খেলাভিত্তিক শিক্ষার বৈশিষ্ট্য গুলি কী কী?খেলাভিত্তিক শিক্ষার উপযোগিতা আলোচনা করো। •অথবা• খেলাভিত্তিক শিক্ষার বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো। খেলার বৈশিষ্ট্যকে কিভাবে শিক্ষার সাথে সংযুক্ত করা যায়? আলোচনা করো।
•খেলাভিত্তিক শিক্ষার বৈশিষ্ট্যঃ কল্ডওয়েল কুক সর্বপ্রথম শিক্ষা জগতে 'খেলাভিত্তিক শিক্ষা' কথাটি ব্যবহার করেন। তিনি খেলার মাধ্যমে শিশুদের শিক্ষাদান করতে পছন্দ করতেন।আর সেখানে অভিনয়,বিতর্ক,আলোচনা সভা ইত্যাদির মাধ্যমে শিশুরা কিভাবে বিভিন্ন বিষয়ের উপর জ্ঞান লাভ করতে পারে তা তিনি তাঁর বিদ্যালয়ে প্রয়োগ করে দেখিয়েছেন। তবে- শিক্ষা জগতে কুক খেলাভিত্তিক শিক্ষা কথাটি ব্যবহার করলেও এই ধারণাটি একেবারেই নতুন নয়। আধুনিক কালে গঠিত কিন্ডারগার্ডেন শিক্ষণ পদ্ধতি মন্তেসরী শিক্ষণ পদ্ধতি, প্রজেক্ট পদ্ধতি, ডাল্টন প্ল্যান ইত্যাদি শিক্ষণ পদ্ধতিগুলির ভিত্তি হল শিক্ষায় ক্রীড়াচ্ছল। কারণ-
উপরিউক্ত পদ্ধতিতে শিশুর খেলার প্রবৃত্তিকে সম্পূর্ণভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। শিশুর শিক্ষাকে তার খেলার মতোই আনন্দময় করে তোলার দিকেই এই শিখন পদ্ধতিগুলিতে তাদের দৃষ্টি নিবন্ধ করা হয়েছে। আধুনিক শিক্ষা ক্ষেত্রে যে সকল শিক্ষণ পদ্ধতির উদ্ভব হয়েছে, সেগুলি বিশ্লেষণের মাধ্যমে স্যার জন অ্যাডামস দেখিয়েছেন যে সবকটির ভিত্তিই হল শিশুর ক্রিয়াশীলতা। কারণ আধুনিক শিক্ষণ পদ্ধতিগুলি হল সাধারণত খেলা ভিত্তিক অর্থাৎ খেলার মৌলিক দিক গুলি সকলের মধ্যেই নিহিত।তবে-
প্রকৃতিবাদী রুশো, ফ্রয়েবেল,মন্টেসরি, রবীন্দ্রনাথ প্রমুখ শিক্ষাবিদ শিক্ষাক্ষেত্রে খেলার বৈশিষ্ট্য গুলি থাকা জরুরি বলে মনে করেন। তাই বর্তমান শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষায় যে বৈশিষ্ট্য গুলি পরিলক্ষিত হয় সেগুলি হল-
১) খেলা স্বতঃস্ফূর্ত সৃজনাত্মক কাজ বলে শিশুদের আগ্রহ দেখা যায়। কাজেই শিক্ষাকে আগ্রহভিত্তিক করতে হলে খেলার বৈশিষ্ট্য গুলি শিক্ষায় প্রয়োগ করতে হবে।
২) খেলা এবং শিক্ষা উভয়ই সৃজনধর্মী কাজ হওয়ায় খেলাটি যদি শিক্ষায় বুক করা হয় তাহলে শিক্ষার্থীর সিজন স্পৃহা পরিতৃপ্ত হয়। সৃষ্টির আনন্দের তার অন্তর থেকে নতুন কিছু সৃষ্টির প্রেরণা জাগ্রত হয়। যার ফলস্বরূপ ব্যক্তি কল্যাণ এবং সমাজকল্যাণ সাধিত হয়।
৩) খেলাভিত্তিক শিক্ষা শিক্ষার্থীকে ভবিষ্যৎ জীবনের উপযোগী করে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। বিদ্যালয়ের স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দময় পরিবেশে শিক্ষা লাভের ফলে শিক্ষার্থী কর্মজীবনের বৃহত্তম পরিবেশে সহজে সামঞ্জস্য রক্ষা করতে পারে।
৪) খেলার মাধ্যমে শিশুর দেহ ও মনের বিকাশ সাধন ঘটে। শিশুর সঠিক বিকাশ সাধন শিশু কেন্দ্রিক শিক্ষার উদ্দেশ্য হওয়ায় শিক্ষাবৃত্তির ধারণা যে শিক্ষায় খেলার সংযুক্তি অতি জরুরী।
•খেলাভিত্তিক শিক্ষার উপযোগিতা•
১)খেলাভিত্তিক শিক্ষা শিশুর স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দের অনুকূলে হয় এবং এখানে অবাধ স্বাধীনতা থাকে বলে এটি শিশুর কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়।
২) খেলাভিত্তিক শিক্ষার মাধ্যমে শিশু যে অভিজ্ঞতা অর্জন করে তা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় এটি শিখন ও সংরক্ষণ প্রক্রিয়ার সহায়ক।
৩) খেলাভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থায় শিশু নিজ হাতে কাজ করতে পারে বলে তার মধ্যে বিষয়টি সম্বন্ধে সম্যক ধারণা সৃষ্টি হয়।
৪) খেলাভিত্তিক শিক্ষায় স্বাধীনভাবে কাজের সুযোগ থাকায় শিশুর মধ্যে দায়িত্ববোধ জাগ্রত হয়।
৫) খেলাভিত্তিক শিক্ষা শিশুর মধ্যে থেকে ভয়,ঘৃণা প্রভৃতি ক্ষতিকর প্রক্ষোপ দূরীকরণে সহায়তা করে।
৬) খেলাভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থায় শিশুরা খেলার মাধ্যমে ও নিজ হাতে কাজ করার সুযোগ পায় বলে তার মধ্যে কৌতূহল,সংরক্ষণ প্রভৃতি প্রবৃত্তি গুলি বিকশিত হয়।
৭) প্রাথমিক স্তরের খেলাভিত্তিক শিক্ষা অত্যন্ত উপযোগী। কারণ এখানে অনুকরণমূলক শিখনের সুযোগ আছে।
৮) স্বল্পবুদ্ধি সম্পন্ন শিশুরা খেলাভিত্তিক শিক্ষার মাধ্যমে সহজেই শিক্ষালাভ করতে পারে।
Comments
Post a Comment