Skip to main content

সমাজ(৩য়/সেমিস্টার )বিদ্যা বা সমাজ তত্ত্বের প্রকৃতি

১) সমাজবিদ্যা বা সমাজতত্ত্বের প্রকৃতি•

সমাজবিদ্যার প্রকৃতি বলতে আমরা বুঝি- সমাজতত্ত্বের মূল পরিচয় এবং তার বৈশিষ্ট্য। কারণ সমাজবিদ্যার পরিচয় ও তার বৈশিষ্ট্যের অন্য নামই সমাজবিদ্যার প্রকৃতি আর সেই সমাজবিদ্যার প্রকৃতি নিম্নে আলোচনা করা হলো- 

• সমাজের সামগ্রিক পাঠঃ সমাজবিদ্যার মূল আলোচ্য বিষয় হলো সমাজ। সমাজের এমন কোন বিষয় নেই যা সমাজবিদ্যায় আলোচনা করা হয় না। সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখা সামাজিক নির্দিষ্ট কিছু ইস্যু নিয়ে আলোচনা করে। যেমন রাষ্ট্রবিজ্ঞান,অর্থনীতি সহ বিভিন্ন বিজ্ঞান সমাজের একটি দিক সম্পর্কে গুরুত্ব আরোপ করে, আর সমাজবিদ্যা গোটা সমাজের পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণের নিশ্চয়তা দেয়।

•মূল্যবোধ নিরপেক্ষ বিজ্ঞানঃ সমাজবিদ্যা একটি মূল্যবোধ নিরপেক্ষ বিজ্ঞান। সমাজবিজ্ঞানীগণ যথাসম্ভব মূল্যবোধ বা মূল্যায়ন সম্পর্কিত প্রভাব কাটিয়ে আলোচ্য বিষয় সম্বন্ধে নৈর্ব্যক্তিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে চেষ্টা করেন। 

•সমাজ কাঠামোর আলোচনাঃ সমাজবিজ্ঞান সমাজের গড়ন ও সমাজ কাঠামো নিয়ে আলোচনা করে। কিসের ভিত্তিতে ও কিভাবে সমাজ গড়ে ওঠে এবং কিভাবেই বা সমাজ একটা কাঠামোগত রূপ নেয় তা সমাজবিদ্যার আলোচ্য বিষয়। 

•একটি প্রায়োগিক শাস্ত্রঃ সমাজবিদ্যার আলোচনায় প্রয়োগভিত্তিক ব্যবহারিক আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমাজবিদ্যাকে প্রাথমিক পর্যায়ে শুধুমাত্র তত্ত্ব হিসেবে গণ্য করা হতো। কিন্তু বর্তমানে সমাজবিদ্যার প্রায় প্রায়োগিক বিস্তৃতি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি ঘটেছে।

           •উপরিউক্ত আলোচনা ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি যে পদার্থবিদ্যা,রসায়নশাস্ত্র, অংক শাস্ত্রের মতো সমাজবিদ্যা একটি তাত্ত্বিক বিজ্ঞান। আর সেই পরিপ্রেক্ষিতে বলা হয় যে, সমাজবিদ্যার পুরাণতত্ত্ব ও প্রত্যয়গুলির পুনমূল্যায়ন, পরিবর্ধন হচ্ছে ।ফলে সমাজবিদ্যার প্রসার বর্তমানে ব্যাপকভাবে বিস্তৃতি লাভ করছে।


২)শিক্ষাগত বা শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি আলোচনা করো।

         যেকোন বিষয়ের মত শিক্ষাগত সমাজবিজ্ঞানেরও একটি নিজস্ব প্রকৃতি আছে। আর সেই সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতিগত যে দিকগুলি আছে সেগুলি নিম্নে আলোচনা করা হলো-

•প্রথমতঃ শিক্ষাগত সমাজবিজ্ঞান হল এমন এক ধরনের বস্তুবাদী বিজ্ঞান, যা শিক্ষা প্রক্রিয়ার একটি সুনির্দিষ্ট মান গঠন করে এমন পথে তাকে সুপরিচালিত করার চেষ্টা করে, যা ব্যক্তির ও সমাজের মূল সাধনের সক্ষম হবে এবং সমাজ ও ব্যক্তির মধ্যে সংগতিপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপিত হবে। 

