নাথ সাহিত্যের উদ্ভব কিভাবে হয়েছিল আলোচনা করো। (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা মেজর, প্রথম সেমিস্টার)
আলোচনা শুরুতেই আমরা বলে রাখি নাথ সাহিত্যের উদ্ভব সম্বন্ধে সম্প্রতি জনৈক গবেষক অভিমত প্রকাশ করেছেন যে-
"শৈবধর্ম থেকেই নাথধর্মের উদ্ভব হয়েছে। কিন্তু নাথ সম্প্রদায়ের গ্রন্থাদি আলোচনা করিয়া ও বিভিন্ন। মোহান্তদের সহিত আলোচনা করিয়া আমি তাঁহাদের। মূলত শৈব বলিয়া সিদ্ধান্ত করিয়াছি।"
তবে নাথ সাহিত্য বিশ্লেষণ করলে কিন্তু উক্তিটির সমর্থন পাওয়া যায় না। নাথ সাহিত্যে শিবও একজন জ্যেষ্ঠগুরু এবং দেবতা বলে স্বীকৃত হলেও অন্যান্য নাথগুরুদের কেউ কেউ তাঁকে তেমন সম্মান দান করেননি। এমনকি নাথপন্থী কবিরাও তাদের কাব্যে শিবকে খুব শ্রদ্ধার আসনে স্থাপন করেননি। স্থানে স্থানে বরং শিবকে উপহাস্যস্মদ করে তোলা হয়েছে।অতএব অনুমান হয়-
অপর সকল মঙ্গলকাব্যে যেমন অনার্যকুলোদ্ভব দেবদেবীরা শেষ পর্যন্ত শিবের সঙ্গে একটা ঘনিষ্ঠ পারিবারিক সম্পর্ক স্থাপন করে জাতে উঠবার প্রয়াস পেয়েছেন। তবে নাথপন্থীরাও এইভাবে শিবের সঙ্গে যোগাযুক্ত হয়ে আর্য সমাজের অন্তর্ভুক্ত হতে চাইছেন। আসলে না ধর্মের উদ্ভব ঘটেছিল বৌদ্ধ ধর্মের বিকারে-এই অনুমানই সঙ্গত। তবে-
যে আদিম অনার্যসমাজ বহুকাল পূর্বেই বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত হয়ে হিন্দুবিরোধী মনোভাবের অধিকারী হয়েছিল, কাল ক্রমেই তাদের মধ্যেই না ধর্মের উদ্ভব হয়। পূর্বসংস্থার তারা তখনও ত্যাগ করতে পারেননি বলেই একদিকে পৌরাণিক দেবদেবীরা যেমন তাদের দৃষ্টিতে শ্রদ্ধার আসন লাভ করতে পারেননি, ঠিক তেমনি হিন্দু আচার-আচরণও তাদের কাছে হাস্যকর বলে মনে হয়েছে। তাছাড়া-
নাথ সাহিত্যে যাদের গুরুর আসন দান করা হয়েছে, প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে তাদের আমরা 'সিদ্ধাচার্য' নামেই অভিহিত করেছি। এই সিদ্ধাচার্যগণ ছিলেন বৌদ্ধ সহজিয়াপন্থী সাধক।অতএব-
নাথ ধর্মের সাথে বৌদ্ধদের যোগাযোগই ছিল ঘনিষ্ঠ এই অভিমত অনুমান মাত্র নয়। এই প্রসঙ্গে আরেকটি সূত্রের উল্লেখ প্রয়োজন। এ যাবৎ কোন মুসলমান কবির রচিত কোন মঙ্গলকাব্যের সন্ধান পাওয়া যায় না। অথচ নাথ সাহিত্য রচয়িতারূপে একাধিক মুসলমান কবির পরিচয় পাওয়া যায়। এই নাথ সাহিত্যে কিংবা নাথধর্মে যে কোন মুসলমানী প্রভাব বর্তমান তাও নয়। তাই অনুমান করা হয়-
যে অনার্য সমাজ থেকে নাথধর্মের উদ্ভব হয়েছে, তাদের অনেকেই পরবর্তীকালে মুসলমান ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। পূর্বসংস্কার ও ঐতিহ্যের জন্যই তারা নাথ ধর্মের প্রতি কিছুটা পক্ষপাতিত্ব দেখাতে পারেন। অতএব, নাথধর্মের উৎপত্তি সম্বন্ধে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয় যে, এটি মূলত ছিল অনার্য ধর্ম। পরবর্তীকালে বৌদ্ধধর্মের প্রভাবেই এর কাঠামো গঠিত হয়েছিল। আরোও পরে শিবকে এই ধর্মের সঙ্গে যুক্ত করে এর আর্যীকরণের চেষ্টা করা হয়।
( ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের SHESHER KOBITA SUNDORBON YOUTUBE CHANNEL)
Comments
Post a Comment