সৈয়দ মুসতবা আলীর 'বইকেনা' প্রবন্ধের মূলভাব বস্তু লেখো (পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ, একাদশ শ্রেণি, দ্বিতীয় সেমিস্টার, বাংলা)।
আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখা একটি অন্যতম উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধগ্রন্থ হলো ‘পঞ্চতন্ত্র’। আর সেই পঞ্চতন্ত্র প্রবন্ধ গ্রন্থের অন্যতম প্রবন্ধ হল ‘বইকেনা’। যে প্রবন্ধে আমরা দেখতে পাই-এ সমাজে আমাদের প্রকৃত অর্থে বাঁচার মতো বাঁচতে হলে মনের জোর ও চোখের দৃষ্টি অবশ্যই বাড়াতে হবে। আর তার জন্য প্রয়োজন আমাদের জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানান শাখায় অবাধ বিচরণ। তবে সেক্ষেত্রে এই চোখের দৃষ্টি বাড়ানো বা অন্তর্দৃষ্টি তৈরির একমাত্র উপায় হলো হলো বই পড়া। তার জন্যই আমাদের কিনতে হবে বই।তবে-
বই একমাত্র জিনিস বা বিষয় যার পাঠাভ্যাস মনের ভেতরে আমাদের একটা নিজস্ব ভুবন তৈরি করে দেয়। যেখানে জাগতিক দুঃখ ছাড়া আর কিছুই বিস্তার করতে পারে না। তবে এই ভুবন সৃষ্টি হতে পারে সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস ইত্যাদি জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা শাখার মধ্যে দিয়ে। আর তার জন্যই দরকার আমাদের বই পড়া। আর বই পড়াকে সার্থক করে তোলে বই কেনাকে কেন্দ্র করে।কিন্তু-
আমাদের দেশের বাঙালি বই পড়তে ভালবাসলেও বই কিনতে ভালোবাসে না। সেখানে বাঙালি নানান অজুহাত দেয় বা বাহানা করে। আর সেই অজুহাত হলো বইয়ের দাম বেশি, বাড়িতে প্রচুর বই আছে,বই পড়ার সময় কোথায় ইত্যাদি ইত্যাদি। আবার অন্যদিকে প্রকাশক যুক্তি দেখান যে, বই বিক্রি কম, তাই দাম বেশি করতে হয়েছে।আসলে এক্ষেত্রে প্রকাশকের বই ব্যবসা করে তাকে উপার্জন করতে হবে। এখানে তার আরও যুক্তি যে- বই কিনে কখনও কেউ আজ পর্যন্ত দেউলিয়া হয়ে যায়নি।আসলে-
বইয়ের প্রতি ভালোবাসা একটা নেশার মতো,যে নেশা করা প্রায় সকলের নিকট একটি অসম্ভব বিষয়।আর সেখানে আমারা দেখি,মার্ক টোয়েনের মত মানুষ তাঁর লাইব্রেরী সমৃদ্ধ করেছিলেন ধার করা বই ফেরত না দিয়ে। তবে এখানে একটি কথা বলা ভীষণ প্রয়োজন যে,ধনী এবং জ্ঞানীর মধ্যে জ্ঞানী শ্রেষ্ঠ। কারণ ধনীর সম্পদকে জ্ঞানী সুন্দরভাবে ব্যবহার করতে পারেন, কিন্তু জ্ঞানীর সম্পদ ধনী কোনভাবেই কোন কাজে লাগাতে পারে না। জ্ঞানার্জন ধনার্জনের থেকে মহত্তর কাজ।তবে-
আমাদের দেশে মানুষ বইয়ের জন্য আত্মত্যাগ বা অর্থত্যাগ করতে যথেষ্ট দ্বিধাবোধ করে থাকেন। তবে বাঙালির জ্ঞান অর্জনের আকাঙ্ক্ষা কিন্তু প্রবল। তবুও বই কেনার ব্যাপারে বাঙালি চিরকালই উদাসীন। তাই বলা যায় এই রকম চিত্র গোটা পৃথিবীতে আর কোথাও দেখা যায় না।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, সৈয়দ মুসতবা আলীর বইকেনা প্রবন্ধটি গদ্য শৈলীর এক অভিনব সৃষ্টি । তার কারন এই প্রবন্ধটি ঠিক বৈঠকী রীতির গদ্য রচনা,যে রচনায় লেখক একটি গুরুগম্ভীর বিষয়টি লঘু আবরণে ঢেকে রেখেছেন। তবে লেখকের বক্তব্য বিষয়কটি উপস্থাপনের জন্য তিনি একাধিক জ্ঞানগর্ভ ও কৌতুক বা গল্পের অবতারণা করেছেন। আর সেগুলি হল ঠিক বৈঠকী ঢঙে সৃষ্টি। যেখানে লেখক যুক্তির ব্যবহার, প্রবল বুদ্ধির প্রয়োগ,ভাষার সহজতা শব্দের উল্লেখ এবং কৌতুকের মধ্য দিয়ে প্রবন্ধটি পাঠকের সামনে উপস্থাপিত করেছেন। তাই বলা যায়-
বইকেনা প্রবন্ধটি সৈয়দ মুজতবা আলীর অন্যতম একটি গদ্য শৈলী বৈশিষ্ট্যময় প্রবন্ধ। আর সেই প্রবন্ধে আলোচিত হয়েছে- "মাছি ধরা সত্যিই ভীষণ কঠিন কাজ।"
কারণ আমরা মাছিমারা কেরানিকে নিয়ে হাসি, ঠাট্টা, রসিকতা করি। তবে মাছিকে যেদিক দিয়ে ধরা হোক না কেন সে ঠিক সময় বুঝে উড়ে যাবে। তাই কারণ অনুসন্ধান করতে হলে আমাদেরকে চারিদিকে সজাগ দৃষ্টিতে দেখতে হবে।আর তার জন্য প্রয়োজন বই পড়া এবং বই কেনা।
ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের SHESHER KOBITA SUNDORBON YOUTUBE CHANNEL ।
•শব্দার্থ•(বইকেনা)
আনাতোল ফ্রাঁসঃ- প্রখ্যাত জনপ্রিয় ফ্রান্সের কথাশিল্পী।বার্ট্রান্ড রাসেলঃ- বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ যুক্তিবিদ এবং দার্শনিক। মুহম্মদঃ-ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী আল্লাহর প্রেরিত শেষ নবী ও রসুল।
ফিরিস্তিঃ-তালিকা, বেহেস্তঃ-স্বর্গ, ওমর খৈয়ামঃ- পারস্যের একজন বিখ্যাত গণিতবিদ জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং কবি।মাছি মারা কেরানিঃ- অন্ধের মত নকল করা, বিঘ্নহন্তাঃ- বিপদ দূর করেন যিনি, অচ্ছেদ্যঃ-যাকে আলাদা করা যায় না, দেউলেঃ-দেউলিয়া। আঁন্দ্রে জিদঃ- ফরাসি সাহিত্যিক। বৈরাগ্যঃ বিষয়ে অনাসক্তি। গণপতিঃ গণেশ। বেইজ্জতঃ- অপমান। গুরুভারঃপ্রধান দায়িত্ব।
নাভিশ্বাসঃ-শেষ অবস্থা। হাটেনটটঃ-দক্ষিণ আফ্রিকার এক যাযাবর পশুপালক। বেশরমঃ নির্লজ্জ খামোখাঃ- অনাবশ্যক, গূঢ়ার্থঃ- গভীর অর্থ।
Comments
Post a Comment