গৌণ গোষ্ঠী কাকে বলে? গৌণগোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য গুলি লেখো। শিক্ষায় গণগোষ্ঠীর ভূমিকা আলোচনা করো(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার, শিক্ষা বিজ্ঞান, মাইনর)।
আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে,মানব সমাজে প্রাথমিক গোষ্ঠীর সাথে সাথে আরেক ধরনের সামাজিক গোষ্ঠীর অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়।যে গোষ্ঠীগুলি আকারে বৃহত্তর হয় এবং এগুলি বিশেষ উদ্দেশ্য যুক্ত গোষ্ঠী হিসেবে প্রতিপন্ন। তবে এই গোষ্ঠীতে সদস্যদের মধ্যে সান্নিধ্য থাকে না। তাই এই ধরনের গোষ্ঠীগুলোকে বলা হয় গৌণ গোষ্ঠী। যার প্রকৃষ্টতম উদাহরণ হল- রাজনৈতিক দল, বণিকসভা প্রভৃতি। বিখ্যাত শিক্ষাবিদ ডেনিসের মতে-
"Secondary groups can be broadly defined as opposite to primary groups."
আসলে কোন উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে, পরোক্ষ সম্পর্কের ভিত্তিতে যখন কিছু সংখ্যক মানুষের সমন্বয়ের ফলে সামাজিক বিভিন্ন কার্য সম্পাদিত হয় তখন তাকে গৌণ গোষ্ঠী বলে। আর এই গৌণ গোষ্ঠীগুলি প্রাথমিক গোষ্ঠীর বিপরীত গুণ সম্পন্ন।
•গৌণ গোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য•
•১) গৌণ গোষ্ঠীগুলির আয়তন তুলনামূলকভাবে বৃহৎ হয় বলে স্বভাবতই এই গোষ্ঠীর সদস্য সংখ্যা অধিক হয়।
•২) গৌণ গোষ্ঠীর সদস্যপদ সাধারণত গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক নয়। সাধারণত এই গোষ্ঠীর সদস্যপদ গ্রহণ করা ঐচ্ছিক বিষয়।
•৩) গৌণ গোষ্ঠীর সদস্যদের মর্যাদা তাদের জন্মগত বা ব্যক্তিগত গুণাবলীর উপর নির্ভরশীল নয়। এই গোষ্ঠীর মর্যাদা নির্ভর করে তাদের ভূমিকার উপর।
•৪) গৌণ গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে মুখোমুখি বা প্রত্যক্ষ পরিচয় সাধারণত দেখা যায় না। আসলে তাদের সম্পর্ক পরোক্ষ প্রকৃতির। আর সেই কারণে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকে না।
•৫) গৌণ গোষ্ঠী সুবিন্যস্ত এবং সুনির্দিষ্ট নিয়মাবলীর মাধ্যমে। এখানে এই গোষ্ঠীর সদস্যরা নিয়মাবলী মেনে চলে।
•৬) গৌণ গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে সকলে সমানভাবে সক্রিয় থাকে না। যার ফলে কোন কোন সদস্যকে সক্রিয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে দেখা যায় এবং কোন কোন সদস্য একেবারেই নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকে।
•৭) যেকোন গোষ্ঠী গঠিত হয় বিশেষ উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে। আর তাদের উদ্দেশ্য সফল হওয়ার পর সেই গোষ্ঠী শিথিল হয়ে যায়।
•৮) যেকোনো গোষ্ঠী গঠিত হয় বিশেষ উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে। এখানে মুখ্য বিষয় হলো উদ্দেশ্য।
•√ গৌণ গোষ্ঠীর গুরুত্ব বা তাৎপর্য•
শিক্ষাক্ষেত্রে ও মানব সমাজে গৌণ গোষ্ঠীর ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তাই আধুনিক সমাজে এই গোষ্ঠী এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর সেখানে জ্ঞান-বিজ্ঞান সাহিত্য প্রযুক্তিবিদ্যার অগ্রগতির পরিপ্রেক্ষিতে গৌণ গোষ্ঠীর ভূমিকা বেড়ে চলেছে। সেখানে আমরা দেখি-
•১) গৌণ গোষ্ঠীগুলি সমাজে মানুষের সামনে অসংখ্য জীবিকার সুযোগ সন্ধান এনে দেয়।
•২) ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশ ও সঙ্গতি-বিধানে এই গোষ্ঠী বিশেষ ভূমিকা করে থাকে।
৩) শ্রম বিভাগ ও অন্যান্য কার্যপদ্ধতির মাধ্যমে এখানে ব্যক্তির উন্নতি ও দক্ষতা বৃদ্ধির চেষ্টা করে।
•৪) গৌণ গোষ্ঠীর সাহায্যে মানুষের চিন্তা ভাবনার প্রসারতা বৃদ্ধি পায়। যেহেতু এটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অধীন, সেহেতু এখানে সকলেই সমানভাবে গ্ৰহনীয়।
•৫) গৌণ গোষ্ঠীর মাধ্যমে মানুষের মনের মধ্যেই বিভিন্ন ধরনের সামাজিক গুণাবলীর বিকাশ ঘটে।
•৬) সারাদেশ জুড়ে গৌণ গোষ্ঠী বিস্তারলাভ করে রয়েছে। আর সারাদেশের মানুষ এই গৌণগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণে তাদের মধ্যে জাতীয় সংহতির বিকশ ঘটে থাকে।
•√ পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, আধুনিক সমাজে গৌণ গোষ্ঠী বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু গৌণ গোষ্ঠী সমূহের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা থাকে।এই বিচ্ছিন্ন অংশের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি আনা একান্ত প্রয়োজন। কারণ, এই গোষ্ঠী ব্যক্তি ও সমাজের কল্যাণ ও অগ্রগতিতে অসাধ্য অবদান রাখে। তাই বর্তমান দিনে গৌণ গোষ্ঠীর কার্যাবলী প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে।
ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের SHESHER KOBITA SUNDORBON YOUTUBE CHANNEL ।
Comments
Post a Comment