জাতি কাকে বলে? জাতির বৈশিষ্ট্য লেখো(পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ, একাদশ শ্রেণি, দ্বিতীয় সেমিস্টার)
•জাতিঃ আমরা জানি যে,জাতি শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো নেশন(Nation)। আর এই নেশন শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ নেটিও(Natio) থেকে। যার বাংলা অর্থ হল জাতি। তবে গার্নার মনে করেন-
"ব্যুৎপত্তিগত অর্থে জাতি হল এমন একটি জনসমাজ যা একই পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভূত।"
•আসলে নেশন একটি সজীব সত্তা, মানষ পদার্থ। আর এই দুটি জিনিস বস্তুত একই। যার মধ্যে একটি অতীতে অবস্থিত, আরেকটি বর্তমানে। তবে -
•আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা জাতি শব্দটিকে একটু ভিন্ন অর্থের প্রয়োগ করেন। আর তাঁদের মতে জাতীয় জনসমাজের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনা গভীর হলে জাতির উদ্ভব হয় এবং জাতি পরিণতি লাভ করে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে। প্রসঙ্গত গিলক্রিস্ট বলেন-
"জাতি হলো রাষ্ট্রের অধীনস্থ ঐক্যবদ্ধ জনসমাজ" ("unity of the people organised into one state")।
তবে মনে রাখা দরকার রাষ্ট্র গড়ে উঠলেই যে জাতি গড়ে উঠবে অথবা রাষ্ট্র বিলুপ্ত হলেই যে জাতি বিলুপ্ত হবে এমন কোন মানে নেই। কারণ-
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি একটি রাষ্ট্র ছিল, কিন্তু এর অধিবাসীদের মধ্যে শুধুমাত্র রাজনৈতিক বন্ধন ছাড়া অন্য কোন বন্ধন না থাকায় এরা জাতিতে পরিণত হতে পারেনি।
••জাতির বৈশিষ্ট্য••
•জাতির ধারণা পর্যালোচনার পরিপেক্ষিতে জাতির কতকগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্যের পরিচয় পাওয়া যায়। আর এই বৈশিষ্ট্যগুলি সম্পর্কে অবহিত হতে পারলে জাতি সম্পর্কে অধিকতর সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করা সম্ভব হবে। আর সেই বৈশিষ্ট্যগুলি হলো-
১) •বংশানুক্রমিকতা•
বংশানুক্রমিকতা জাতি প্রথার প্রথম বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। জাতির সদস্যপদ বংশানুক্রমিকভাবে আরোপিত হয়ে থাকে। জাতি নির্ধারিত বা নিয়ন্ত্রিত হয় জন্মসূত্রে। অর্থাৎ জাতি ব্যবস্থা হলো জন্মভিত্তিক।
২) •আন্তর্বৈবাহিক গোষ্ঠী•
জাতি হলো এক আন্তর্বৈবাহিক গোষ্ঠী। স্বভাবতই জাতির একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল আন্তর্বৈবাহিক। কোন একটি জাতির কোন একজন সদস্য ভিন্ন জাতির কোন সদস্যকে বিবাহ করে না। স্বজাতির গণ্ডির মধ্যেই বৈবাহিক সম্পর্ক সীমাবদ্ধ থাকে। এই কারণে সকল ব্রাহ্মণ তনয়কে অবশ্যই কোন ব্রাহ্মণ কন্যার পানি গ্রহণ করতে হয়। তবে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে স্বজাতির গণ্ডিই শেষ কথা নয়। এখানে বিবাহের ব্যাপারে স্বজাতির সীমানার মধ্যেই স্বগোত্র,স-পিন্ড প্রভৃতির শাস্ত্রীয় বিধি নিষেধ কঠোরতা মেনে চলতে হয়।
৩) •জাতিগত বিধি-বিধান ও প্রথা•
প্রতিটি জাতিরই নিজস্ব কিছু বিধি-বিধান ও প্রথা প্রচলিত থাকে। জাতি মাত্রেই তার স্বতন্ত্র মর্যাদা যথাযথভাবে সংরক্ষণের স্বার্থে এই সমস্ত বিধিব্যবস্থা ও প্রচলিত প্রথাকে কার্যকর করার ব্যাপারে সতর্ক ও সচেষ্ট থাকে। আর সেখানে বিবাহ, নৈতিকতা, পরিবার ব্যবস্থা প্রভৃতির বিষয়ে বিভিন্ন বিধিনিষেধ প্রচলিত দেখা যায়। আবার এই সমস্ত বিধিনিষেধের অমান্যজনিত অপরাধ বিচার-বিবেচনা করার উদ্দেশ্যে কোন কোন জাতির মধ্যে জাত-পঞ্চায়েতের অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়। আর সেখানে জাতিগত আচার-বিচার ও বিধি-নিষেধ প্রকাশ্যেই বলবৎ করনের ব্যবস্থা করে থাকে।
৪) •সামাজিক সচলতার অভাব•
জাতি প্রথার ক্ষেত্রে সামাজিক সচলতার অভাব পরিলক্ষিত হয়। গুণগত যোগ্যতার বিচারে জাতি পরিবর্তন করা যায় না। জাতিগত আচার-বিচার বা বিধি-নিষেধ অমান্য করলে অমান্যকারীকে প্রায়শ্চিত্ত করতে হয়। আবার অপরাধ যদি গুরুতর প্রকৃতির হয় তাহলে অপরাধীকে জাতিচ্যুত হতে হয়। অর্থাৎ এখানে যে ব্যক্তি জন্মসূত্রে যে জাতিভুক্ত সেই জাতির সঙ্গে তার সম্পর্ক আমৃত্যু।এমনকি মৃত্যুর পরেও এই সম্পর্কের অস্তিত্বের কথা বলা হয়।
৫) •জাতিসূচক পদবী•
অনেক সময় পদবীর পার্থক্যের পরিপ্রেক্ষিতে জাতিভেদের বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মাণ হয়। উদাহরণ হিসেবে বন্দ্যোপাধ্যায়, চট্টোপাধ্যায় মুখোপাধ্যায় প্রভৃতি ব্রাহ্মণদের পদবী। আবার সেনগুপ্ত, দাশগুপ্ত,সেন প্রভৃতি বদ্যিদের জাতিসূচক পদবী। অনুরূপভাবে বৃত্তিসূচক পদবীর কথাও বলা দরকার। বিভিন্ন জাতি ও খণ্ড জাতির মধ্যে বৃত্তিসূচক পদবী পরিলক্ষিত হয়। এরকম পদবীর দৃষ্টান্ত হিসেবে কর্মকার, বণিক,গোপ প্রভৃতি পদবীর কথা উল্লেখ করা আবশ্যক।
ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের "SHESHER KOBITA" SUNDORBON YOUTUBE CHANNEL
Comments
Post a Comment