জাতীয়তাবাদ কাকে বলে? জাতীয়তাবাদের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।
• জাতীয়তাবাদঃ জাতীয়তাবাদ হল একটি মানসিক অনুভূতি। যে অনুভূতির মাধ্যমে কোন জাতির ঐতিহ্য, আশা-আকাঙ্ক্ষা ইত্যাদি প্রকাশ পায়। শুধু তাই নয়- ভাষা, ধর্ম, সাহিত্য, সংস্কৃতি, বংশ প্রভৃতি কারণে যখন একটি জনসমষ্টি নিজেদের সুখ-দুঃখ, ন্যায়-অন্যায় ও মান-অপমানের সমান অংশীদার বলে মনে করে এবং নিজেদের মধ্যে গভীর একাত্মবোধ অনুভব করে তখন তাদের মধ্যে জাতীয়তাবোধের সৃষ্টি হয়।আর- ঔঔৌএই জাতীয়তাবোধের সঙ্গে দেশপ্রেম মিলিত হয়ে যখন তা একটি রাজনৈতিক আদর্শ হিসেবে গড়ে ওঠে, তখন তাকে জাতীয়তাবাদ বলে।
•জাতীয়তাবাদের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য•
জাতীয়তাবাদ হলো একটি মহান আদর্শ।আর এই আদর্শ মানুষের মধ্যে ঐক্যবোধের সঞ্চার করে। সেই সাথে মানুষকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে আত্মত্যাগে প্রেরণা যোগায়। তবে প্রত্যেক জাতির কিছু নিজস্ব গুণ বা বৈশিষ্ট্য থাকে। যেখানে- জাতীয়তাবাদের মাধ্যমে সেই সব গুণের বিকাশ ঘটে। জাতীয়তাবাদে উদ্ভুদ্ধ জাতিগুলি নিজেদের যেমন উন্নত করে, ঠিক তেমনি অপরকেও উন্নত হতে সাহায্য করে। তাই আদর্শ জাতীয়বাদের মূলমন্ত্র হলো- "নিজে বাঁচো এবং অপরকে বাঁচতে দাও।"
আসলে জাতীয়তাবাদী আদর্শ বিভিন্ন জাতিকে নিজেদের স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠনে তথা বৈদেশিক শাসন থেকে মুক্তি লাভের সংগ্রামে অনুপ্রেরণা দান করে। আর সেখানে দেখা যায় যে- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার অসংখ্য জাতি জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামে নেমে পড়ে এবং তারা সফলও হয়। তবে-
জাতীয়তাবাদ কখনো কখনো আদর্শ ভ্রষ্ট হয়ে সংকীর্ণ স্বাদেশিকতায় পরিণত হয় এবং ক্রমে তা উগ্র জাতীয়তাবাদে রূপান্তরিত হয়। তবে উগ্র জাতীয়তাবাদ নিজেদের সম্পর্কে গর্ববোধ এবং অন্য জাতির প্রতি ঘৃণার সৃষ্টি করে। শুধু তাই নয়, তারা সাম্রাজ্যবাদ তথা যুদ্ধকে ইন্ধন যোগায়,বিশ্ব শান্তি নষ্ট করে এবং সভ্যতাকে ধ্বংস করে। তবে -
উনিশ শতকে জাতীয়তাবাদ যেখানে মূলত রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও জাতীয় ঐক্য সাধনের মহান কাজে নিযুক্ত ছিল।বিশ শতকের প্রথম দিকে জাতীয়তাবাদ সেখানে দেশকে পররাজ্য আক্রমণে, নয়া সাম্রাজ্যবাদের প্রসারে ইন্ধন জুগিয়েছে। আর তারই বিষময় পরিণতি হলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধ।
Comments
Post a Comment