চৈতন্যচরিতামৃত গ্রন্থটির গ্রন্থ-পরিচয় আলোচনা করো(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, প্রথম সেমিস্টার, বাংলা মেজর সিলেবাস)।
আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, চৈতন্যজীবনীর প্রথম কবি বৃন্দাবনদাসের চৈতন্যভাগবতে মহাপ্রভুর শেষ জীবনের কাহিনী বিশদভাবে বর্ণিত না হওয়াতে বৈষ্ণব ভক্তদের চাহিদা ও তাদের রস সাধনে চৈতন্যজীবন কাহিনী রচনায় প্রবৃত্ত হয়েছিলেন বলেই কৃষ্ণদাস উল্লেখ করেছেন। এখানে চৈতন্য চরিতামৃত গ্রন্থ তিন খন্ডে বিভক্ত। সেখানে আদিলীলায় ১৭ টি পরিচ্ছদ তার প্রথম ১২টি বস্তুত মুখবন্ধরূপেই রচিত হয়েছে। এতে বৈষ্ণবতত্ত্বের বিভিন্ন দিক আলোচিত হয়েছে।
পরবর্তী পাঁচটি পরিচ্ছদে চৈতন্যদেবের জন্ম থেকে নবদ্বীপ বাসকাল পর্যন্ত বর্ণিত হয়েছে। মধ্যলীলার ২৫ পরিচ্ছদে মহাপ্রভু চৈতন্যদেবের পরিব্রাজক জীবনের বিভিন্ন ঘটনা এবং তৎপ্রসঙ্গে বিভিন্ন বৈষ্ণবতত্ত্ব আলোচিত হয়েছে। আর অন্তলয় কুড়িটি পরিচ্ছেদ যেখানে নীলাচল পাশে চৈতন্য জীবনের ভাবোন্মাদ অবস্থার পরিচয় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তবে -
মহাপ্রভুর শেষ জীবনের কাহিনী বিস্তৃতভাবে পরিবেশন করলেও কবিরাজ গোস্বামী মহাপ্রভুর লীলা সংবরণ বিষয় সম্পূর্ণ নীরব ছিলেন। তাঁর এই নীরবতা বিষয়ে বিভিন্ন কারণ অনুমিত হয়। মহাপূর্ব লীলাবসান একান্ত প্রাকৃত ব্যাপার বলেই তিনি তা এড়িয়ে গেছেন। অথবা শারীরিক অশক্ততা নিবন্ধন কবি গ্রন্থ সমাপ্ত করতে পারেননি,কিম্বা গ্রন্থ সমাপ্তির পূর্বেই কবির মৃত্যু ঘটে থাকতে পারে।
জীবনের প্রথমাংশ বর্ণনায় কবি বাহুল্য বর্জন করেছেন। পূর্বসূরী বৃন্দাবনদাস বিস্তৃতভাবেই এই সমস্ত বিষয়ে বর্ণনা করেছেন বলেই কৃষ্ণদাস তার প্রতি শ্রদ্ধাবশতই এই সমস্ত বিষয়ে সংক্ষিপ্ততা অবলম্বন করেছিলেন। বস্তুত বৃন্দাবনদাসের গ্রন্থের পরিপূরকরূপেই তিনি তাঁর গ্রন্থের পরিকল্পনা করেছিলেন,একথা তিনি একাধিকবার উল্লেখ করে গেছেন।
কৃষ্ণদাস বিরচিত চৈতন্যচরিতামৃত শুধু যে চৈতন্য জীবনের প্রামাণিক কাহিনী রূপেই সমাদৃত তা নয়, বৈষ্ণব ধর্ম ও দর্শনের প্রামাণিক ব্যাখ্যাও রয়েছে। একথা যেকোন গৌড়ীয় বৈষ্ণব সম্প্রদায় ভক্তই বিশ্বাস করেন।ড. সুকুমার সেন বলেন-
"চৈতন্য চরিতামৃত চৈতন্যচরিত কাব্যমাত্র নহে। জীবন বর্ণনার সাথে সাথে ইহাতে চৈতন্য প্রবর্তিত বৈষ্ণবধর্ম ও তত্ত্বের স্থুল, সূক্ষ্ম, অতি সূক্ষ্ম বিবরণ ও বিশ্লেষণ আছে।"
বৃন্দাবনদাসের মতই কৃষ্ণদাস কবিরাজও মহাপ্রভুর জীবন কাহিনী অবলম্বনে বৈষ্ণব ধর্ম প্রচারে ব্রত গ্রহণ করেই আলোচ্য গ্রন্থ রচনা প্রবৃত্ত হয়েছিলেন। বৃন্দাবন দাস সম্ভবত কবি প্রাণ ছিলেন বলেই তার রচনায় কখনো কখনো গীতিপ্রানতা বা আবেগ প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু কবিরাজ গোস্বামী ছিলেন একান্তই রসকষহীন বৈষ্ণব পন্ডিত। তাই তার গ্রন্থ আকারে মহাকাব্যতুল্য হলেও এতে কবির কবি ধর্মের কোনই পরিচয় পাওয়া যায় না। তাই অধ্যাপক পরেশচন্দ্র ভট্টাচার্য বলেন- "গ্রন্থে পল্লবিত কবিত্বের অবকাশ কম, কবিত্ব্যের বিকাশও কম। কবি যুক্তি ও নিষ্ঠার সাথে গদ্যাত্মক রচনায় আপনার প্রয়োজন সাধন করিয়াছেন।"
ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের SHESHER KOBITA SUNDORBON YOUTUBE CHANNEL ।
Comments
Post a Comment