Skip to main content

ফ্রান্সের(3rd.Sem.) পঞ্চম প্রজাতন্ত্রের সংবিধানের প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো।

ফ্রান্সের পঞ্চম প্রজাতন্ত্রের সংবিধানের প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো। (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, মাইনর )


•ভূমিকাঃ ফ্রান্সের বর্তমান সংবিধানটি পঞ্চম প্রজাতান্ত্রিক সংবিধান নামে পরিচিত। আর এই সংবিধানটি ১৯৫৮ সালে ২৮ শে সেপ্টেম্বর গণভোটের মাধ্যমে গৃহীত হয়। আর সেদিন সেনানায়ক জেনারেল দ্য গল এই সংবিধান রচনায় মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। তাই ফ্রান্সের এই সংবিধানটি জেনারেল দ্য গলের সংবিধান নামে পরিচিত। তবে পরবর্তীকালে এই সংবিধান কিছু অংশ সংশোধন করা হয়েছে। আর সেই সংশোধিত সংবিধানের মূল বৈশিষ্ট্য গুলি হলো-

•২) লিখিত সংবিধানঃ ফ্রান্সের পঞ্চম প্রজাতান্ত্রিক সংবিধানটি হলো লিখিত সংবিধান। আর সংবিধান চালু হবার সময় সেখানে ৮৯ টি ধারা এবং ১৪ টি অধ্যায় লিখিত ছিল।তবে বর্তমানে এই সংবিধানের ৯২ টি ধারা এবং ১৩ টি অধ্যায় আছে। এই ৯২ টি ধারা এবং ১৩ টি অধ্যায় ফ্রান্সের সংবিধানের পরিপূর্ণভাবে লিখিতভাবে আছে। 

•২) প্রস্তাবনাঃ ফ্রান্সের পঞ্চম প্রজাতান্ত্রিক সংবিধানের শুরুতে একটি প্রস্তাবনা যুক্ত করা হয়েছে। আর সেই প্রস্তাবনায় নাগরিকদের অধিকার ও জাতীয় সার্বভৌমিকতার ওপর আস্থাজ্ঞাপন করা হয়েছে। এছাড়াও সাম্য, স্বাধীনতা ও সৌভ্রাতৃত্বের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী সমাজ গঠনের কথা সেখানে লিখিতভাবে আছে।

•৩) দুস্পপরিবর্তনীয়ঃ ফ্রান্সের পঞ্চম প্রজাতান্ত্রিক সংবিধান মূলত দুস্পপরিবর্তনীয়। সেকারণে সংবিধান সংশোধনের জন্য ফ্রান্সে বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়। আর সেখানে সংবিধানের সংশোধন প্রস্তাব পার্লামেন্টে পাস হওয়ার পর গণভোটে সেটি পেশ করা হয়। গণভোটে পাস হলে তবেই সংবিধান সংশোধন প্রস্তাবটি কার্যকরী হয়।

•৪) এককেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থাঃ ফ্রান্সের পঞ্চম প্রজাতান্ত্রিক সংবিধানে এককেন্দ্রিক ব্যবস্থার প্রতি আস্থা জ্ঞাপন করা হয়েছে। সেখানে সংবিধানে বলা হয়েছে যে, একটি মাত্র কেন্দ্রীয় সরকার সমগ্র দেশের শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করবে। আর প্রশাসনিক সুবিধার জন্য স্বায়ত্তশাসন মূলক স্থানীয় সংস্থা থাকলেও এদের কোন ক্ষমতা থাকে না। এরা কেন্দ্রীয় সরকারের এজেন্ট হিসেবে কাজ করে।

•৫) দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভাঃ ফ্রান্সের পঞ্চম প্রজাতান্ত্রিক সংবিধানে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার প্রতি আস্থা জ্ঞাপন করা হয়েছে। ফ্রান্সের দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার উচ্চকক্ষ হল সিনেট এবং নিম্নকক্ষ হল জাতীয়সভা। সেখানে সিনেটের সদস্যরা জনগণের দ্বারা পরোক্ষভাবে ৯ বছরের জন্য নির্বাচিত হন। আর জাতীয় সভার সদস্যরা জনগণের দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হন। 

•৬) নাগরিক অধিকারঃ ফ্রান্সের পঞ্চম প্রজাতান্ত্রিক সংবিধানে নাগরিক অধিকার স্বীকৃত হয়েছে। সংবিধানের ২-৪ নম্বর ধারায় উল্লেখিত নাগরিক অধিকার গুলি হল- সাম্যের অধিকার, মতামত প্রকাশের অধিকার, ভোটাধিকার, শিক্ষার অধিকার, কর্মের অধিকার প্রভৃতি। সেখানকার নাগরিকদের অধিকার রক্ষার দায়িত্ব মূলত রাষ্ট্রপতির হাতেই ন্যস্ত।

•৭) বিচার বিভাগের স্বাধীনতাঃ ফ্রান্সের পঞ্চম প্রজাতান্ত্রিক সংবিধানে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার রক্ষার জন্য সংবিধানের বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আর সেখানে রাষ্ট্রপতি বিচার বিভাগীয় উচ্চ পরিষদের পরামর্শ মত বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা করে থাকেন।

   পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, ফ্রান্সের পঞ্চম প্রজাতান্ত্রিক সংবিধানের বৈশিষ্ট্য গুলি পর্যালোচনা থেকে একথা স্পষ্ট যে, এ দেশের সংবিধানে বেশ কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি রয়েছে। তাই সংবিধানটি বিভিন্ন দিক থেকে তীব্র সমালোচিত হয়েছে। তবে এটাও ঠিক যে, সংবিধান জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়নি। সেখানে এক গণভোটের মাধ্যমে সংবিধান গৃহীত হয়েছে। তবে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধান এমন সব পদক্ষেপ নিয়েছেন-যার ফলে অনেক ক্ষেত্রে সংবিধানের প্রকৃত অর্থের পরিবর্তন হয়েছে।

(ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের SHESHER KOBITA SUNDORBON YOUTUBE CHANNEL)

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...