Skip to main content

সাম্য ও স্বাধীনতার(BA1,XI 2nd) পারস্পরিক সম্পর্ক

“সাম্য ও স্বাধীনতা পরস্পর সম্পূরক” এবং “স্বাধীনতা ও সাম্য পরস্পরবিরােধী”- ব্যাখ্যা কর।

অথবা, সাম্য ও স্বাধীনতা কাকে বলে? সাম্য ও স্বাধীনতার সম্পর্ক আলােচনা কর।

অথবা, সাম্য কাকে বলে? সাম্য ও স্বাধীনতার সম্পর্ক আলােচনা কর।(বি.এ. প্রথম সেমিস্টার এবং একাদশ শ্রেণী, দ্বিতীয় সেমিস্টার)


•ভূমিকাঃ আলোচনা শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে,সাম্য বিষয়টি আলােচনা সর্বকালের একটি বহু আলোচিত বিষয়। যেখানে প্রাচীনকালের গ্রিক দার্শনিকগণ থেকে আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ পর্যন্ত সকলেই সাম্যের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরােপ করে থাকেন।আর সেখানে -

                •সাধারণ অর্থে সাম্য•

 সাধারণ অর্থে সাম্য বলতে বোঝায় রাষ্ট্র বা সমাজে সকল মানুষই সমান। তাই সেখানে প্রত্যেকে সমান সুযােগ-সুবিধা, সমান অধিকার ও স্বাধীনতা ভােগ করবে। 

•সাম্যঃ সাম্যের সংজ্ঞা নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতভেদ আছে। একেকজন একেকভাবে সাম্যের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। প্রসঙ্গত ম্যাক্সি বলেন-

               সাম্য হলো সেরূপ সুযােগ-সুবিধার ব্যবস্থা যাতে কোনাে ব্যক্তির ব্যক্তিত্বকে অন্যের ব্যক্তিগত সুবিধার বেদীমূলে আত্মবিসর্জন দিতে না হয়। অর্থাৎ-               সাম্য বলতে এমন একটি প্রক্রিয়াকে বুঝায় যেখানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নারী, পুরুষ নির্বিশেষে সকল নাগরিককে সমান সুযােগ-সুবিধা প্রদান করা হয়।


•স্বাধীনতাঃ স্বাধীনতা হলাে অন্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ না করে নিজের অধিকার পরিপূর্ণভাবে ভােগ করা। আর সেটি ছাড়া কোন মতেই ব্যক্তিত্ব বিকাশ সম্ভব নয়। সুতারাং-

                  স্বাধীনতা হলাে এমন একটি সামাজিক অবস্থা বা পরিবেশ যেখানে ব্যক্তিসত্তার পরিপূর্ণ বিকাশ সম্ভবপর এবং তার প্রয়ােজনীয় অধিকার ভােগ করতে পারে।

                  •° সাম্য ও স্বাধীনতার সম্পর্ক °•

 রাষ্ট্রবিজ্ঞানে আমরা সাম্য ও স্বাধীনতার সম্পর্কের ক্ষেত্রে পরস্পর বিরােধী দু'টি মতবাদের অস্তিত্ব আমরা দেখতে পাই।আর সেখানে -

• প্রথম মতবাদ অনুসারে-

          সাম্য ও স্বাধীনতা পরস্পর বিরােধী।

• দ্বিতীয় মতবাদ অনুসারে-

        স্বাধীনতা ও সাম্য পরস্পর সম্পূরক। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের এ সকল মতামত থেকে বলা যায় যায় যে, সাম্য স্বাধীনতার বিরােধী নয়, বরং পরস্পরের পরিপূরক। কাজেই-

        সাম্য ও স্বাধীনতার মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। আর এই নিরিখে সাম্য ও স্বাধীনতার সম্পর্ক হলাে-


•১)         •সাম্যই প্রকৃত স্বাধীনতার ভিত্তি•

 সাম্য হলাে স্বাধীনতার ভিত্তি। মানবতার নিরবচ্ছিন্ন সম্প্রসারণ যদি স্বাধীনতা হয়, তাহলে সাম্যভিত্তিক সমাজ ছাড়া এ স্বাধীনতা অসম্ভব। বাস্তবে ও প্রকৃতিগত বিচারে উভয় ধারণাই আইনগত।

•২)        •সাম্য ছাড়া স্বাধীনতা কল্পনাহীন•

 সাম্য ছাড়া স্বাধীনতা অকল্পনীয়। রুশাে বলেন, সাম্য ব্যতীত স্বাধীনতা অর্থহীন। অধ্যাপক লাস্কি বলেন-

       “একটি রাষ্ট্রে যত সাম্য থাকবে সেই

         রাষ্ট্রে তত স্বাধীনতা থাকবে।” 

সাম্য ছাড়া এক শ্রেণী আরেক শ্রেণীকে শােষণ করবে। দুর্বলের ওপর অত্যাচার হবে। কাজেই সাম্য ছাড়া স্বাধীনতা অর্থহীন।

•৩)        •সাম্য ও স্বাধীনতা গণতন্ত্রের ভিত্তি•

 সাম্য ও স্বাধীনতা উভয়েই গণতন্ত্রের ভিত্তি। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় স্বাধীনতার যেমন প্রয়ােজন, সাম্যেরও তেমনি প্রয়ােজন। স্বাধীনতা যেমন নাগরিকদের মতামত প্রকাশে সাহায্য করে, সাম্য তেমনি ধনী-গরিবের ভেদাভেদ দূর করে। সুতরাং সাম্য ও স্বাধীনতা পরস্পর ঘনিষ্ঠ ও সম্পর্কযুক্ত।


•৪)          • সাম্য ও স্বাধীনতা পরিপূরক•

সাম্য ও স্বাধীনতা পরস্পরের পরিপূরক। তাই সাম্য ছাড়া স্বাধীনতা ভােগ করা যায় না। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক স্বাধীনতা ব্যতীত সাম্যভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা যায় না। আবার সাম্যের নিশ্চয়তা থাকলে কোনাে প্রকার পরাধীনতা থাকে না। স্বাধীনতার অর্থ সাম্য আর সাম্যের অর্থ স্বাধীনতা। এরা পরস্পর পরিপূরক ও ঘনিষ্ঠ।


•৫)             •সাম্য স্বাধীনতার পূর্বশর্ত•

 মাক্সীয়বাদে অর্থনৈতিক সাম্যকে স্বাধীনতার পূর্বশর্ত হিসেবে গণ্য করা হয়।আর এই তত্ত্ব অনুসারে সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় প্রকৃত অর্থনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।

           পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে,স্বাধীনতাকে বুঝতে হলে সাম্য এবং সাম্যকে বুঝতে হলে স্বাধীনতা সম্পর্কে জানতে হবে। সুতরাং সাম্য ও স্বাধীনতার মধ্যে যতই বিরােধ থাকুক না কেন, উভয়ের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। সেকারণেই সাম্যের সংস্পর্শে যে স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হবে সেই স্বাধীনতাই হবে প্রকৃত স্বাধীনতা। 

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...