Skip to main content

বাংলা কাব্য (3rd Sem )কবিতায় কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত।

বাংলা কাব্য কবিতায় কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্তে কবি প্রতিভার পরিচয় লেখো(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার বাংলা মেজর)।

            আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, রবীন্দ্রোত্তর আধুনিক কাব্য ধারার একজন বিশিষ্ট কবি হলেন সুরেন্দ্রনাথ দত্ত। তবে তিনি আধুনিক কাব্য ধরার বিশিষ্ট কবি হলেও কখনও তীব্র কণ্ঠে রবীন্দ্র বিরোধিতার বাণী কোনদিন উচ্চারণ করেননি। বরং বলা যেতে পারে রবীন্দ্রনাথকে অবলম্বন করেই রবীন্দ্রনাথ থেকে সরে আসতে পেরেছেন স্বকীয় জীবন অভিজ্ঞতার স্বাতন্ত্র্যে ও চৈতন্যের একান্ত আত্মনিষ্ঠায়। তাই সুধীন্দ্রনাথ দত্তকে তার আকাশ প্রদীপ কাব্যটি উৎসর্গ করে লিখেছেন-

        "আমার রচনা তোমাদের কালকে স্পর্শ করবে                আশা ক'রে এই বই তোমার হাতের কাছে এগিয়ে            দিলুম। তুমি আধুনিক সাহিত্যের সাধনক্ষেত্রে একে           গ্রহণ করো।"

         রবীন্দ্রনাথের এই উক্তি থেকে সুনিশ্চিতভাবে আমরা বলতে পারি যে, যে আধুনিক কবিগণ বাংলা কবিতার রবীন্দ্রোত্তরণে প্রধানতম ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন সুধীন্দ্রনাথ দত্ত তাদের মধ্যে অন্যতম একজন কবি। যেখানে-

              প্রথম মহাযুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউরোপখন্ডে পুরানো জীবন বোধের ধ্বংসস্তূপকে উপর দাঁড়িয়ে ক্লান্ত দৃষ্টিতে নতুন মূল্যবোধের সন্ধান করেছেন যে সকল কবিগণ তাঁদের মানুষ ভাবনার গভীর আত্মীয়তা অর্জন করেছিলেন তিনি এবং তিনিই নবীন কবিদের মধ্যে ছিলেন প্রথম কবি। যে কবি বিশ শতকের বৈনাশিক কাল প্রহরে জর্জরিত মহাকবি টি. এস. এলিয়েটের সঙ্গে পরিচয় ঘটিয়েছিলেন বাংলাদেশের সেদিনকার তরুণ কবিদের। তবে কাব্যের রূপকার্থে তিনি মহাযুদ্ধ বিধ্বস্ত জীবনকে শুধু দেখেননি, উপলব্ধি করেছেন সেই অনুর্বর পোড়ামাটি অনুভূতশতাকে রোমান্টিক কাব্যের ও প্রতীক। সেখানে-

               জীবনের সান্ত্বনাহীন ধ্বংসস্তূপের মাঝখানে দাঁড়িয়ে যুগের বন্ধ্যাত্ব ও রোমান্টিক কাব্যলোকের অন্তঃসারশূন্যতাকে তদগতভাবে লক্ষ্য করেছেন একবি। তিনি বুঝেছেন এই নতুন পটভূমিকায় যেখানে সমস্ত সনাতন ধারণা বৈজ্ঞানিক বা আধ্যাত্মিক যাই হোক না কেন, ভেঙ্গে চূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। সেখানে রোমান্টিক ভাবাবেগময় সৌন্দর্যলাবণ্যের কাব্য রচনা করার কোন সঙ্গতি নেই। তাই তিনি রবীন্দ্রনাথকে লিখেছিলেন-

    "আমার মনে হয় কাব্যের প্রধান অঙ্গ Lyricism নয়,intellectualism এবং এতেই বিভিন্ন মনের আত্মকীয়তার প্রকাশ।"

