Skip to main content

রাজসিংহ ঐতিহাসিক উপন্যাস হিসেবে কতখানি সার্থক, আলোচনা করো।

ঐতিহাসিক উপন্যাস হিসেবে রাজসিংহ উপন্যাসটি কতখানি সার্থক, আলোচনা করে দেখাও।


                •• আলোচনা শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, বঙ্কিমচন্দ্রের সময়ে নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক উপাদানসমূহ আবিষ্কৃত না হওয়ায় তাকে টডের রাজস্থানের ইতিহাস অর্ম ও মানুচীর বিবরণ এবং বার্ণিয়ারের ভ্রমণ বৃত্তান্ত থেকে উপকরণ ও বর্ণনা গ্রহণ করতে হয়েছিল। তবে তিনি বিশেষ সাবধানতা সহকারে উপকরণ সমূহ উপন্যাসে ব্যবহার করেছেন এবং লিখলেন রাজসিংহ উপন্যাসটি। আর এই উপন্যাস সম্পর্কে তিনি বললেন-

     "এই প্রথম ঐতিহাসিক উপন্যাস লিখলাম।"

বঙ্কিমচন্দ্রের এই ধারণা এবং মন্তব্য থেকে আমরা সহজেই বলতে পারি যে ,উপন্যাসটি অবশ্যই ঐতিহাসিক। আর এই স্বীকৃতি ঔপন্যাসিক নিজেই দিয়েছেন। আর যেখানে আমরা দেখি-

           ইতিহাসকে কেন্দ্র করে বঙ্কিমচন্দ্র অসংখ্য উপন্যাস রচনা করেছেন। যার মধ্যে অন্যতম চন্দ্রশেখর, দুর্গেশনন্দিনী, সীতারাম আরোও অনেক উপন্যাস। তবে এখানে একটি কথা বলে রাখা ভালো ইতিহাসকে কেন্দ্র করে উক্ত উপন্যাসগুলি রচিত হলেও লেখক বঙ্কিমচন্দ্র এই শ্রেণীর লেখাগুলোকে কখনোই ঐতিহাসিক উপন্যাস রূপে স্বীকৃতি দেননি। আর রাজসিংহ উপন্যাস রচনা কালে তিনি আরও বলেন যে-

            "আমি পূর্বে কখনো ঐতিহাসিক                                     উপন্যাস লিখি নাই।"

তাঁর নিজের এই মন্তব্য থেকে নিজেই প্রমাণ করলেন যে, রাজসিংহ উপন্যাসটি তাঁর রচিত একটি ঐতিহাসিক উপন্যাস। তবে-

           ঐতিহাসিক উপন্যাস বলতে আমরা সাধারণত জানি যে-এই শ্রেণীর উপন্যাসের মধ্যে অবশ্যই একটি বিশেষ যুগের ঐতিহাসিক ঘাত-প্রতিঘাত সংঘর্ষ থাকবে। থাকব সেইসাথে কাহিনী ও চরিত্রগুলি অবশ্যই হবে ঐতিহাসিক আবরণে মোড়া। তবে সেখানে ব্যক্তিজীবন হবে ইতিহাসের আঁধারে আবৃত। আর এই নিরিখে আমাদের আলোচনা করতে হবে রাজ্যে না উপন্যাসটির প্রকৃতই ঐতিহাসিক উপন্যাস কিনা। যেখানে -

         ঐতিহাসিক উপন্যাসের প্রধান চরিত্রগুলি প্রধানত ইতিহাস থেকে নেওয়া হয় ।তবে এই উপন্যাসের চরিত্রগুলি কাল্পনিক চরিত্রও হতে পারে। আর সেখানে সমকালীন যুগের জীবনাদর্শ প্রতিফলিত হতে দেখা যায়। শুধু তাই নয়, এখানে এই উপন্যাসের কাহিনী অবশ্যই ইতিহাসের পটভূমিকায় তৈরি করা হয়। যে পটভূমিকায় ঐতিহাসিক সত্যকে অবশ্যই তুলে ধরতে হয়। এই নিরিখে আমরা বলতে পারি যে-

       ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রাজসিংহ উপন্যাসটি রচনা করেছেন রাজস্থানের রাজপুতদের গৌরবগাঁথা পটভূমিকায়। তবে এখানে হিন্দু জাতির বাহুবল দেখানোর জন্য উপন্যাসটির রচিত হয়েছে। আর সেই কারণে লেখক সিসোদিয়া রাজবংশের রাজসিংহকে তাঁর উপন্যাসে তুলে ধরেছেন। শুধুমাত্র রাজসিংহ নয় সেই সাথে ঔরঙ্গজেব, জেবুন্নেসা প্রমূখ ঐতিহাসিক চরিত্রগুলিকে এখানে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে চিত্রিত করেছেন।আর-

        রাজসিংহ, ঔরঙ্গজেব, জেবুন্নেসা প্রমূখ চরিত্রের পাশাপাশি আরও অনেক গৌণ অপ্রধান চরিত্র ইতিহাসের পটভূমিকায় এখানে তুলে ধরা হয়েছে। তবে বঙ্কিমচন্দ্র ভূমিকায় লিখেছেন যে,

        "ইতিহাস যুদ্ধাদির ফল তিনি অবিকৃত                            রেখেছেন, তবে যুদ্ধের প্রকরণ তাঁকে                               গড়ে নিতে হয়েছে।"

              আর এই কারণে তিনি ঐতিহাসিক চরিত্রসমূহেরও কোন পরিবর্তন তিনি করেননি। তবে তাদের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি অক্ষুন্ন রেখে চরিত্রসমূহ গড়ে তোলার জন্য কল্পনার আশ্রয় তাঁকে নিতে হয়েছে। আর সেই কল্পনার আশ্রয়ে তুলে ধরেছেন মানিকলাল, নির্মলকুমারী, দরিয়া, মোবারক প্রভৃতির চরিত্রগুলি। আর এই দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যেতে পারে যে,রাজসিংহ উপন্যাসটি অবশ্যই ঐতিহাসিক উপন্যাস। পাশাপাশি-

      আমাদের দেখে নেওয়া দরকার যে, রাজসিংহ উপন্যাসে বঙ্কিমচন্দ্র ইতিহাসের মূল ঘটনা এখানে যথার্থভাবে প্রতিফলিত করেছেন কিনা। তবে এখানে লক্ষ্যনীয় যে, বঙ্কিমচন্দ্র ইতিহাসের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে যাবতীয় ঘটনা ও চরিত্রগুলি চিত্রিত করেছেন। যার ফলে এ উপন্যাসের কাহিনীর মধ্যে আমরা দেখতে পাই-নির্মল কুমারীর কাছে ঔরঙ্গজেবের শূন্য হৃদয়ে বেদনার প্রকাশ, চঞ্চলকুমারীর রাজসিংহের জন্য প্রতীক্ষার অবসান, জেবুন্নেসার শাহাজাদী মর্যাদা ভূলুন্ঠিত, মোবারক এর মত মনসবদারের প্রণয়। এই ঘটনাগুলি ইতিহাসের পাতায় যেমন সত্য ঠিক তেমনি মানব জীবনেও সত্য। আসলে-

      রাজসিংহ উপন্যাসে বঙ্কিমচন্দ্র কল্পনাকে আশ্রয় করেছেন ঠিকই, কিন্তু তিনি সত্যকে অতিক্রম করেননি। বরং বলা যায়, সত্যকে তিনি উদ্ভাসিত করেছেন। যেখানে মূল চরিত্রসমূহ যেভাবে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন তাও ইতিহাসের সাথে পূর্ণ সংগতি রক্ষা করে। তাই উপন্যাসে নিরঙ্কুশ প্রাধান্য পেয়েছে ইতিহাসের ঘটনা। আর সেই ঘটনার মধ্যে ব্যক্তিজীবন সম্পূর্ণরূপে ইতিহাসের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়েছে। যার ফলে রাজসিংহ উপন্যাসটিকে অবশ্যই আমরা নির্দিষ্ট করে ঐতিহাসিক উপন্যাস বলতে পারি।


এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের 

"SHESHER KOBITA SUNDARBAN" YouTube channel ।


       

        

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...