ব্রিটেন ও ফ্রান্সের ক্যাবিনেটের তুলনামূলক আলোচনা করো। (West Bengal State University, 3rd Semester, Political Science, Minor)
আলোচনা শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে,ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থা হল সংসদীয় আর ফ্রান্সের শাসন ব্যবস্থা হল সংসদীয় ও রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থার মিশ্রণ। উভয় দেশেই ক্যাবিনেটের অস্তিত্ব আছে এবং উভয় দেশের ক্যাবিনেট এর মধ্যে কিছু মিলও আছে। তবে সাদৃশ্য অপেক্ষা বৈসাদৃশ্য প্রখরতর। আর সেই বৈসাদৃশ্যগুলি হলো -
•প্রথমতঃ ব্রিটেনে কমন্সসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দল থেকে ক্যাবিনেট সদস্যরা নিযুক্ত হন। অর্থাৎ ক্যাবিনেট সদস্যরা সবাই কমন্সসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের সদস্য। নিয়োগের সময় সদস্য না হলে মন্ত্রীকে ছমাসের মধ্যে কমন্সসভার সদস্য হতে হয়। কিন্তু-
ফ্রান্সের পার্লামেন্টের সদস্যদের মধ্যে যারা মন্ত্রী হন, তারা নিয়োগের পর পার্লামেন্টের সদস্যপদ ত্যাগ করেন। অধিকাংশ মন্ত্রীরা পার্লামেন্টের সদস্যদের থেকে আসেন না।
•দ্বিতীয়তঃ ক্যাবিনেট সদস্যদের নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্রিটেনের রাজা বা রানীর নিজস্ব ইচ্ছার কোন মূল্য থাকে না। তিনি কমন্সসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা মোর্চার নেতাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এবং প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে অন্যান্য মন্ত্রীদের নিযুক্ত করেন। সেখানে সকলেই কমন্সসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের সদস্য হন। কিন্তু -
ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োগের ক্ষেত্রে নিজ ইচ্ছানুসারে চলেন এবং প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুসারে অন্যান্য ব্যক্তিদের ক্যাবিনেট সদস্য হিসেবে নিযুক্ত করেন।
•তৃতীয়তঃ ব্রিটিশ ক্যাবিনেট এর কার্যকাল পাঁচ বছর।কিন্তু-
ফ্রান্সের সংবিধানে প্রধানমন্ত্রী বা ক্যাবিনেট এর কার্যকাল সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি।
•চতুর্থতঃ বৃটেনের সংবিধান অলিখিত। সেখানে প্রথা ও রীতিনীতির ওপর নির্ভর করে শাসন ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। আসলে সেখানে ক্যাবিনেট ব্যবস্থার কোন সাংবিধানিক স্বীকৃতি নেই। কিন্তু-
ফ্রান্সের ক্যাবিনেট ব্যবস্থা সংবিধানে লিখিত ও সংবিধান দ্বারা স্বীকৃত।
•পঞ্চমতঃ ব্রিটেনে রাজা বা রানী প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে যে কোনো ক্যাবিনেট এর সদস্যকে বা সমগ্র ক্যাবিনেটকে কার্যকালের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে পদচ্যুত করতে পারেন। আর এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। কিন্তু-
ফ্রান্সেও প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুসারে রাষ্ট্রপতি ক্যাবিনেট সদস্যদের পদচ্যুত করতে পারেন। তবে বাস্তবে রাষ্ট্রপতি পছন্দ নয় এমন ক্যাবিনেট সদস্যদের রাষ্ট্রপতি পদচ্যুত করে থাকেন। অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুসারে চলতে বাধ্য নন।
•ষষ্ঠতঃ ব্রিটেনের মন্ত্রিসভা ও ক্যাবিনেট সভা- উভয় ক্ষেত্রেই সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু-
ফ্রান্সে প্রধানমন্ত্রী শুধুমাত্র ক্যাবিনেট সভায় সভাপতিত্ব করেন। আর গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রিসভায় সভাপতিত্ব করেন রাষ্ট্রপতি।
•সপ্তমতঃ ব্রিটেনে রাজা বা রানী নিয়মতান্ত্রিক শাসক। তাই ক্যাবিনেট এর পরামর্শই তিনি যাবতীয় কাজ সম্পাদন করেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি ক্যাবিনেটের পরামর্শ মেনে চলতে বাধ্য। কিন্তু-
ফ্রান্সের তত্ত্বগতভাবে প্রধানমন্ত্রী ও ক্যাবিনেট এর হাতে জাতীয় নীতি নির্ধারণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রিসভায় সভাপতিত্ব করার সুবাদে রাষ্ট্রপতি সহজেই মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারেন। অর্থাৎ ফরাসি ক্যাবিনেট রাষ্ট্রপতির ইচ্ছা অনুসারে চালিত হয়। রাষ্ট্রপতি ক্যাবিনেটের ইচ্ছানুসারে চলেন না।
•অষ্টমতঃ ব্রিটেনের শাসন ব্যবস্থায় ক্যাবিনেটের স্থান গুরুত্বপূর্ণ। ক্যাবিনেটই ব্রিটেনের শাসনব্যবস্থার কেন্দ্র। কিন্তু-
ফ্রান্সের ক্যাবিনেটের থেকে মন্ত্রিসভা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সেদেশে রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে মন্ত্রিসভায় যাবতীয় প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ক্যাবিনেট সেগুলি কার্যকর করে মাত্র
• পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, সাংবিধানিক অস্তিত্ব না থাকলেও ব্রিটিশ ক্যাবিনেট ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থার সবথেকে শক্তিশালী সংস্থা। বস্তুত নিজে দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় ক্যাবিনেট সেখানে সুনিশ্চিত থাকে যে দলীয় সমর্থনের ভিত্তিতে যে কোন প্রস্তাব সহজেই পাশ হয়ে থাকে। তাই ব্রিটেনে ক্যাবিনেট একনায়কত্ব দেখা দিয়েছে। আর ফ্রান্সের ক্যাবিনেটের নিজস্ব সাংবিধানিক অস্তিত্ব থাকলেও তার ওপর রাষ্ট্রপতির আধিপত্য দেখা যায়। রাষ্ট্রপতি ফ্রান্সের জনগণ দ্বারা নির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ায় সহজেই মন্ত্রিসভার উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারেন। তাই ফ্রান্সে রাষ্ট্রপতির সর্বব্যাপী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের SHESHER KOBITA SUNDORBON YOUTUBE CHANNEL ।
Comments
Post a Comment