সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত 'আড্ডা' প্রবন্ধের মূল বক্তব্য বা মূল ভাববস্তু বা বিষয়বস্তু লেখো।( পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ, একাদশ শ্রেণি, দ্বিতীয় সেমিস্টার, বাংলা)
•আলোচনা শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে সৈয়দ মুজতবা আলী পঞ্চতন্ত্র গল্প গুচ্ছের অন্যতম প্রবন্ধ আড্ডা। আর সেই প্রবন্ধে আমরা শুরুতেই দেখি যে, বাঙালি ভীষণ আড্ডাপ্রিয়। শুধু তাই নয়,গোটা পৃথিবীতে এই আড্ডার বিস্তৃতি দেখা যায়। আর সেখানে উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে- এই যেমন ইলিশ মাছ, এই মাছটির নাম পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে পরিচিত। ঠিক তেমনি আড্ডার চরিত্র বা ধরণ বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম ভাবে দেখা যায়।আর সেখানে -
•এই যেমন কায়রো শহরের মানুষেরা ভীষণভাবে আড্ডাপ্রিয়। তবে সে শহরের মানুষগুলো কেউ কখনো অন্যের বাড়িতে এই আড্ডার আসর বসায় না। কারণ এক্ষেত্রে তারা বাড়ির কর্ত্রীর পছন্দ এবং অপছন্দের বিষয়টি সব সময় মনে গেঁথে রাখেন। তাই তারা কোন কাফে(ক্যাফে দ্যা নীল) খাবার নিয়ে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা দিতে পছন্দ করেন। বলা যেতে পারে, এই সকল মানুষগুলি কাফে জীবনের অর্ধেক সময় আড্ডা দিয়ে অতিবাহিত করেছেন। আর সেই আড্ডা দিতে গিয়ে বিভিন্ন প্রকৃতির মানুষের সাথে তাদের আলাপ জমে উঠে।সেই আলাপ কখনো কখনো তাদের কাছে সুসম্পর্কে পরিণত হয়। আর এখানে-
•লেখক অতি কৌতুক করে বলেছেন যে, শ্রীহট্ট, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কাছাড়ের বাঙালি খালাসীরা, খিদিরপুরে আড্ডা থেকে হেলায় মক্কা জয় করে ফেলেছে। এই আড্ডার আসরেই প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলী পেয়েছিলেন টিকে তামাকের গন্ধ। আর সেই গন্ধ প্রাবন্ধিকের নাকে বহু বছর পরেও লেগেছিল। শুধু তামাক নয় এখানে লেখকের পরিচয় হয়েছিল ইজিপশিয়ান সিগারেটের সাথে। সেই পরিচয় লেখকের মনে হয়েছিল যে এই তামাকের গন্ধ এক রহস্যময়। তবে-
•এই কাফে বসে বাড়ি গৃহিণীকে লুকিয়ে প্রিয় মানুষটির কাছে চিঠি লিখতে ভালো লাগে।আসলে এইভাবে কাফের চরিত্র বা গতিপথ কিছুটা হলেও পাল্টে যায়। বিভিন্ন দেশের রমণীদের রূপ সৌন্দর্যের বিচার বিশ্লেষণ করা হয়। এখানে বিভিন্ন কারণে কায়রো শহরকে একটু হলেও এগিয়ে রাখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তবে এখানে বলে রাখা ভালো যে-
•মিশরীয়রা ভীষণ আড্ডাবাজ হলেও তারা কখনো একই কাফেতে জীবন কাটাতে পছন্দ করেন না। এখানে আরো দেখা যায় যে, বিভিন্ন কাফে আড্ডার ধরন,আড্ডাবাজদের চরিত্র, আড্ডার বিষয় বিভিন্ন রকম হয়। আর তার ফলে আড্ডার চরিত্র কিন্তু পাল্টে যায়। শুধু তাই নয়-
•প্রাবন্ধিক আরো বলেন যে, এই কাফে আড্ডার মেজাজের মধ্যে বেশ কিছু আড্ডাবাজের মধ্যে সবজান্তা ভাবনার আড্ডাবাজিদের দেখা যায়। আর এই সকল আড্ডাবাজদের যদি কোন সময় কোন বড় শহরে বড় কর্তা হিসেবে তুলে ধরা হয়, তাহলে তারা পৃথিবীর যেকোন সমস্যা মুহূর্তের মধ্যে সমাধান করে দিতে পারে। তবে বেশ কিছু কাফেতে মাঝে মাঝে যদি যাওয়া যায় তাহলে সেখানে দেখা যাবে অভ্যর্থনার বহর। তবে সে যাই হোক, আড্ডাবাজরা সর্বদা নিজেদের আড্ডাবাজি মেজাজে থাকতে পছন্দ বা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
Comments
Post a Comment