গণপ্রজাতন্ত্র চিনের১৯৮২ সংবিধানের মৌলিক বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীযবিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর)
ভূমিকাঃ আলোচনা শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, প্রত্যেক দেশের সংবিধান সেই দেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে গড়ে ওঠে।আর সেই কারণে প্রত্যেক দেশের সংবিধানের কতকগুলি বিশেষ ধরনের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য থাকে। যে বৈশিষ্ট্যগুলি, সেই দেশের সংবিধানের মূল প্রকৃতিটি প্রতিপন্ন করে। তবে চিনের বর্তমান সংবিধানের কিছু অভিনব বৈশিষ্ট্য ও আছে। সেই বৈশিষ্ট্যগুলি হলো-
১) লিখিত সংবিধানঃ
গণপ্রজাতন্ত্রী চিনের সংবিধান ১৯৮২ সালে লিখিত আকারে সেদেশে গৃহীত হয়।আর এই সংবিধানে প্রস্তাবনায় ৪টি অধ্যায়ে ১৩৮টি ধারা লিপিবদ্ধ আছে। যেখানে রাষ্ট্রৈর সাধারন নীতি, রাষ্ট্রব্যবস্থার কাঠামো, নাগরিকদের অধিকার ও কর্তব্য লিখিতভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।।
২) সংবিধানের প্রাধান্যঃ
সংবিধানের প্রাধান্যের স্বীকৃতি চীনের বর্তমান সংবিধানের আরোও একটি বড়ো বৈশিষ্ট্য। সেখানে সংবিধানের মৌলিক আইন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং প্রস্তাবনায় সংবিধানকে-
"সংবিধান হলো রাষ্ট্রের মৌলিক আইন ও সর্বোচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন।"। আসলে সংবিধানই হলো চীন দেশের সর্বোচ্চ আইন।
•৩) দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানঃ
পূর্বতন সোভিয়েত সংবিধানের মতো চীনের বর্তমান সংবিধানটি দুষ্পরিবর্তনীয়। যেখানে সাধারণ আইন পাশের মধ্য দিয়ে এদেশের সংবিধান সংশোধন করা যায় না। সংবিধান সংশোধনের জন্য জাতীয় গণ কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটি বা জাতীয় কংগ্রেসের এক পঞ্চমাংশের অধিক ডেপুটি সংবিধান সংশোধনের জন্য প্রস্তাব উত্থাপন করতে পারেন। অতঃপর জাতীয় কংগ্রেসের ডেপুটির দুই-তৃতীয়াংশের অধিক সেই প্রস্তাব সমর্থন করলে তবেই সংবিধান সংশোধিত হয়।
•৪) সংবিধানের প্রস্তাবনাঃ
•চীনের ১৯৮২ সালের শাসনতন্ত্রে একটি দীর্ঘ প্রস্তাবনা সংযুক্ত করা আছে। আর সেখানে চীনের ক্রমবিবর্তনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রকৃতি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতি, কমিউনিস্ট পার্টির সংগ্রামী ভূমিকা প্রভৃতি ব্যক্ত করা হয়েছে।
•৫) এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রঃ
•পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়নের শাসনব্যবস্থা ছিল যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রকৃতির। কিন্তু বর্তমান গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের শাসন ব্যবস্থা এককেন্দ্রিক। কারণ চীনের সংবিধানের প্রস্তাবনায় চীনকে একটি এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আর সেখানে সরকারের মূলনীতি ও মৌলিক সিদ্ধান্তসমূহ কেন্দ্রীয় স্তরে গৃহীত হয়। আবার সেই স্তরে সকল সিদ্ধান্ত প্রয়োগের ক্ষমতা কার্যকর হয়।
•৬) রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রকৃতিঃ
বর্তমানে চীন সংবিধানের ১ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে যে, গণপ্রজাতন্ত্রী চীন হলো শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বে পরিচালিত একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র। শুধু তাই নয়, শ্রমিক কৃষক শ্রেণীর মৈত্রীর ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত জনগণতান্ত্রিক একনায়কত্বের অধীন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র। আর সেখানে কমিউনিস্ট পার্টির দ্বাদশ জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে বলা হয়েছে যে, চীনের রাষ্ট্র ব্যবস্থা হলো জনগণতান্ত্রিক একনায়কতন্ত্র।
৭) জনগণের সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতিঃ
১৯৮২ সালের নতুন সংবিধানে এই গণ-সার্বভৌমকতার নীতিটি কে স্বীকার করা হয়েছে।আর সেখানে ২ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে যে,
"গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সকল ক্ষমতা। জনগণের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে।"
জনগণ জাতীয় গণ-কংগ্ৰেস এবং বিভিন্ন স্তরের স্থানীয় গণ-কংগ্ৰেসের মাধ্যমে এই ক্ষমতা প্রয়োগ করে। রাষ্ট্রীয় প্রশাসন পরিচালনার ক্ষমতা জনগণের হাতে ন্যস্ত।
•৮) অর্থনৈতিক পরিকল্পনাঃ গণ-প্রজাতন্রী চীনের ১৯৮২ সালের সংবিধানে অর্থনৈতিক পরিকল্পনার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হলো দেশের সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সুদৃঢ় করা।তবে সংবিধানের ১৫ নম্বর ধারা অনুসারে-
'রাষ্ট্র সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় মালিকানার। উপর ভিত্তি করে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করে'।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, সেদেশের উক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো ছাড়াও আরও অনেক গুলো বৈশিষ্ট্য চীন দেশের সংবিধানে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।আর সেগুলো হলো -সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা, গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা, বহুজাতিক রাষ্ট্র, ব্যক্তিগত সম্পত্তির স্বীকৃতি, শ্রমের গুরুত্ব, মৌলিক অধিকার এবং নাগরিক কর্তব্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
Comments
Post a Comment