আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরন নীতি আলোচনা করো(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, তৃতীয় সেমিস্টার, মাইনর)।
ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিঃ সরকারের তিনটি বিভাগ হলো আইন,শাসন ও বিচার বিভাগ। আর সেখানে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি বলতে সরকারি তিনটি বিভাগের স্বতন্ত্রভাবে অবস্থান প্রত্যেকের স্বাধীনতা এবং একে অন্যের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ না করাকে বোঝায়। অর্থাৎ এই ব্যবস্থায়-
একই ব্যক্তির একাধিক বিভাগে যুক্ত না থাকা এক বিভাগ অন্য বিভাগের কাজ না করা এবং এক বিভাগ অন্য বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ না করা হলো ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির তিনটি দিক। এখানে সরকারি ক্ষমতা একই বিভাগের হাতে কেন্দ্রীভূত থাকলে বা একই ব্যক্তি বিভিন্ন বিভাগে কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকলে অন্যায় ভাবে আইন প্রনয়ণ করে ,অন্যায় ভাবে তার প্রয়োগ এবং অন্যায় ভাবে কাউকে শাস্তি দানের ঘটনা ঘটতে পারে। আর সে কারণেই ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরন নীতি ভীষণ প্রয়োজন। তাই- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থা, সংসদীয় ব্যবস্থা এবং ফ্রান্সে উভয় ব্যবস্থার মিশ্রণ দেখা যায়। এই দেশগুলিতে ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতি বিভিন্নভাবে প্রযুক্ত হয়েছে। আর সেখানে -
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরন নীতি স্বীকৃত হয়েছে। সেখানে কংগ্রেসের কোন সদস্য শাসন বিভাগের সঙ্গে বা বিচার বিভাগের সঙ্গে বা শাসন বিভাগের কোন সদস্য আইন বা বিচার বিভাগের সঙ্গে এবং বিচার বিভাগের কোন সদস্য আইন বা শাসন বিভাগের সঙ্গে যুক্ত নয়। আইন সংক্রান্ত কাজের দায়িত্ব পালন করে কংগ্রেস, আইন বিভাগীয় ক্ষমতা অর্পিত হয়েছে রাষ্ট্রপতির ওপর এবং বিচার বিভাগীয় সংস্থা হল সুপ্রিমকোর্ট। আর এখানে একে অন্যের থেকে আলাদাভাবে কাজ সম্পাদন করে। সেখানে-
ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি মেনে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে শাসন, আইন ও বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা যথাক্রমে রাষ্ট্রপতি, কংগ্রেস ও সুপ্রিমকোর্টকে প্রদান করা হয়েছে। মার্কিন রাষ্ট্রপতি বা ক্যাবিনেট আইন প্রণয়নের কোনো উদ্যোগ নিতে পারে না। মার্কিন রাষ্ট্রপতি প্রতিনিধি সভাকে ভেঙে দিতে পারেন না। প্রতিনিধি সভাও অনাস্থা প্রস্তাবের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বা ক্যাবিনেটকে পদচ্যুত করতে পারে না। কিন্তু -
ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণের সঙ্গে আমেরিকায় ভারসাম্য ও নিয়ন্ত্রণের নীতি গৃহীত হওয়ায় এক বিভাগকে অন্য বিভাগের কাজে যুক্ত হতে দেখা যায়। মার্কিন রাষ্ট্রপতি বিচার বিভাগের প্রধানকে এবং বিচারপতিদের নিযুক্ত করেন। এজন্য তাঁকে আবার সিনেটের অনুমোদন নিতে হয়। রাষ্ট্রপতি দন্ডাদেশপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের দন্ডাদেশ হ্রাস বা মুকুব করতে পারেন। আর সেখানে কংগ্রেস দ্বারা গৃহীত সংবিধান সংশোধনহীন ছাড়া অন্যান্য বিলে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লাগে। তবে ভিটো ক্ষমতার মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি কংগ্রেস প্রণীত বিলকে সাময়িকভাবে স্থগিত করতে পারেন। আবার -
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটেরও শাসন ও বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা আছে। সিনেট বিদেশি রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তিগুলি এবং রাষ্টপতির বিভিন্ন নিয়োগগুলি অনুমোদন করে। এই প্রসঙ্গে সিনেট রাষ্ট্রপতির দ্বারা বিচারপতিদের নিয়োগ ও অনুমোদন করে থাকে। আবার-
বিচার বিভাগ শাসন বিভাগীয় কাজ ও আইনের সাংবিধানিকতা বিচার করে এবং অসাংবিধানিক হলে সেগুলিকে বাতিল করে দিতে পারে। অর্থাৎ আমেরিকার এক বিভাগ অন্য বিভাগের কাজ সম্পাদন করে। তবে-
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরন নীতির মাধ্যমে এক বিভাগকে অন্য বিভাগের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি ও ক্যাবিনেট কংগ্রেসের কাছে দায়িত্বশীল নয়। কংগ্রেসও অনাস্থা প্রস্তাব দ্বারা তাঁদের অপসারণ করতে পারে না। বিচার বিভাগকে আইন ও শাসন বিভাগের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু -
নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্যের নীতির জন্য আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এক বিভাগ অন্য বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে। কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া রাষ্ট্রপতি কোন অর্থ ব্যয় করতে পারেন না। তবে কংগ্রেস প্রণীত কোন বিলে ভিটো বা অসম্মতি প্রদানের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির আছে। আর সেখানে সিনেটের সম্মতি ছাড়া রাষ্ট্রপতি কোন সন্ধি, চুক্তি ইত্যাদি কার্যকর করতে পারেন না। তবে -
কংগ্রেস গুরুতর অপরাধের অভিযোগে রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্টের ক্ষমতা ভোগ করে। সুপ্রিমকোর্ট সংবিধান বিরোধী বা ন্যায়নীতি বিরোধী যে কোন আইন বা শাসন বিভাগের কাজকে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিকে কাজে লাগিয়ে বাতিল করে দিতে পারে।
(ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের SHESHER KOBITA SUNDORBON YOUTUBE CHANNEL)।
Comments
Post a Comment