ফ্রয়েবেলের শিক্ষাদর্শন, পাঠ্যক্রম এবং শিক্ষণ পদ্ধতি আলোচনা করো( পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, প্রথম সেমিস্টার,এডুকেশন মাইনর)।
আলোচনা শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতির জনক ফ্রয়েবেলের চিন্তা ধারা আধুনিক শিক্ষা ক্ষেত্রেকে নানাভাবে প্রভাবিত করেছে। তাঁর চিন্তার মধ্যে দার্শনিক আধ্যাত্মবাদ, বৈজ্ঞানিক অভিব্যক্তিবাদ এবং মনোবৈজ্ঞানিক কর্মবাদ একাকার হয়ে গেছে। আর সেখানে-
• ফ্রয়েবেলের শিক্ষাদর্শনঃ ফ্রয়েবলের শিক্ষাদর্শন তাঁর জীবন দর্শন দ্বারা সম্পূর্ণরূপে প্রভাবিত। আর তার শিক্ষা চিন্তার বৈশিষ্ট্য হলো এই যে-তিনি শিক্ষার সবকিছুকে একটি কথার দ্বারাই প্রকাশ করেছেন। সেটি হলো বিকাশ বা উন্মেষণ। আসলে তাঁর কাছে শিক্ষা প্রক্রিয়ার প্রকৃতি হল বিকাশ, শিক্ষার লক্ষ্য হলো বিকাশ। তবে-
ফ্রয়েবেল তাঁর শিক্ষা দর্শনের মধ্যে ব্যক্তিসত্ত্বার পরিপূর্ণ বিকাশে উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। শিক্ষা হলো এক ধরনের বিকাশ যার দ্বারা ব্যক্তি উপলব্ধি করতে শেখে যে,সে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ঐক্যের মধ্যে একক। শিক্ষা হলো সেই বিকাশের প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ব্যক্তি প্রকৃতির রাজ্যে নিজের বিস্তৃতি ঘটায় ও মনুষ্য সমাজের সাথে নিজের সত্ত্বাকে একীভূত করে।আর-
উপরিক্ত আলোচনা থেকে লক্ষ্য করা যায় যে, ফ্রয়েবেল ব্যক্তি বিকাশের উপর গুরুত্ব দিলেও সামাজিক সত্ত্বাকে অবহেলা করেননি বরং দুই ধারণার সার্থক সমন্বয় করেছেন।
•ফ্রয়েবেলের শিক্ষার লক্ষ্যঃ
১) বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের আধ্যাত্মিক ঐক্যকে নিজের আত্মার মধ্যে উপলব্ধি করতে শিশুকে সহায়তা করা।
২) বিবর্তনবাদে বিশ্বাসী ফ্রয়েবেল মনে করতেন যে, শিশু সব গুণ নিয়ে জন্মায়। শিক্ষার লক্ষ্য হবে এইসব গুণের বা সম্ভাবনার উন্মেষণ। যেখানে শিক্ষা বাইরে থেকে চাপানো কোন শক্তি নয়, এটি আসবে অন্তর থেকে।
•ফ্রয়েবেলের পাঠ্যক্রমঃ ফ্রয়েবেল তাঁর শিক্ষার উদ্দেশ্য সাধনের জন্য পাঠক্রম সম্পর্কে এক সুচিন্তিত মতবাদ প্রকাশ করেছেন। আর সেখানে তাঁর চিন্তাশক্তি গভীর দার্শনিক মতবাদ ও বিশ্বাসের দ্বারা নির্ধারিত হলেও পাঠ্যক্রম নির্ধারণের ক্ষেত্রে তিনি বস্তুধর্মী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছিলেন। আসলে -
ফ্রয়েবেল প্রকৃতি পরিচয়ের উপর বিশ্বাস গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি মনে করতেন যে, প্রাকৃতিক জ্ঞান শিশুর নৈতিক ও আধ্যাত্মিক চরিত্র বিকাশের সহায়ক হবে। এর দ্বারা তার মধ্যে ঈশ্বর অনুভূতি জাগবে। এজন্য তিনি প্রকৃতি পাঠকে পাঠ্যক্রমে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দিয়েছেন। আর সেখানে-
