লালন শাহ ফকিরের গান কবিতার পটভূমি আলোচনা করে কবিতার ভাববস্তু নিজের ভাষায় লেখো(পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমধ্যমিক শিক্ষা সংসদ,একাদশ শ্রেণি, বাংলা, দ্বিতীয় সেমিস্টার)
ভূমিকাঃ আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, লালন শাহ ফকিরের গান কবিতার কবি লালন শাহ্ নিজেই।কবি নিজেই ছিলেন মানবতার,মানবাত্মার মূর্তপ্রতীক। শুধু তাই নয়, তিনি জাতি,ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে মানুষকে শান্তি ও বিশ্বাসের উপর ভর করে পথ চলতে শেখাতে চেয়েছিলেন।তবে ধর্মীয় ও জাতিগত কারণে বাংলার জনসমাজ যখন বিভাজিত ঠিক সেই সময়ে এই দৃশ্য দেখে তাঁর অন্তরাত্মা ভীষণভাবে কেঁদে ওঠে। তাই-
কবি লালন শাহ্ মানুষের জন্য একটা সুষ্ঠ সবল সমাজ গঠন করতে চেয়েছিলেন। যে সমাজ গঠনে লড়াইটা করা কোন একজনের পক্ষে সম্ভব নয়,বলা যায় দুরুহ। তাই মানুষকে নিয়ে মানুষের মুক্তির জন্য আমাদের সাধনা করতে হবে। আসলে ক্ষয়িষ্ণু সমাজে মানুষের মনুষত্ব এবং বিশ্বাস মুছে যেতে চলেছে।আর সৃষ্টি হচ্ছে মানুষে মানুষের মধ্যে দ্বন্ধ, সংঘাত,বিভেদ।সেই বিভেদের মূলেই কবি কুঠারাঘাত করার অভিপ্রায়ে এই গীতি কবিতার অবতারণা করেছেন।আর সেই গানে আমরা দেখি-
লালন শাহ ফকিরের প্রধান পরিচয় তিনি বাউল সংগীতকার। যে সংগীতের মধ্যে তিনি তুলে ধরেছেন তৎকালীন সমাজের,রাষ্ট্রের যাবতীয় রীতি-নীতি সংস্কার,মানুষের মধ্যে জাতিভেদ, বর্ণবিদ্বেষ, দ্বন্ধ সংঘাতময় চিত্র। যে চিত্রের মধ্যে আছে আত্মতত্ত্ব, আছে মনস্তত্ত্ব, আছে দেহতত্ত্বের ব্যাখ্যা। আর সেই ব্যাখাটি করেছেন তিনি অতি তির্যক উপমার মধ্যে দিয়ে। আর সেখানে পাই তাঁর মনোভাবের একটি অপরূপ চিত্র। যে চিত্রে তিনি তুলে ধরেছেন-
এ পৃথিবীতে মানুষ এবং স্রষ্টা একে অপরের পরিপূরক এবং প্রতিরূপ। আর সেখানে একটিকে বাদ দিয়ে অপরটি কল্পনা করা বৃথা। কারণ এই মানবদেহে স্রষ্টা বসবাস করেন। তাই তাঁর সঙ্গীতে আত্মাকে 'মনের মানুষ' রূপে তুলে ধরেছেন। আর সেই মানুষ হলো সহজ মানুষ, আলোকের মানুষ, অচিন পাখি। তাই এই স্রষ্টারূপ মানুষকে তিনি ভজন করার পরামর্শ দিয়েছেন। আসলে মানুষের মধ্যে আছে পরমাত্মা। আর সেই পরমাত্মা থেকে মানুষকে যেমন সন্ধান করতে হবে তেমনি ভজন করতে হবে। তবেই মানুষ এই জগত সংসার থেকে মুক্তি পাবে। শুধু তাই নয়, তিনি আরও বলেন যে-
ভজার মধ্যে দিয়ে প্রকৃত সিদ্ধিলাভ ও আত্মার সাথে পরমাত্মার মিলন হয়। তবে এই ভজন আমাদের করতে হবে সত্যের পথ ধরে। আর আমরা যদি সেই ভজন অন্য পথ ধরে করি, তাহলে মানুষ, এজগত এক গভীর অন্ধকারের মধ্যে নিমজ্জিত হতে বাধ্য। তেমনি সময়ে কোন কুলের ঠাঁই পাওয়া প্রকৃতই মুশকিলের ব্যাপার। আসলে তিনি মানুষের মধ্যে যে মনুষত্ববোধ আছে সেই মনুষত্ববোধকে লালন সংগীতের মধ্যে দিয়ে জাগ্রত করতে চেয়েছিলেন। যে মনুষত্ববোধ মানবতার সৃষ্টির আধার, মানবিকতাবোধের সহায়ক। তাই এ কবিকে বলতে শুনি-
"এই মানুষই মানুষ গাঁথা।"
আসলে মানুষের মানবতাই মানুষের মুক্তির প্রধান পথ, সাধনার প্রধান চাবিকাঠি। তবে -
কবি লালন শাহ ফকির সামাজিক বৈষম্যকে দূরে সরিয়ে প্রেম, ভালবাসার নিরিখে সাম্যের নীলাকাশের নিচে মানুষকে রাখতে চেয়েছেন। আসলে এ কবির গানের মধ্যে আছে রূপ,রস,গন্ধ,ছন্দ। যা মানুষের মনকে মাতিয়ে রাখে কোন এক অদৃশ্য জাদুতে। আর সেই মানুষগুলি হবে জাতি,ধর্ম,বর্ণ, বিদ্বেষ ভুলে পরম মানবিকতায় পরিপূর্ণ। যেখানে কোন মানুষের মধ্যে মানুষের বিভেদ-দ্বন্দ্ব থাকবে না, থাকবে প্রেম,ভালবাসা। আত্মার সঙ্গে পরমাত্মার মিলন।
Comments
Post a Comment