মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার, রাষ্ট্রবিজ্ঞান,মাইনর সিলেবাস)।
১৭৮৭ সালে ফিলাডেলফিয়া সম্মেলনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান গৃহীত হয়।অতঃপর ১৭৮৯ সালে সে দেশের সংবিধানটি কার্যকরী হয়। আর সেই দেশের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য গুলি হলো-
• প্রথমতঃ পৃথিবীর সংক্ষিপ্ততম সংবিধান গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লিখিত সংবিধান। মূল মার্কিন সংবিধানের মাত্র ৭টি অনুচ্ছেদ ছিল। পরবর্তীকালে ২৭টি সংশোধনী যুক্ত হয়। আর সেদেশে সংবিধান দ্বারা কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার গুলির মধ্যে সুনির্দিষ্টভাবে ক্ষমতা বন্টিত হয়েছে। এই সাথে আইন, শাসন ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মাধ্যমে প্রত্যেকের ক্ষমতা প্রয়োগের পরিধি নির্দিষ্ট করা আছে।
• দ্বিতীয়তঃ মার্কিন সংবিধান হলো দেশের সর্বোচ্চ আইন। আর সে দেশের কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্যসরকার বা তাদের কোন প্রতিষ্ঠান সংবিধানকে অগ্রাহ্য করে চলতে পারে না। আসলে সে দেশের সংবিধান হলো দেশের চরম, প্রধান ও মৌলিক আইন।
• তৃতীয়তঃ মার্কিন সংবিধানের প্রকৃতি দুষ্পপরিবর্তনীয়। তাই সে দেশের সংবিধান সংশোধন পদ্ধতি অতিমাত্রায় জটিল। আর সংবিধান সংশোধনী পদ্ধতি জটিল হওয়ার কারণে ১৭৮৯ সাল থেকে ২০০ বছরের বেশি সময়ের মধ্যে মার্কিন সংবিধান মাত্র ২৭ বার সংশোধিত হয়েছে।
• চতুর্থতঃ মার্কিন সংবিধান জনগণের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। আর সংবিধানের প্রস্তাবনা অনুসারে মার্কিন জনগণ মার্কিন সংবিধান প্রতিষ্ঠা করেছে। মার্কিন জনগণ চূড়ান্ত সার্বভৌমকতার অধিকারী। আর সেখানে সংবিধানের উৎস এবং মার্কিন গণতন্ত্রের আইনগত ভিত্তি জনগণ। তবে প্রথমে জনগণের সমর্থন না নেওয়া হলে পরবর্তীতে অধিক সংখ্যায় জনগণের যোগদানের ফলে মার্কিন সংবিধান পরোক্ষভাবে জনগণের দ্বারা স্বীকৃত হয়েছে বলা যায়।
• পঞ্চমতঃ মার্কিন সংবিধানের শুরুতে একটি প্রস্তাবনা যোগ করা হয়েছে। সংবিধানের শুরুতে প্রস্তাবনা সংযোজনের ক্ষেত্রে মার্কিন সংবিধানকে পথপ্রদর্শক বলা যায়। মার্কিন সংবিধানের প্রস্তাবনায় মার্কিন সংবিধানের উৎস হিসেবে সার্থক জাতিসংঘ গঠন, ন্যায় বিচার সর্বসাধারণের কল্যাণ বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে জনগণকে যাবতীয় রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস হিসেবে নির্দেশ করা হয়েছে।
• ষষ্ঠতঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত নাগরিকতা স্বীকৃত হয়েছে।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা একদিকে সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক, অপরদিকে নিজ নিজ রাজ্যের নাগরিক হিসেবে পরিচিত। আর এ বিষয়টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে লিখিতভাবে স্বীকৃত।
• সপ্তমতঃ মার্কিন সংবিধান ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। মার্কিন সংবিধানে ক্ষমতা স্বতন্ত্র নীতির প্রত্যক্ষ উল্লেখ না থাকলেও তিনটি সরকারি বিভাগ যথা-আইন,শাসন ও বিচার বিভাগকে স্বতন্ত্র রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর সেখানে কংগ্রেস হলো আইন বিভাগীয় সংস্থা, রাষ্ট্রপতি হলেন শাসন বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ এবং সুপ্রিমকোর্ট হল বিচার বিভাগীয় প্রধান। আর এভাবেই সে দেশে ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরন নীতি অনুসৃত হয়।
• অষ্টমতঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় আইনসভা দুটি কক্ষ নিয়ে গঠিত-নিম্নকক্ষের নাম প্রতিনিধিসভা এবং উচ্চকক্ষের নাম হল সিনেট। প্রতিনিধিসভা মার্কিন জনগণের প্রতিনিধির দ্বারা গঠিত হয় আর সিনেট গঠিত হয় প্রতি অঙ্গরাজ্য থেকে প্রেরিত দুজন প্রতিনিধি নিয়ে।
• নবমতঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সংবিধান ছাড়া প্রত্যেক রাজ্যের আলাদা সংবিধান আছে। সেখানে প্রত্যেক রাজ্য তার নিজস্ব সংবিধান রচনা করে থাকে।
• দশমতঃ মার্কিন সংবিধান অনুসারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি সাধারণতন্ত্র। এখানে বংশানুক্রমিক শাসকের বদলে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি হিসেবে কাজ করেন। তবে জনগণই সমস্ত সাংবিধানিক ক্ষমতার উৎস।
** ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের SHESHER KOBITA SUNDORBON YOUTUBE CHANNEL ।
Comments
Post a Comment