প্রকৃতি পরিচয় ছাড়া ফ্রয়েবেলের পাঠ্যক্রমে গণিত, ভাষা, অঙ্কন, মাঠের কাজ, কাঠের কাজ, বাগানের কাজ, নাচ, গান, মেলা প্রভৃতি স্থান পেয়েছে। এছাড়াও তিনি ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষাকে পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বিশেষভাবে বলেছেন। তবে-
পাঠ্যক্রম সম্পর্কে ফ্রয়েবেলের মূল বক্তব্য হলো- শিক্ষার্থীর সামনে বিশ্বজগতের এক পরিপূর্ণ প্রতিচ্ছবি তুলে ধরতে হবে।
• ফ্রয়েবেলের শিক্ষণ পদ্ধতিঃ ফ্রয়েবেলের শিক্ষা পদ্ধতি কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতি নামে পৃথিবী বিখ্যাত। কিন্ডারগার্টেন কথার অর্থ হলো শিশু উদ্যান। আর বিদ্যালয় হল একটি উদ্যান স্বরূপ। শিশুরা হলো সেই উদ্যানের চারা গাছ। শিক্ষক হলেন তার মালী। আর সেখানে শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে শিশুরা স্বাভাবিকভাবে শিখবে। শিশুরা সর্বদা আনন্দ সহকারে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ও সক্রিয়ভাবে শিখবে। ফ্রয়েবেল এই সক্রিয়তাকে আত্মশক্তিয়তা বলেছেন এবং এটিকে শিক্ষনের মূল পদ্ধতি হিসেবে বিবেচনা করেছেন। আসলে তাঁর মতে আদর্শ শিক্ষা পদ্ধতি হবে সেই শিক্ষা পদ্ধতি, যাতে শিশুর এই আত্মসক্রিয়াতাকে কাজে লাগিয়ে পাঠদানের কাজ পরিচালনা করা হবে। তবে-
ফ্রয়েবেল প্রথম শিক্ষাবিদ যিনি খেলার মাধ্যমে শিক্ষার কথা বলেছেন। আর এই খেলা গুলো শৈশবে মানুষের বিশুদ্ধতম আধ্যাত্মিক ক্রিয়া। যেখানে খেলা শিশুকে দেয় আনন্দ, স্বাধীনতা, তৃপ্তি ও প্রশান্তি। তবে যা কিছু ভালো তার উৎস হলো খেলা। তাই কিন্ডারগার্ডেন পদ্ধতিতে ফ্রয়েবেল খেলার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। কিন্তু -
কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতিতে মৌখিক শিক্ষার চেয়ে আত্মপ্রকাশের অধিকতর সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্ডারগার্টেনে শিশুর ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য তিন প্রকার উপকরণের ব্যাবহার করে থাকে। আর সেই উপকরণ গুলি হলো -
ক) নার্সারি ছড়া খ) মাদার প্লে গ) উপহার ও কাজ।
'মাদার প্লে'র গান ও খেলা শিশুর অঙ্গ সঞ্চালনের সাহায্য করে এবং একসাথে মিলেমিশে কাজ করার উৎসাহ যোগায়।আর উপহার হল কেউব, বল, সিলিন্ডার ইত্যাদি। এগুলি শুধু শিশুকে খেলার জন্য দেওয়া হয় না। এক একটি উপহার এক একটি আধ্যাত্মিক ধারণার প্রতীক। যেমন-
গোলাকৃতি বল সর্বব্যাপী আধ্যাত্মিকতার প্রতীক। তাছাড়া এইসব উপহারগুলি নিয়ে খেলা করার সঙ্গে সঙ্গে শিশু বস্তুর ঘনত্ব সম্পর্কে ধারণা লাভ করে। এই ধারণা থেকে শিশুর মনে গণিতের ধারণার জন্ম নেয়। আসলে-
উপহার গুলি পাওয়ার পর কাজ আরম্ভ হয়। আর উপহারের সাথে কাজের ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ থাকে। এইসব কাজের মধ্য দিয়ে শিশু নিজেকে প্রকাশ করার সুযোগ পায়। এগুলি শিশুর দৈহিক ও মানসিক বিকাশে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের SHESHER KOBITA SUNDORBON YOUTUBE CHANNEL ।
Comments
Post a Comment