Skip to main content

ফ্রয়েবেলের(1st.Sem) কিন্ডারগার্ডেন পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, প্রথম সেমিস্টার এডুকেশন, মাইনর)

ফ্রয়েবেলের কিন্ডারগার্ডেন পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, প্রথম সেমিস্টার এডুকেশন, মাইনর)

ভূমিকাঃ আলোচনা শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, ফ্রয়েবেল তাঁর শিক্ষা দর্শনের ব্যবহারিক প্রয়োগ করে, তাঁর প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয় কিন্ডারগার্ডেন এর মাধ্যমে। আর সেখানে কিন্ডারগার্টেন কথাটির অর্থ হল 'শিশুউদ্যান'। যেখানে শিশু স্বাধীনভাবে কাজ করবে এবং তার মধ্যে দিয়ে শিক্ষার লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাবে। এটাই ছিল তার শিক্ষানীতির প্রধান উদ্দেশ্য। তাই তিনি-শিশুকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দানের উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন। আর তার মতে-              

           "আত্মসক্রিয়তাই শিক্ষণের একমাত্র                                 পদ্ধতি হওয়া উচিত।"

           • আসলে কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতিতে শিশুরা যেন একটি বাগানের ছোট ছোট চারাগাছ। আর সেখানে শিক্ষক হলো ওই বাগানের মালী। মালিক কেমন বাগানের চারাগাছ গুলির যত্ন নেয়, শিক্ষকও তেমনি শিশুদের যত্ন নিয়ে তাদের জীবন বিকাশে সহায়তা করবেন। ফ্রয়েবেলের এই শিক্ষণ পদ্ধতি বর্তমানে 'কিন্ডারগার্টেন' পদ্ধতি নামে পরিচিত। আর সেই পদ্ধতির মৌলিক বৈশিষ্ট্য গুলি হলো-

•১) আত্মসক্রিয়তাঃ কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতিতে শিশুর আত্মসক্রিয়তা ও খেলার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আর এই জন্য কিন্ডারগার্টেন বিদ্যালয়ে শিশুদের অঙ্গভঙ্গি সহযোগে ছড়া,গান ইত্যাদি শিক্ষাদানের ব্যবস্থা থাকে।

২) ইন্দ্রিয় পরিচালনার প্রশিক্ষণঃ কিন্ডারগার্টেন শিক্ষণ পদ্ধতিতে শিশুদের ইন্দ্রিয়গুলির পরিচালনার প্রশিক্ষণের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। আর সেখানে ইন্দ্রিয়গুলির মাধ্যমে শিশু বাহ্যজগতের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে। তাই কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতিতে শিশুদের ইন্দ্রিয় পরিমার্জনার উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব করেছেন। আসলে এই নীতিকে কার্যকর করার জন্য শিশুদের বিভিন্ন ধরনের খেলনা নিয়ে খেলার সুযোগ দেওয়া হয়। এইসব খেলনাগুলিকে বলা হয় উপহার বা গিফট। আর এই কারণে ফ্রয়েবেল বলেছেন-

        "উপহারগুলি শিশুর সামনে বিশ্বজগতের প্রতীক হিসেবে কাজ করে।"

৩) আনন্দানুভূতি সৃষ্টিঃ শিক্ষাক্ষেত্রে শিশুদের মধ্যে আনন্দানুভূতি সৃষ্টি করা কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতির আরেকটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আর এই আনন্দানুভূতি সৃষ্টির জন্য শিশুদের খেলার সুযোগ করে দেওয়া হয়। তবে এই পদ্ধতিতে ফ্রয়েবেল খেলার সাথে বিভিন্ন কাজের সমন্বয় সাধন করার জন্য কতকগুলি বিশেষধর্মীয় খেলার বা কাজের কথা বলেছেন।আর সেগুলিকে বলা হয় বৃত্তি বা অকুপেশন (Occupation ) বা কাজ। আর এই কাজ হল কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতির একটি অতি অপরিহার্য অঙ্গ। 

৪) ছড়া বা গানের মাধ্যমে শিক্ষাঃ কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতির আরেকটি অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য হলো, ছড়া ও গানের মাধ্যমে শিক্ষাদান। আর সেই শিক্ষাদানের মাধ্যমে শিশুদের গানের ও ছড়ার সাথে বিভিন্ন কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়। যেখানে শিশুদের সেই সকল কাজ করার আগ্রহও বৃদ্ধি পায়।

৫) প্রকৃতি পর্যবেক্ষণঃ কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতিতে প্রকৃতি পর্যবেক্ষণের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। প্রকৃতি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে শিশুরা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের বিভিন্ন শক্তির সাথে পরিচিত হয়। যার ফলে বিশ্বপ্রকৃতির সাথে শিশুর একটি আত্মিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। এই কারণে কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতিতে শিশুদের প্রকৃতি পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেওয়া হয়।

    পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতির উপরি উক্ত বৈশিষ্ট্য থেকে স্পষ্ট যে, কিন্ডার গার্ডেন পদ্ধতি আসলে ভাববাদী দর্শনের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। তবে এটি একটি মনোবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। কারণ এই পদ্ধতিতে আধুনিক মনোবিজ্ঞানসম্মত সব নীতিগুলিকে কার্যকরী করা হয়েছে। তাই সময়ের ব্যবধানে শিশুশিক্ষার ক্ষেত্রে এই পদ্ধতির গুরুত্ব আজও কমেনি বরং বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই পদ্ধতি আজও অত্যন্ত অতি জনপ্রিয় পদ্ধতি।

(ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা, সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের SHESHER KOBITA SUNDORBON YOUTUBE CHANNEL)

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...