Skip to main content

মার্কিন (3rd.Sem)যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের দল ব্যবস্থার তুলনামূলক আলোচনা করো।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের দল ব্যবস্থার তুলনামূলক আলোচনা করো। (West Bengal State University,3rd Semester, Political Science, Minor)

               •আলোচনা শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার রাজনৈতিক দল হল শাসন ব্যবস্থার একটি অপরিহার্য অঙ্গ। দল ব্যবস্থার মাধ্যমে জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে, গণতান্ত্রিক নির্বাচন সম্ভব হয় এবং সরকার গঠিত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের কার্যকালের দ্বিতীয় পর্যায়ে মার্কিন দলববস্থার উদ্ভব ঘটে।                                       আর ব্রিটেনে সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের মত দলব্যবস্থাও ঐতিহাসিক বিবর্তনের ফল। তবে একদিনে ব্রিটেনে দল ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। আধুনিক অর্থে ব্রিটিশ দলব্যবস্থার উদ্ভব ঘটেছে উনবিংশ শতকে। তবে যেভাবেই উক্ত দেশ দুটিতে দল ব্যবস্থার গড়ে উঠুক না কেন তাদের মধ্যে বিস্তর বৈসাদৃশ্য আছে। আর সেই বৈসাদৃশ্য গুলি হল-

•প্রথমতঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দলগুলির মধ্যে কঠোর নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলার অভাব পরিলক্ষিত হয়। তাই কংগ্রেসের সদস্যরা স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করতে পারে। তারা দলীয় মতামতকে অগ্রাহ্য করে নিজ ইচ্ছানুসারে কংগ্রেসের বিভিন্ন প্রস্তাবের ওপর ভোট প্রদান করতে পারে। কিন্তু -                                                        •ব্রিটেনের রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে তুলনামূলকভাবে শৃঙ্খলা নিয়মানুবর্তিতা ও কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণের অস্তিত্ব অনেক বেশি। সে দেশে দলীয় সদস্যরা দলীয় নির্দেশকে উপেক্ষা করে আইনসভায় নিজ ইচ্ছায় ভোট দিতে পারে না। 

•দ্বিতীয়তঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দল ব্যবস্থা হল অস্পষ্ট দ্বিদলীয় ব্যবস্থা। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক দল ও সাধারণতন্ত্রী দল দুটির মধ্যে আদর্শ ও নীতিগত কোন পার্থক্য নেই। উভয় দলই বুর্জোয়া শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষা করে এবং সাম্রাজ্যবাদী নীতিকে প্রাধান্য দেয়। কিন্তু-                                                                                •ব্রিটেনের দল ব্যবস্থা হল সুস্পষ্ট দ্বিদলীয় ব্যবস্থা। ব্রিটেনের শ্রমিক দল ও রক্ষণশীল দলগুলির মধ্যে আদর্শ ও নীতির ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট পার্থক্য লক্ষণীয়।

•তৃতীয়তঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দলগুলির নীতি কর্মসূচিগত পার্থক্য না থাকায় তারা শুধুমাত্র রাজনৈতিক ক্ষমতালাভ করার জন্য নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়। কিন্তু -                                                                           •ব্রিটেনের দলগুলির মধ্যে নীতি ও কর্মসূচি গত পার্থক্য থাকায় রাজনৈতিক দলগুলি নির্দিষ্ট নীতি ও কর্মসূচির ভিত্তিতে সেগুলির রুপায়নের জন্য নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করে থাকে।

•চতুর্থতঃ মার্কিন প্রশাসনিক ব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রীয় হওয়ায় সেখানে বিকেন্দ্রীভূত দলব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। দুটি প্রধান দলের রাজ্য ও স্থানীয় সংগঠনগুলি সেখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাশাপাশি তারা আঞ্চলিক ও স্থানীয় সমস্যাগুলির দিকে নজর দেয়। কিন্তু -                                                                                 ব্রিটেন একটি এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র। ব্রিটেনের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত এবং সেখানকার দলীয় ব্যবস্থাও কেন্দ্রীভূত। আঞ্চলিক সংগঠনগুলির প্রভাব সেখানে অনেক কম। 

•পঞ্চমতঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর এই ব্যবস্থায় সরকার ও আইনসভা আলাদাভাবে কাজ করে। সরকারের অস্তিত্ব আইনসভার ভোট নির্ভর করে না তাই এখানে সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের ঘনিষ্ঠতা খুবই কম। কিন্তু -                       •ব্রিটেনের সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলি পারস্পরিকভাবে গভীর যোগসূত্রে আবদ্ধ থাকে। তাই এখানে কমন্সসভার সরকারি দলের কোন সদস্যই সরকারের নীতি ও দলীয় সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করতে পারে না।

•ষষ্ঠতঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিরোধী দলকে বিশেষভাবে কোন মর্যাদা প্রদান করা হয় না। কিন্তু -                                       •ব্রিটেনের কমন্সসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলকে রাজা বা রানির সরকার এবং প্রধান বিরোধী দলকে রাজা বা রানীর বিরোধী দল বলা হয়। তবে উভয় দলই বিশেষ রাজনৈতিক মর্যাদার অধিকারী এবং জনগণ ও তাদের মর্যাদার চোখে দেখে। 

                    •পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, মার্কিন ও ব্রিটিশ রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে পার্থক্যের কারণ হলো উভয় দেশের শাসনব্যবস্থার মধ্যে সংগঠনগত ও নীতিগত পার্থক্য। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রীয় ও রাষ্ট্রপতি শাসিত এবং ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। পাশাপাশি ব্রিটেনের শাসন ব্যবস্থা হল এককেন্দ্রিক ও সংসদীয় এবং ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরন নীতির অনস্তিত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত। তবে উভয় দেশেই উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রচলিত। তাই উভয় দলব্যবস্থার মধ্যে সাদৃশ্যও কম নয়।

ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা,সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের SHESHER KOBITA SUNDORBON YOUTUBE CHANNEL ।


Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...