রাজনৈতিক ব্যবস্থা কাকে বলে? রাজনৈতিক ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো। অথবা- রাজনৈতিক ব্যবস্থার মূল উপাদান গুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো। (West Bengal State University, Political Science, 3rd Semester, Minor)
আলোচনা শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, বর্তমানে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও তার শ্রেণীবিভাজনের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। বিংশ শতাব্দীর আগে পর্যন্ত সরকার তথা শাসনব্যবস্থার আলোচনাকে সংবিধান বা সাংবিধানিক ব্যবস্থার আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হতো। কিন্তু ঘটনা হলো কোন দেশের সংবিধানকে রক্ষা করলে সেই দেশের সরকার বা রাজনীতি সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া যায় না। কারণ- কোন দেশের সরকারের কাজকর্ম সাংবিধানিক গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। বিশেষ করে বর্তমানে প্রতিটি দেশেই এমন অনেক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান থাকে যেগুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাংবিধানিক বিধি ব্যবস্থা অনুযায়ী গঠিত হয় না। অথচ দেশের রাজনীতি তথা শাসনব্যবস্থাগুলির ভূমিকা কোন অংশেই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। আর সেখানে- • রাজনৈতিক ব্যবস্থার সংজ্ঞাঃ সাম্প্রতিক কালের রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে বিশেষ করে ডেভিড ইষ্টন এর মতে- রাজনৈতিক ব্যবস্থা হল সমাজের সেই সকল ব্যবস্থা যার মাধ্যমে বাধ্যতামূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়ে থাকে। তিনি আরো বলেন যে, সমাজের সকল রাজনৈতিক কার্যকলাপ, আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠানের গঠন, প্রকৃতি ও ক্রিয়া-কলাপকে নিয়ে রাজনৈতিক ব্যবস্থা সৃষ্টি হয়। তবে- রাজনৈতিক ব্যবস্থার সকল অংশই পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত ও নির্ভরশীল।আর সেখানে রাজনৈতিক ব্যবস্থার কোন একটি অংশের পরিবর্তন ঘটলে তার প্রতিক্রিয়া সামগ্রিকতাকে গোটা রাজনৈতিক ব্যবস্থার ওপর পড়ে। তাই অ্যালমন্ড বলেন- “রাজনৈতিক ব্যবস্থা হল প্রতিটি স্বাধীন সমাজের এমন এক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ারত ব্যবস্থা যা কম বেশি মাত্রায় আইন সংগত উপায়ে কার্যাবলী সম্পাদন করে।”
•রাজনৈতিক ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য•
•প্রথমতঃ রাজনৈতিক ব্যবস্থার ধারণাটি সরকার বা শাসনব্যবস্থা বলতে যা বোঝায় তার চেয়ে অনেক ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করা হয়। রাজনৈতিক ব্যবস্থা বলতে শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বা তাদের আচরণের কাঠামাকেই বোঝায় না, ক্ষমতা প্রয়োগ ও তার প্রয়োগের সঙ্গে সমস্ত ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া নিয়ে গড়ে ওঠে রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে বোঝায়।
• দ্বিতীয়তঃ অন্যান্য ব্যবস্থার মতো রাজনৈতিক ব্যবস্থারও নির্দিষ্ট সীমানা আছে। তবে বিভিন্ন সময়ে এই সীমানার পরিবর্তন ঘটতে পারে। সাধারণ অবস্থায় চেয়ে যুদ্ধের সময় রাজনৈতিক ব্যবস্থার সীমানা বৃদ্ধি পায়, কারণ তখন অন্যান্য ব্যবস্থার উপাদানগুলিকেও রাজনৈতিক ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্তি করা হয়।
• তৃতীয়তঃ রাজনৈতিক ব্যবস্থার উপাদানগুলি একে অপরের সঙ্গে জড়িত এবং নির্ভরশীল। কোন একটি উপাদানে পরিবর্তন ঘটলে অন্যান্য উপাদানের ওপর তার প্রভাব পড়ে। উদাহরণস্বরূপ জনসংযোগের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত উন্নতি ঘটলে তার প্রভাব পড়ে নির্বাচন প্রক্রিয়ার উপর।
• চতুর্থতঃ মুক্তব্যবস্থা হল রাজনৈতিক ব্যবস্থার আরোও একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। অর্থাৎ রাজনৈতিক ব্যবস্থা শুধু তার আভ্যন্তরীণ পরিবেশ থেকে উঠে আসা দাবি নয়, বাহ্যিক পরিবেশ থেকে উঠে আসা দাবিকেও মেটানোর চেষ্টা করে।
• পঞ্চমতঃ আইন রচনা, আইনের প্রয়োগ ও আইন অনুসারে বিচার- এই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদনের সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেক রাজনৈতিক ব্যাবস্থার আরোও কতকগুলি কাজ সম্পাদন করতে দেখা যায়। যেমন- রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ স্বার্থের গ্রহন্তিকরা, স্বার্থের সমষ্টিকরণ ইত্যাদি কাজ করে থাকে।
• পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, রাজনৈতিক ব্যবস্থা একটা সমাজকে শক্তিশালী ভীতের ওপর প্রতিষ্ঠা করে। তবে একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থার ভীত যত শক্তিশালী হবে সেই রাজনৈতিক ব্যবস্থাও তত বেশি শক্তিশালী হবে। আসলে রাজনৈতিক ব্যবস্থা একটি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে না একাধিক ব্যবস্থার সমাহারে গড়ে ওঠে রাজনৈতিক ব্যবস্থা।
(ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের SHESHER KOBITA SUNDORBON YOUTUBE CHANNEL)
Comments
Post a Comment