Skip to main content

আকবরের(3rd Sem )ধর্মীয় নীতি বিশ্লেষণ করো।

আকবরের ধর্মনীতি বিশ্লেষণ করো( পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার, ইতিহাস মাইনার)

          •আলোচনা শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, মধ্যযুগীয় ভারতের ইতিহাসে রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক অঙ্গনে তথা সাম্রাজ্যের সকল রকম কার্যাবলীতে ধর্মনিরপেক্ষতার বিরল দৃষ্টান্তে স্থাপন করে আকবর ভারত তথা বিশ্বের ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। তবে প্রসঙ্গত ঐতিহাসিকরা মনে করেন-

    "আকবরের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র গঠনে।                           তার পূর্বপুরুষ ও বন্ধু-বান্ধব এবং তার গৃহ                     শিক্ষকের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে।"

             তবে উক্ত বিষয়ে যথেষ্ট বিতর্ক ও মতভেদ আছে।আর বিতর্ক যাই থাকুক না কেন, আকবরের পিতা-মাতার ধর্মীয় উদারতা, গৃহ শিক্ষকের শিক্ষানীতি, আবুল ফজলের সাহচর্য, আকবরকে ধর্মীয় ব্যাপারে উদারনীতি গ্ৰহণে সহায়তা করেছিল। তবে ঐতিহাসিক স্মিথ আকবরের ধর্মনীতি সমালোচনা করে বলেন-

   "Akbar's Secularism was nothing but                the result of political compulsion."

          •আকবরের ধর্মীয় নীতির বৈশিষ্ট্য•

• প্রথমতঃ আকবর সিংহাসন আরোহণ থেকে শুরু করে ১৫৭৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কঠোরভাবে সুন্নি রীতিনীতি মেনে নিয়েছিলেন। আর এই সময় আকবর আমির ওমরাহদের এবং শরিয়তি বিশারদদের মতামতকে ভীষণ প্রাধান্য দিতেন।                                                                        • দ্বিতীয়তঃ ১৫৭৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালে আকবর ধর্মীয় বিষয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালান। বিভিন্ন ধর্ম বিশারদদের দরবারের ডেকে তাদের নিকট থেকে ধর্মীয় বিশ্লেষণ শোনেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি ১৫৭৫ খ্রিস্টাব্দে ফতেপুর সিক্রিতে ইবাৎথানা প্রতিষ্ঠা করেন। বিভিন্ন ধর্মীয় বিশারদগণ এই ইবাদৎখানায় নিয়মিত ধর্মীয় বিশ্লেষণ প্রদান করতেন। বিভিন্ন ধর্মীয় বিশ্লেষণ থেকে আকবরের উপলব্ধি হয় যে, সকল ধর্মের মূল বক্তব্য এক এবং অভিন্ন। আর সঙ্গত কারণে তিনি সাম্রাজ্য থেকে ধর্মীয় বিচ্ছেদ মুছে ফেলতে এবং মুসলিম উলেমাদের ক্ষমতা খর্ব করতে ১৫৭৯ খ্রিস্টাব্দে মজহরনামা ঘোষণা করেন। আর-

     মজহরনামা ঘোষণা দ্বারা ফতেপুর সিক্রির জামে মসজিদে ইমাম কর্তৃক খোদবা পাঠ নিষিদ্ধ করেন এবং ইমামের পরিবর্তে খোদবা পাঠের অধিকার নিজেও হস্তে গ্রহণ করেন। এইভাবে আকবর মজহরনামার ঘোষণার দ্বারা ভারতবর্ষে ইসলামের শীর্ষস্থানে অধিষ্ঠিত হন।

• তৃতীয়তঃ আকবর ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দে, দীন-ই-ইলাহি নামে একটি নতুন ধর্মমতের প্রবর্তন করেন। তবে কেউ কেউ মনে করেন এটি একটি নতুন ধর্মমত। আবার বেশিরভাগ গবেষকই মন্তব্য করেছেন যে-                                                 "দীন-ই-ইলাহি কোন নতুন ধর্মমত নয়                               বরং সকল ধর্মের মূল কথা।"

      আসলে আকবর মূলত দেশে সর্বজনীন ধর্মীয় সহিষ্ণুতা স্থাপনের মধ্যে দিয়ে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা স্থাপন করতে চেয়েছিলেন। তবে সেখানে আচার অনুষ্ঠানের কথা ঐ ধর্মমতে বলা হয়নি। আবুল ফজলের মতে-                                                                                   দীন-ই-ইলাহি যারা মেনে নিয়েছিল তারা                          সম্রাটের জন্য সম্পত্তি, সমাজ, জীবন ও ধর্ম                   ত্যাগ করতে স্বীকৃত হয়।"

•• দীন-ই-ইলাহিঃ সকল ধর্মের সমন্বয়ে একটি আচরণবিধি ছিল দীন-ই-ইলাহি। প্রকৃতপক্ষে এটি কোন নতুন ধর্মমত ছিল না। সকল ধর্মের সমন্বয় এবং সম্রাটের প্রতি আনুগত্য ছিল দীন-ই-ইলাহির মূল বক্তব্য। তবে এই ধর্মমত কোন দার্শনিক তত্বের দ্বারা ভারাক্রান্ত হয়নি। রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতা ও রাজনৈতিক শান্তি স্থাপনের জন্য এই ধর্মমত ছিল উদার আচরণবিধি। তবে-

       এই ধর্মমত নতুন হলে এর জন্য অবশ্যই একখানি ধর্মগ্রন্থ থাকতো এবং সেই ধর্মমত প্রজাদের মধ্যে প্রচারের চেষ্টা বা বাধ্যবাধকতা তৈরি করা হতো। কিন্তু তা কোনদিন করা হয়নি। আকবরের সভাসদসহ মোট ১৭ জন স্বেচ্ছায় এই ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। 

          সুতরাং এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, কোন ধর্ম প্রচার নয়, একগুচ্ছ আচরণবিধির দ্বারা আকবর চেয়েছিলেন হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে। তবে -

        দীন-ই-ইলাহি ব্যাপক বিস্তারলাপের জন্য প্রচার হয়নি। এই ধর্মমত গ্রহণের জন্য কারোর ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়নি। সঙ্গত কারণে দীন-ই-ইলাহি ধর্মমত হিসেবে জনগণের মধ্যে জনপ্রিয়তাও অর্জন করেনি। তবে বলা যায় যে,আকবর যে উদ্দেশ্যে দীন-ই-ইলাহি প্রবর্তন করেছিলেন তা অনেকখানি সাফল্যমন্ডিত হয়েছিল। মধ্যযুগীয় ভাবধারায় আকবর হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে সমন্বয় অর্জনের যে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়েছিলেন তা অনেকটাই সফলতা অর্জন করেছিল। আর এখানেই রয়েছে দীন-ই-ইলাহি র চরম সার্থকতা।

ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের SHESHER KOBITA SUNDORBON YOUTUBE CHANNEL ।

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...