Skip to main content

শ্রী চৈতন্যচরিতামৃত গ্ৰন্থের ঐতিহাসিক গুরুত্ব সংক্ষেপে আলোচনা করো।

শ্রী চৈতন্যচরিতামৃত গ্রন্থের ঐতিহাসিক গুরুত্ব সংক্ষেপে আলোচনা করো(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, প্রথম সেমিস্টার, বাংলা মেজর)
আলোচনা শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, বৃন্দাবন দাসের মতোই কৃষ্ণদাস কবিরাজও মহাপ্রভুর জীবন কাহিনী অবলম্বনে বৈষ্ণব-ধর্ম প্রচারের ব্রত গ্রহণ করেই আলোচ্য গ্রন্থ রচনায় প্রবৃত্ত হয়েছিলেন। বৃন্দাবন দাস সম্ভবত কবিপ্রাণ ছিলেন বলেই তাঁর রচনায় কখনও কখনও গীতি প্রাণতা বা আবেগ প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু কবিরাজ গোস্বামী ছিলেন একান্তই রসকষহীন নৈষ্ঠিক বৈষ্ণব পন্ডিত। তাই তাঁর গ্রন্থ আকারে মহাকাব্যতুল্য হলেও এতে কবির কবিধর্মের কোন পরিচয় পাওয়া যায় না। প্রসঙ্গগত অধ্যাপক পরেশচন্দ্র ভট্টাচার্য বলেন-
     “বাংলা ভাষায় বস্তুনিষ্ঠ মননশীল সাহিত্যের            
     অপেক্ষাকৃত স্বল্পতা এই যুগেও বর্তমান। সমগ্র 
     প্রাচীন ও মধ্যযুগে এই ধরনের রচনা প্রায় দুর্লভ 
      বলিলেও অত্যুক্তি হয় না।”                                 আর এদিক থেকে বিচার করলে-শুধু প্রাচীন ও মধ্যযুগের নয় সমগ্র বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসেই কৃষ্ণ দাস কবিরাজ গোস্বামীর চৈতন্যচরিতামৃতের স্থান অতি উচ্চে। তবে বৈষ্ণব ধর্ম ও দর্শন সম্বন্ধীয় যাবতীয় আলোচনাই অপেক্ষাকৃত সরল ভাষায় এই গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। আর সেখানে-
       সমসাময়িক যুগে সাহিত্যে গদ্য ভাষার প্রয়োগ ছিলনা বলেই হয়ত কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী পদ্যের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। আর সেখানে দৃঢ়বদ্ধ ভাব, ভাবোচ্ছ্বাসের স্বল্পতা এবং সরল প্রকাশভঙ্গী তাঁর রচনাকে গদ্যধর্মী করে তুলেছে। তবে গ্রন্থটিতে পল্লবিত কবিতার অবকাশ খুবই কম। শুধু তাই নয়, গ্রন্থটিতে কবির কবিত্বের বিকাশও খুবই কম। এখানে কবি যুক্তি ও নিষ্ঠার সাথে রচনায় আপনার প্রয়োজন সাধন করেছেন।  
কাব্যবিচারঃ বৃন্দাবনের ষড়্ গোস্বামীর সান্নিধ্যপ্রাপ্ত কবিরাজ কৃষ্ণদাস গোস্বামী বৈষ্ণবধর্মে যে অনুরক্ত ছিলেন তা বলাই বাহুল্য। গৌড়ীয় বোস্টন ধর্মের বিভিন্ন তাত্ত্বিক দিক্ দিয়ে এই গোস্বামী কন যে সকল মহামূলক গ্রন্থ রচনা করেছেন তাদের সব কটি সংস্কৃত ভাষায় রচিত। আর সংস্কৃত ভাষায় রচিত হওয়ায় সাধারণ জনসাধারণের নিকট তা কোন মতেই সহজবোধ্য ছিল না। তবে -
       কবিরাজ গোস্বামী কীর্তন ও জীবনী রচনা প্রসঙ্গে বৈষ্ণব ধর্ম দর্শন ও তত্ত্বকে জনসাধারণের গ্রহণোপযোগী করে প্রকাশ করলেন বাংলা ভাষায়। চৈতন্যচরিতামৃত গ্রন্থ অনেকের নিকটকে দুর্বোধ্য বলে বিবেচিত হয়, তার কারণ ভাষার কঠোরতা নয়-বিষয়ের কাঠিন্যই গ্রন্থটিকে জনসাধারণের নিকট কিছুটা দুর্বোধ্য করে তুলেছে। তিনি গ্রন্থটিকে প্রামানিক করে তোলবার উদ্দেশ্যে যখনই কোন বিষয়ের উল্লেখ করেছেন, তখনই তার সমর্থনের শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যাও উদ্ধার করেছেন।যার ফলে-
     চৈতন্যচরিতামৃত গ্রন্থে সাত শতাধিক সংস্কৃত শ্লোকও স্থান লাভ করেছে। অবশ্য এর মধ্যে শত পরিমান শ্লোক কবিরাজ গোস্বামী রচিত। কবিরাজ গোস্বামী যে অসাধারণ পাণ্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন এখানেই তার প্রমাণ মেলে। প্রসঙ্গত তারাপদ ভট্টাচার্য বলেন-
     দার্শনিক চিন্তার জগতে চৈতন্যচরিতামৃতের
     দান অল্প নহে।”
কৃষ্ণের মাধুর্য, যতেক খেলা, সর্বোত্তম নরলীলা, নবরূপে তার স্বরূপ-প্রভৃতি বহু দার্শনিক তত্ত্ব চৈতন্যচরিতামৃত থেকে জনসমাজে প্রচারিত হয়েছে। সেখানে কেবলমাত্র তত্ত্বের প্রচার নয়, তত্ত্বকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য কৃষ্ণদাস অল্প চেষ্টা করেনি। তাঁর কৃতিত্ব চৈতন্যবাণী ব্যাখ্যায়। চৈতন্য ধর্মের ব্যাখ্যাতা হিসেবেই তিনি বাংলা সাহিত্যে আজও অমর হয়ে আছেন।

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...