•দ্বিতীয়তঃ শিক্ষাগত সমাজবিজ্ঞান শিক্ষার মাধ্যমে মানব শিশুর সামাজিকীকরন শিক্ষা কিভাবে সাহায্য করে, অনুশীলন করায় এবং শিক্ষা ও সমাজবিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে বিভিন্ন সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া। 

•তৃতীয়তঃ শিক্ষাগত সমাজবিজ্ঞানের একটি বিশেষ প্রকৃতিগত দিক হলো-এটি সমাজবিজ্ঞানের একটি প্রয়োগমূলক শাখা। 

•চতুর্থতঃ শিক্ষাগত সমাজবিজ্ঞান হলে শিক্ষা ও সমাজের মধ্যে যে সম্পর্কে বিদ্যমান তার আলোচনা করা।

•পঞ্চমতঃ শিক্ষাগত সমাজবিজ্ঞান শিক্ষার মাধ্যমে সমাজের অগ্রগতির ওপর গুরুত্ব আরোপ করে।

•ষষ্ঠতঃ সমাজবিজ্ঞানের মতো শিক্ষাগত সমাজ বিজ্ঞানেরও একটি প্রধান দিক হলো সামাজিক মিথস্ক্রিয়া সংক্রান্ত আলোচনা করা। 



৩)শিক্ষাগত সমাজ বিজ্ঞানের পরিধি লেখো।

          •আধুনিককালে শিক্ষাগত সমাজবিজ্ঞানীরা বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে নিরন্তর কাজ করে চলেছেন। তাঁদের বিভিন্ন গবেষণা বিশ্লেষণ করলে শিক্ষাগত সমাজবিজ্ঞানের পরিধি সঠিকভাবে জানা যায়। আর সেখানে-

•শিক্ষার পদ্ধতি নির্ধারণঃ দলগতভাবে এবং ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষা দেওয়ার জন্য কোন কোন পদ্ধতিগুলি কার্যকর আর কোন পদ্ধতিগুলি কার্যকর নয়, সে বিষয়ে শিক্ষকতা সমাজবিজ্ঞানে আলোচনা করা হয়ে থাকে।

•বিদ্যালয় পরিচালনা ও প্রশাসনঃ বিদ্যালয় পরিচালনা ও প্রশাসন সম্পর্কে আলোচনা করা শিক্ষাগত সমাজবিজ্ঞানের কর্ম পরিধির অন্তর্গত। শিক্ষাকে যেহেতু সামাজিক প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করা হয় সেহেতু সামাজিক নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাও সুপরিকল্পিতভাবে করা উচিত।

•শিক্ষার লক্ষ্যঃ শিক্ষাগত সমাজবিজ্ঞানে শিক্ষার লক্ষ্য সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। আর সেখানে বিভিন্ন সামাজিক আদর্শ ও চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ বিশেষ জাতি ও গোষ্ঠীর জন্য শিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারণ করা শিক্ষাগত সমাজবিজ্ঞানের কাজ। 

•পাঠক্রমঃ শিক্ষার লক্ষ্যের ভিত্তিতে এবং সামাজিক লক্ষ্যের ভিত্তিতে শিক্ষার পাঠ্যক্রমটি কেমন হওয়া উচিত সে বিষয়ে আলোচনা করার শিক্ষাগত সমাজবিজ্ঞানের অন্তর্গত।

•সমন্বয় সাধনঃ শিক্ষাগত সমাজবিজ্ঞানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে অন্যান্য সামাজিক সংস্থার কাজের সুষ্ঠু সমন্বয় কিভাবে করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করা এবং গবেষণা করা হয়ে থাকে শিক্ষাগত সমাজবিজ্ঞানে।

        পরিশেষে আমরা করতে পারি যে, শিক্ষাগত সমাজবিজ্ঞান শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার পরিধি বিস্তৃত করেছে। শুধু তাই নয়, শিক্ষিগত সমাজবিজ্ঞান একদিকে শিক্ষণ প্রক্রিয়া অপরদিকে বিভিন্ন সামাজিক প্রক্রিয়ার মধ্যে একটা ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করেছে।

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...