ব্রিটিশ ও(3rd.Sem) মার্কিন ক্যাবিনেট ব্যবস্থার মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা করো।
ভূমিকাঃ আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, ব্রিটিশ সংসদীয় বা ক্যাবিনেট পরিচালিত শাসন ব্যবস্থার দেশ। তবে প্রথাগত ভিত্তিতে ব্রিটেনে ক্যাবিনেট ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। ব্রিটেনে ক্যাবিনেট ব্যবস্থার উদ্ভব হয় অষ্টাদশ শতাব্দীতে।
অপরদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হল রাষ্ট্রপতি পরিচালিত শাসন ব্যবস্থার দেশ। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে রাষ্ট্রপতির ক্যাবিনেট সম্পর্কে কোন উল্লেখ নেই। ব্রিটেনের মতো মার্কিন ক্যাবিনেটও প্রথাগত ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। আর সেই নিরিখে ব্রিটিশ ও মার্কিন ক্যাবিনেট ব্যবস্থার মধ্যে নিম্নে তুলনামূলক আলোচনা করা হলো। আর সেই আলোচনায় আমরা দেখি-
ব্রিটিশ ও মার্কিন ক্যাবিনেটের সদস্যরা রাষ্ট্রপ্রধান কর্তৃক নিযুক্ত হন। উভয় দেশে ক্যাবিনেটের সভায় নেতৃত্ব দেন শাসক প্রধান। পাশাপাশি উভয় দেশে শাসন বিভাগের মুখ্য দপ্তর গুলির দায়িত্ব ক্যাবিনেট সদস্যদের ওপর থাকে। আর সেই সাথে উভয় দেশে ক্যাবিনেটের ব্যবস্থার সাংবিধানিক স্বীকৃতি নেই। তবে -
•১) গঠনগত পার্থক্যঃ ব্রিটেনে কমন্সসভায় যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠ হয় সেই দলের মধ্যে থেকেই ক্যাবিনেট সদস্যরা নিযুক্ত হন। অর্থাৎ ব্রিটেনে ক্যাবিনেট সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর দলের সদস্য হন। কিন্তু -
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্যাবিনেট সদস্যরা সবসময় রাষ্ট্রপতির দলের সদস্য হবেন এমন কোন কথা নেই। এমন নজিরও আছে যে, অতীতে বহু মার্কিন রাষ্ট্রপতি অন্য দলের সদস্যদের ক্যাবিনেটে স্থান দিয়েছেন।
•২) আইনসভার সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে পার্থক্যঃ ব্রিটেনে ক্যাবিনেট সদস্যদের অবশ্যই আইনসভার সদস্য হতে হবে। ক্যাবিনেটের সদস্য হওয়ার সময় কোন সদস্য যদি আইনসভার সদস্য না হয়ে থাকেন তাহলে সেই ব্যক্তিকে ৬ মাসের মধ্যে আইনসভার যেকোন কক্ষের সদস্য হতে হবে। কিন্তু -
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরন নীতি প্রচলিত থাকায় ক্যাবিনেট সদস্যরা আইনসভার সদস্য নন।
•৩) শাসক প্রধানের সাথে সম্পর্কগত পার্থক্যঃ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রী সভায় সমপর্যায়ভুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অগ্রগণ্য। মন্ত্রিসভার সদস্যরা প্রধানমন্ত্রী সহকর্মী হিসেবে কাজ করেন। তবে তারা অধঃস্তন কর্মচারী হিসেবে নয়। তিনি কখনোই মন্ত্রিসভার পরামর্শকে উপেক্ষা করতে পারেন না। কিন্তু -
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্যাবিনেট সদস্যরা সহকর্মী হিসেবে কর্মরত নন। তিনি প্রয়োজন মনে করলে ক্যাবিনেটের পরামর্শ গ্রহণ করেন। তবে তিনি ক্যাবিনেটের পরামর্শ মেনে চলতে বাধ্য নন।
৪) দায়বদ্ধগত পার্থক্যঃ ব্রিটেনে ক্যাবিনেট সদস্যরা আইনসভার সদস্য। তাই ক্যাবিনেট সদস্যরা তাদের কাজের জন্য যৌথ ও ব্যক্তিগতভাবে আইন সভার কাছে দায়বদ্ধ থাকেন। আইনসভার আস্থার উপর ক্যাবিনেটে স্থায়িত্ব নির্ভর করে। কিন্তু-
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্যাবিনেট সদস্যরা আইনসভার সদস্য নন। তাই ক্যাবিনেট সদস্যরা তাদের কাজের জন্য যৌথ ও ব্যক্তিগতভাবে আইনসভার কাছে দায়বদ্ধ থাকে না। তারা তাঁদের কাজের জন্য রাষ্ট্রপতি ও জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকেন।
•৫) ঐক্য ও সংহতিগত পার্থক্যঃ ব্রিটেনে ক্যাবিনেট সদস্যদের মধ্যে দৃঢ় ঐক্য ও সংহতি লক্ষ্য করা যায়। এই ঐক্য ও সংহতির মূলে আছে দল ব্যবস্থা। ক্যাবিনেটের সব সদস্য একই দলের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি। কিন্তু-
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্যাবিনেট সদস্যদের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি লক্ষ্য করা যায় না। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্যাবিনেটের সব সদস্য একই দলের হতে হবে এমন কোন বাঁধাধরা নিয়ম নেই।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাবিনেট ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের। ক্ষমতা,মর্যাদা এবং শাসন ব্যবস্থায় ভূমিকার দিক থেকে ব্রিটিশ ক্যাবিনেটের সঙ্গে মার্কেন ক্যাবিনেটের কোন মিল নেই। ব্রিটেনে ক্যাবিনেট যেখানে দেশ শাসন করে সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্যাবিনেট দেশ শাসন করে না, রাষ্ট্রপতিকে শাসনকার্য পরামর্শ দান করে মাত্র।
ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের SHESHER KOBITA SUNDORBON
Comments
Post a Comment