বিভিন্ন ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিম্নকক্ষ জনপ্রতিনিধিসভার তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী। তবে ব্রিটেনের নিম্নকক্ষ কমন্সসভার ক্ষমতা অনেকটাই তত্বগত। বাস্তবে ক্যাবিনেটই কমন্সসভাকে নিয়ন্ত্রণ করে। বর্তমান বিশ্বের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একচ্ছত্র প্রাধান্য জনপ্রতিনিধিসভার মর্যাদাকে বৃদ্ধি করেছে।
ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের SHESHER KOBITA SUNDORBON YOUTUBE CHANNEL
Comments
Post a Comment