খেলা ও কাজের মধ্যে মূলগত পার্থক্যগুলো লেখো(West Bengal State University, Education, Minor,First Sem)
ভূমিকাঃ আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে,প্রাচীন শিক্ষাবিদদের কাছে খেলা ও কাজ সম্পূর্ণ বিপরীত ধর্মী। তাঁদের মতে অপদার্থ ও অকেজো লোকেরাই খেলাধুলার চর্চা করে সময়ের অপব্যবহার করে থাকে। খেলাধূকে তারা জীবনের ক্ষেত্রে একটি অপ্রয়োজনীয় নষ্টামী বলে মনে করতেন। তাই ছাত্রজীবনে খেলাধুলার গুরুত্বকে তারা আদৌ স্বীকার করতেন না। কিন্তু- আধুনিক কালের মনোবিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করলেন যে বালক থেকে বৃদ্ধ সকলেই খেলাধুলার প্রতি নানাভাবে আকৃষ্ট হয়ে থাকেন। তার কারণ অনুসন্কধান করতে গিয়ে তাঁরা আবিষ্কার করলেন বিভিন্ন তথ্য। আর সেই তথ্যের ভিত্তিতে খেলা ও কাজের মধ্যে প্রধান পার্থক্য গুলি হল-
প্রথমতঃ কাজের মধ্যে প্রয়োজনের দাসত্ব আছে, আর আছে বাধ্যবাধকতার এক অবাঞ্চিত নিয়ন্ত্রণ। কিন্তু- খেলার মধ্যে তেমন কোন দাসত্ব বাধ্যবাধকতার নিয়ন্ত্রণ নেই, সেখানে আছে স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দের মুক্তি।
দ্বিতীয়তঃ সব সময় রয়েছে নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য, আর সেই উদ্দেশ্য নিতান্তই বাহ্যিক। কিন্তু - খেলার মধ্যে যদি কোন উদ্দেশ্য থাকে তবে তা হলো আন্তরিক আনন্দের পরিতৃপ্তি।এতে বাহ্যিক কোন তাড়না নেই। খেলার আনন্দেই আমরা খেলা করি এবং খেলা দেখি।
তৃতীয়তঃ কাজ সব সময় কোন না কোন শক্তি বা পুরস্কার কিংবা লাভের ও লোভের প্রত্যাশার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু - খেলার ক্ষেত্রে রয়েছে একটি সহজাত প্রবৃত্তির তাড়নামাত্র। পার্থক্য কোন লোক বা লোকসান এখানে কখনোই বড় কথা নয়।
চতুর্থতঃ কাজের ক্ষেত্রে অবসাদ ও নৈরাশ্য বা একঘেঁয়েমি দুইই খুব তাড়াতাড়ি আসে। কিন্তু - খেলার ক্ষেত্রে তার বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। খেলাধুলার মাধ্যমিক ক্লান্ত নৈরাশ্যকৃত মোট সহজেই সতেজ ও সক্রিয় হয়ে ওঠে।
পঞ্চমতঃ কাজের মধ্যে মনের মুক্তি ও স্ফূর্তি সবসময় স্বাভাবিক বা স্বতঃস্ফূর্ত হয় না। তাই কাজের সাথে আমাদের আনন্দের চোখ সব সময় রক্ষিত হয় না। কিন্তু- আমাদের এই অশান্ত বিক্ষিপ্ত মন খেলাধুলার মাধ্যমে আনন্দ ও প্রশান্তির স্পর্শ লাভ করে। আমাদের বাস্তব জীবনের বহুতর অতৃপ্ত কামনা বাসনা খেলাধুলার মাধ্যমে আংশিক পরিতৃপ্তি লাভ করে এবং ব্যক্তিজীবনে আচরণের ক্ষেত্রে বহু বৈষম্য দূর করে।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, আমরা প্রতিনিয়ত কাজ মধ্যে দিয়ে ক্লান্ত,অসন্তুষ্ট ও মনে মনে বিদ্রোহী হয়ে উঠি। তাই সেই ক্লান্ত, অবসন্নতা,অবসাদক্লিষ্ট মনকে শান্ত ও স্থির রাখতে অবশ্যই আমাদের জীবনে খেলাধুলার প্রয়োজন ভীষণ দেখা দিয়েছে। তাই আধুনিক মনোবিজ্ঞানী বলেন-খেলাধুলা বিশেষ বিশেষ মানসিক ব্যাধির প্রতিষেধক রূপে কাজ করে। এইজন্য মনোবিজ্ঞানীরা খেলাকে ইচ্ছানিরপেক্ষ একটি প্রবণতারূপে বর্ণনা করেছেন।
Comments
Post a Comment