মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিমকোর্টের গঠন ও কার্যাবলী আলোচনা করো।(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর)
আলোচনার শুরুতে আমরা বলে রাখি যে,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালত হল সুপ্রিম কোর্ট। তবে সে দেশে সংবিধান চালু হবার সময় সুপ্রিম কোর্ট খুব একটা শক্তিশালী ও কর্তৃত্ব সম্পন্ন প্রতিষ্ঠান ছিল না। ১৮০১ সালে মার্শাল প্রধান বিচারপতি হবার পর সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আর সেখানে-
•গঠনঃসংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রপতি সিনেটের অনুমোদনক্রমে সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগ করেন। বর্তমানে একজন প্রধান বিচারপতি ও ৮ জন সহকারি বিচারপতি নিয়ে সুপ্রিমকোর্ট গঠিত। বিচারপতিরা যতদিন কাজ করতে সক্ষম ততদিন তিনি স্বপদে থাকতে পারেন। তবে সংবিধান বিরোধী কাজকর্ম প্রভৃতি কারণে ইমপিচমন্ট পদ্ধতিতে বিচারপতিদের পদচ্যুত করতে পারে।
•ক্ষমতা ও কার্যাবলী•
ক) মূল এলাকাঃ সংবিধানের ৩০২ নম্বর ধারা অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের মূল এলাকা ভুক্ত বিষয়গুলি হল-ক)রাষ্ট্রদূত, কূটনৈতিক প্রতিনিধি ও কনসাল্ট সংক্রান্ত মামলা। খ) অঙ্গরাজ্যের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের মামলা। গ) আন্তঃরাজ্য মামলা এবং কোন অঙ্গরাজ্যের নাগরিকদের সঙ্গে অন্য অঙ্গরাজ্যের নাগরিক বা বিদেশি সঙ্গে মামলা প্রভৃতি মূল এলাকা ভুক্ত মামলাগুলি সরাসরি সুপ্রিম কোর্টের দায়ের করা যায়।
খ) আপীল এলাকাঃ মার্কিন সুপ্রিমকোর্টের আপীল এলাকা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সুপ্রিম কোর্টের অধিকাংশ মামলাই আপীল সংক্রান্ত মামলা। সে দেশের সংবিধান অনুসারে সুপ্রিমকোর্টের আপীল এলাকা ভুক্ত মামলাগুলি হল-ক) নিম্নতর যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রীয় আপীল আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টের আপীল করা যায়।খ) নিম্নতর আদালতে বিচার্য কোন মামলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রশ্ন জড়িত থাকলে সেই মামলার রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল করা যায়। তবে মার্কিন আইনসভা আইন প্রণয়ন করে সুপ্রিম কোর্টের আপীল এলাকা বৃদ্ধি করতে পারে।
গ) সংবিধানের ব্যাখ্যা ও রক্ষাকর্তাঃ সংবিধান অনুসারে সুপ্রিমকোর্ট সংবিধানের ব্যাখ্যা ও রক্ষাকর্তা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আসলে সুপ্রিমকোর্ট হল সংবিধানের চূড়ান্ত ব্যাখ্যাকার। সুপ্রিমকোর্ট যেভাবে সংবিধানকে ব্যাখ্যা করে সংবিধানের অর্থ সেভাবেই ঠিক হয়। সুপ্রিমকোর্ট সংবিধানের রক্ষাকর্তা হিসেবে শাসন ও আইন বিভাগের সংবিধান বিরোধী যে কোন নির্দেশ বাতিল করে দিতে পারে।
ঘ) নাগরিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষাঃ মার্কিন সুপ্রিমকোর্টের অন্যতম প্রধান কাজ হল নাগরিকদের মৌলিক অধিকার গুলি রক্ষা করা। যদি কোন অধিকার ক্ষুন্ন হয় তাহলে সুপ্রিমকোর্ট সেই অধিকার বলবৎ করার জন্য লেখ বা নির্দেশ জারি করে। কেন্দ্রীয় বা রাজ্য আইনসভার কোন আইন অথবা কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারের কোন নির্দেশ নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন করলে সুপ্রিমকোর্ট সেই আইন বা নির্দেশকে বাতিল করে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষা করে।
ঙ) যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত হিসেবে ভূমিকাঃমার্কিন সুপ্রিমকোর্ট কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে সেই বিরোধের মীমাংসা করে। সংবিধান ব্যাখ্যার মাধ্যমে সুপ্রিমকোর্ট বিরোধ মীমাংসা করে। সুপ্রিমকোর্টের রায় সরকার মেনে চলতে বাধ্য।
পরিশেষে বলা যায় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থায় মার্কিন সুপ্রিমকোর্টের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুপ্রিম কোর্টের মত আর কোন প্রতিষ্ঠান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনজীবনকে এত গভীরভাবে প্রভাবিত করে না। আর এদিক থেকে বলা যায়, মার্কিন সুপ্রিমকোর্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের প্রসার ঘটিয়েছে।
ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের SHESHER KOBITA SUNDORBON YOUTUBE CHANNEL ।
Comments
Post a Comment