১) সমাজবিদ্যা বা সমাজতত্ত্বের প্রকৃতি•
সমাজবিদ্যার প্রকৃতি বলতে আমরা বুঝি- সমাজতত্ত্বের মূল পরিচয় এবং তার বৈশিষ্ট্য। কারণ সমাজবিদ্যার পরিচয় ও তার বৈশিষ্ট্যের অন্য নামই সমাজবিদ্যার প্রকৃতি আর সেই সমাজবিদ্যার প্রকৃতি নিম্নে আলোচনা করা হলো-
• সমাজের সামগ্রিক পাঠঃ সমাজবিদ্যার মূল আলোচ্য বিষয় হলো সমাজ। সমাজের এমন কোন বিষয় নেই যা সমাজবিদ্যায় আলোচনা করা হয় না। সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখা সামাজিক নির্দিষ্ট কিছু ইস্যু নিয়ে আলোচনা করে। যেমন রাষ্ট্রবিজ্ঞান,অর্থনীতি সহ বিভিন্ন বিজ্ঞান সমাজের একটি দিক সম্পর্কে গুরুত্ব আরোপ করে, আর সমাজবিদ্যা গোটা সমাজের পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণের নিশ্চয়তা দেয়।
•মূল্যবোধ নিরপেক্ষ বিজ্ঞানঃ সমাজবিদ্যা একটি মূল্যবোধ নিরপেক্ষ বিজ্ঞান। সমাজবিজ্ঞানীগণ যথাসম্ভব মূল্যবোধ বা মূল্যায়ন সম্পর্কিত প্রভাব কাটিয়ে আলোচ্য বিষয় সম্বন্ধে নৈর্ব্যক্তিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে চেষ্টা করেন।
•সমাজ কাঠামোর আলোচনাঃ সমাজবিজ্ঞান সমাজের গড়ন ও সমাজ কাঠামো নিয়ে আলোচনা করে। কিসের ভিত্তিতে ও কিভাবে সমাজ গড়ে ওঠে এবং কিভাবেই বা সমাজ একটা কাঠামোগত রূপ নেয় তা সমাজবিদ্যার আলোচ্য বিষয়।
•একটি প্রায়োগিক শাস্ত্রঃ সমাজবিদ্যার আলোচনায় প্রয়োগভিত্তিক ব্যবহারিক আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমাজবিদ্যাকে প্রাথমিক পর্যায়ে শুধুমাত্র তত্ত্ব হিসেবে গণ্য করা হতো। কিন্তু বর্তমানে সমাজবিদ্যার প্রায় প্রায়োগিক বিস্তৃতি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি ঘটেছে।
•উপরিউক্ত আলোচনা ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি যে পদার্থবিদ্যা,রসায়নশাস্ত্র, অংক শাস্ত্রের মতো সমাজবিদ্যা একটি তাত্ত্বিক বিজ্ঞান। আর সেই পরিপ্রেক্ষিতে বলা হয় যে, সমাজবিদ্যার পুরাণতত্ত্ব ও প্রত্যয়গুলির পুনমূল্যায়ন, পরিবর্ধন হচ্ছে ।ফলে সমাজবিদ্যার প্রসার বর্তমানে ব্যাপকভাবে বিস্তৃতি লাভ করছে।
২)শিক্ষাগত বা শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি আলোচনা করো।
যেকোন বিষয়ের মত শিক্ষাগত সমাজবিজ্ঞানেরও একটি নিজস্ব প্রকৃতি আছে। আর সেই সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতিগত যে দিকগুলি আছে সেগুলি নিম্নে আলোচনা করা হলো-
•প্রথমতঃ শিক্ষাগত সমাজবিজ্ঞান হল এমন এক ধরনের বস্তুবাদী বিজ্ঞান, যা শিক্ষা প্রক্রিয়ার একটি সুনির্দিষ্ট মান গঠন করে এমন পথে তাকে সুপরিচালিত করার চেষ্টা করে, যা ব্যক্তির ও সমাজের মূল সাধনের সক্ষম হবে এবং সমাজ ও ব্যক্তির মধ্যে সংগতিপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপিত হবে।
