মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র,ফ্রান্স ও ব্রিটেনের ক্যাবিনেটের তুলনামূলক আলোচনা করো।
আলোচনা শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও ব্রিটেনে উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রচলিত। কিন্তু তিনটি দেশের শাসনব্যবস্থার প্রকৃতি এক রকম নয়। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতিশাসিত শাসনব্যবস্থা, ব্রিটেনে সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা এবং ফ্রান্সে সংসদীয় ও রাষ্ট্রপতিশাসিত ব্যবস্থার সমন্বয় দেখা যায়। এক্ষেত্রে তিনটি দেশের মধ্যে ক্যাবিনেটের মধ্যে বেশ কিছু বৈসাদৃশ্য লক্ষণীয়।আর সেই বৈসাদৃশ্য গুলি হল–
প্রথমতঃ. •ক্যাবিনেট সদস্য নিয়োগ সংক্রান্ত •
ব্রিটেনে কমন্সসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের মধ্য থেকে ক্যাবিনেট সদস্যরা নিযুক্ত হন। অর্থাৎ ক্যাবিনেট সদস্যরা সবাই কমন্সসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের সদস্য হন। অপরপক্ষে- •আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি সাধারণত তাঁর দলীয় সদস্যদের মধ্যে থেকেই ক্যাবিনেট নিয়োগ করেন। কিন্তু ক্যাবিনেটের সব সদস্যরা যে রাষ্ট্রপতির দলভুক্ত হবেন তার কোন নিয়ম নেই। ফলে তিনি অন্য দলের সদস্যদের ক্যাবিনেটে স্থান দিতে পারেন। কিন্তু - •ফরাসি ক্যাবিনেটের সদস্যদের মধ্যে অনেকে পার্লামেন্টের সদস্য থাকেন। তাঁরা ক্যাবিনেট সদস্য হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পর তাঁদের পার্লামেন্টের সদস্যপদ পরিত্যাগ করতে হয়।
দ্বিতীয়তঃ •প্রধানমনত্রী নিয়োগ সংক্রান্ত•
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ কমন্সসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বা নেত্রীকে ব্রিটেনে রাজা বা রানী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এবং প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে অন্য মন্ত্রীদের নিযুক্ত করেন। অপরপক্ষে- •মার্কিন রাষ্ট্রপতি তার ক্যাবিনেট সদস্যদের নিয়োগের ক্ষেত্রে নিজ ইচ্ছা অনুসারে চলেন এবং নিজের পছন্দমত ব্যক্তিদের ক্যাবিনেট সদস্য হিসেবে নিযুক্ত করেন। কিন্তু- •ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীকে নিজ ইচ্ছানুসারে নিয়োগ করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে ক্যাবিনেটের অন্যান্য সদস্যদের নিযুক্ত করেন।
তৃতীয়তঃ •কার্যকালের মেয়াদ সংক্রান্ত•
ব্রিটিশ ক্যাবিনেট এর কার্যকাল পাঁচ বছর। অপরপক্ষে- •মার্কিন ক্যাবিনেটের কার্যকাল চার বছর। কিন্তু- •ফ্রান্সের সংবিধানে প্রধানমন্ত্রী বা ক্যাবিনেটের কার্যকলাপের মেয়াদ সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি।
চতুর্থতঃ। •অপসারণ সংক্রান্ত•
ব্রিটেনে রাজা বা রানী প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে যে কোন ক্যাবিনেট সদস্যকে বা সমগ্র ক্যাবিনেটকে কার্যকালের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে পদচ্যুত করতে পারেন। অপরপক্ষে- •মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাবিনেটকে রাষ্ট্রপতির ক্যাবিনেট বলা হয়। ক্যাবিনেট সদস্যরা রাষ্ট্রপতির কর্মচারী মাত্র তাই রাষ্ট্রপতি তার খুশি মতো যে কোনো সময় যে কোন ক্যাবিনে সদস্যকে করতে পারেন। কিন্তু-। •ফ্রান্সে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি ক্যাবিনেট সদস্যদের পদচ্যুত করতে পারেন।
পঞ্চমতঃ •সংবিধান সংক্রান্ত• ব্রিটেনের সংবিধান আলিখিত। তাই অলিখিত প্রথা ও রীতিনীতির উপর ভিত্তি করে ব্রিটিশ ক্যাবিনেট ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। যেখানে ক্যাবিনেট ব্যবস্থার কোন সাংবিধানিক স্বীকৃতি নেই। অপরপক্ষে-
•মার্কিন ক্যাবিনেট ব্যবস্থাকেও সংবিধানের স্বীকার করা হয়নি। আর সেখানে প্রথার ভিত্তিতে মার্কিন ক্যাবিনেট ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। কিন্তু -
•ফ্রান্সের ক্যাবিনেট ব্যবস্থা সংবিধান দ্বারা স্বীকৃত। সংবিধানে ক্যাবিনেটের গঠন,কার্যাবলী ও পদচ্যুতি সংক্রান্ত ব্যবস্থা লিখিত আছে।
ষষ্ঠতঃ •দায়িত্বশীলতা সংক্রান্ত• ব্রিটেনের ক্যাবিনেট তার সম্পাদিত কাজের জন্য কমন্সসভার কাছে দায়িত্বশীল থাকে এবং তাদের কাজের জন্য কমন্সসভার জবাবদিহি করতে হয়। অপরপক্ষে-
•মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি প্রচলিত থাকায় ক্যাবিনেট সদস্যরা কংগ্রেসের সদস্য নন এবং কংগ্রেসের কাছে জবাবদিহি করার দায়িত্ব তাদের নেই। অর্থাৎ তারা কংগ্রেসের কাছে দায়িত্বশীল নন। কিন্তু -
• ফ্রান্সের ক্যাবিনেটকে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় সভার কাছে যৌথভাবে দায়িত্বশীল থাকতে হয়। জাতীয় সভা প্রধানমন্ত্রী ও ক্যাবিনেটের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ করলে তাদের পদত্যাগ করতে হয়।
সপ্তমতঃ •সভাপতিত্ব সংক্রান্ত• ব্রিটেনের ক্যাবিনেট সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী। অপরপক্ষে-
•মার্কিন ক্যাবিনেট সভায় সভাপতিত্ব করেন রাষ্ট্রপতি। কিন্তু- •ফরাসি ক্যাবিনেট সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ক্যাবিনেট সংস্থার মন্ত্রিসভায় সভাপতিত্ব করেন রাষ্ট্রপতি।
অষ্টমতঃ •শাসকের রুপ সংক্রান্ত•। ব্রিটেনের রাজা বা রানী নিয়মতান্ত্রিক শাসক। তাই ক্যাবিনেটের পরামর্শেই তিনি যাবতীয় কাজ করে থাকেন। অপরপক্ষে- •মার্কিন রাষ্ট্রপতি প্রকৃত শাসক হিসেবে কাজ করেন। তিনি সাধারণত ক্যাবিনেটের পরামর্শ গ্রহণ করেন। তবে ক্যাবিনেটের পরামর্শ মেনে চলতে তিনি বাধ্য নন। কিন্তু- •ফ্রান্সে তত্ত্বগতভাবে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর ক্যাবিনেটের হাতে জাতীয় নীতি নির্ধারণের দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে।
Comments
Post a Comment