•দ্বিতীয়তঃ শিক্ষাগত সমাজবিজ্ঞান শিক্ষার মাধ্যমে মানব শিশুর সামাজিকীকরন শিক্ষা কিভাবে সাহায্য করে, অনুশীলন করায় এবং শিক্ষা ও সমাজবিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে বিভিন্ন সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া।
•তৃতীয়তঃ শিক্ষাগত সমাজবিজ্ঞানের একটি বিশেষ প্রকৃতিগত দিক হলো-এটি সমাজবিজ্ঞানের একটি প্রয়োগমূলক শাখা।
•চতুর্থতঃ শিক্ষাগত সমাজবিজ্ঞান হলে শিক্ষা ও সমাজের মধ্যে যে সম্পর্কে বিদ্যমান তার আলোচনা করা।
•পঞ্চমতঃ শিক্ষাগত সমাজবিজ্ঞান শিক্ষার মাধ্যমে সমাজের অগ্রগতির ওপর গুরুত্ব আরোপ করে।
•ষষ্ঠতঃ সমাজবিজ্ঞানের মতো শিক্ষাগত সমাজ বিজ্ঞানেরও একটি প্রধান দিক হলো সামাজিক মিথস্ক্রিয়া সংক্রান্ত আলোচনা করা।
৩)শিক্ষাগত সমাজ বিজ্ঞানের পরিধি লেখো।
•আধুনিককালে শিক্ষাগত সমাজবিজ্ঞানীরা বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে নিরন্তর কাজ করে চলেছেন। তাঁদের বিভিন্ন গবেষণা বিশ্লেষণ করলে শিক্ষাগত সমাজবিজ্ঞানের পরিধি সঠিকভাবে জানা যায়। আর সেখানে-
•শিক্ষার পদ্ধতি নির্ধারণঃ দলগতভাবে এবং ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষা দেওয়ার জন্য কোন কোন পদ্ধতিগুলি কার্যকর আর কোন পদ্ধতিগুলি কার্যকর নয়, সে বিষয়ে শিক্ষকতা সমাজবিজ্ঞানে আলোচনা করা হয়ে থাকে।
•বিদ্যালয় পরিচালনা ও প্রশাসনঃ বিদ্যালয় পরিচালনা ও প্রশাসন সম্পর্কে আলোচনা করা শিক্ষাগত সমাজবিজ্ঞানের কর্ম পরিধির অন্তর্গত। শিক্ষাকে যেহেতু সামাজিক প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করা হয় সেহেতু সামাজিক নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাও সুপরিকল্পিতভাবে করা উচিত।
•শিক্ষার লক্ষ্যঃ শিক্ষাগত সমাজবিজ্ঞানে শিক্ষার লক্ষ্য সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। আর সেখানে বিভিন্ন সামাজিক আদর্শ ও চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ বিশেষ জাতি ও গোষ্ঠীর জন্য শিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারণ করা শিক্ষাগত সমাজবিজ্ঞানের কাজ।
•পাঠক্রমঃ শিক্ষার লক্ষ্যের ভিত্তিতে এবং সামাজিক লক্ষ্যের ভিত্তিতে শিক্ষার পাঠ্যক্রমটি কেমন হওয়া উচিত সে বিষয়ে আলোচনা করার শিক্ষাগত সমাজবিজ্ঞানের অন্তর্গত।
•সমন্বয় সাধনঃ শিক্ষাগত সমাজবিজ্ঞানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে অন্যান্য সামাজিক সংস্থার কাজের সুষ্ঠু সমন্বয় কিভাবে করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করা এবং গবেষণা করা হয়ে থাকে শিক্ষাগত সমাজবিজ্ঞানে।
পরিশেষে আমরা করতে পারি যে, শিক্ষাগত সমাজবিজ্ঞান শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার পরিধি বিস্তৃত করেছে। শুধু তাই নয়, শিক্ষিগত সমাজবিজ্ঞান একদিকে শিক্ষণ প্রক্রিয়া অপরদিকে বিভিন্ন সামাজিক প্রক্রিয়ার মধ্যে একটা ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করেছে।
Comments
Post a Comment