             রবীন্দ্রনাথের সান্নিধ্যে বেড়ে উঠেও সুধীন্দ্রনাথ যথার্থই ছিলেন আধুনিক কবি। তাঁর কবিতা যাযাবর বিহঙ্গের মতন রোমান্টিক মায়া জড়িয়ে নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছে- 'আমার সংকীর্ণ আত্মা,। আসলে 'অর্কেস্ট্রা, র যুগ থেকেই সুধীন্দ্রনাথের কাব্যশক্তি পূর্ণরূপে বিকশিত হয়। অর্কেস্ট্রা বিংশ শতাব্দীর তরুণী নায়িকা। তবুও সেই নায়িকার কাছে কবি মরুভূমির শূন্যতা মেটাতে পারেননি। প্রথম মহাযুদ্ধের ধ্বংসাত্মক লীলা প্রত্যক্ষ করে প্রেমকেই তিনি জীবনে চলার পাথেয় করেছিলেন। তিনি বুদ্ধিবাদী কবি। মহাসত্য, শাশ্বতী, উটপাখি,প্রতীক্ষা ইত্যাদি তার শ্রেষ্ঠ কবিতায় শিক্ষিত এবং শিল্পীত কবি মানসিকতা প্রতিফলিত হয়েছে। আসলে-

            সমকালীন চেতনায় কবি যে কতখানি বিষন্ন হয়ে পড়েছিলেন তার প্রমাণ মেলে যযাতি, উটপাখি, বিপন্ন প্রভৃতি কবিতায়। তবে তাঁর প্রথম কাব্য তন্বী তে আছে ২৯ টি কবিতা। আর সেই কবিতাগুলি তিনি তিন বছর ধরে লিখেছিলেন। সেই তন্বীকাব্যগ্রন্থটি সুরেন্দ্রনাথ রবীন্দ্রনাথকে উৎসর্গ করেছেন। যে কাব্যগ্রন্থে আবেগ উচ্ছ্বল প্রেমই প্রাধান্য লাভ করেছে। শুধু তাই নয়, সমকালীন মানুষের বিচ্ছিন্নতাবাদী মানসিকতাও এ কবিকে বিশেষভাবে ভাবিয়ে তুলেছিল। আর তার প্রমাণ পাই উটপাখি কবিতায়। তবে প্রেম এবং অতীতচারিতা তাঁর তন্বী কাব্যগ্রন্থে বিশেষ গুরুত্ব লাভ করেছে। অপরপক্ষে বিশুদ্ধ প্রেম চেতনার স্বরূপই প্রকাশিত হয়েছে অর্কেস্ট্রা কাব্যের সনেট গুলিতে। আর সেখানে পন্ডাশ্রম তে লিখলেন-

    " পুনমির্লনের আশা? সে কেবল প্রেমার্ত কল্পনা;                   সপ্তসিন্ধু পরপারে, অদর্শনে আমার বসতি।"

         অর্কেস্ট্রা র পাঁচটি সনেটরই বিষয় হলো প্রেম। যেখানে তিনি অতি বুদ্ধিমত্তার সাথে ব্যবহার করেছেন সেক্সপ্রিরিয়ান এবং পেত্রার্কীয় রীতির সনেট। 

       'শাশ্বতী'অর্কেস্ট্রা কাব্যগ্রন্থের একটি উল্লেখযোগ্য কবিতা। শাশ্বতী আসলে একটি যথার্থ আধুনিক প্রেমের কবিতা।সে চিরন্তন নারী। আর কবির সাথে সাথে সে নারীর নাগাল পেতে পাঠকও সমানভাবে আগ্রহী। এখানে কবি বর্ষার চিত্রকল্প রচনা করার পরপরই বাদল শেষের রাতের চিত্রকল্প রচনা করেছেন। তবে এখানে কবির মন অতীতচারী। কিন্তু তার প্রিয়তমা অনুরাগ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে ছিল তাঁরই মুখের দিকে। আসলে কবি ব্যক্তিপ্রেমের ভিতরে বিশ্ব প্রেমের বীণা বাজিয়েছেন। প্রকৃতির বিচিত্র সব ঐশ্বর্যের ভিতর কবি তাঁর মানস প্রিয়াকে দেখেছেন।

••বাংলা কাব্য সাহিত্যে সুধীন্দ্রনাথ দত্তের অবদান••-

•ক) নাগরিক জীবনের জটিলতা যন্ত্রনা তাঁর কাব্যের পরিস্ফুট হয়েছে।                                                      •খ) কবিতার রীতি গঠনে, ভাষা ও ছন্দ রচনায় তিনি ধ্রুপদী শিল্পী, কবিতা প্রধানত প্রতীকধর্মী।                    •গ) জীবন দর্শনে তিনি নৈরাশ্যবাদী। আধুনিক যুগ তাঁর কাছে রস ও বর্ণহীন মরুভূমির সদৃশ। তবুও তিনি শাশ্বত প্রেমের পূজারী।                                                        •ঘ) এ কবির কাব্যে নষ্ট ও ভ্রষ্ট সভ্যতার জন্য আর্তনাদ শোনা যায়।                                                                •ঙ) সময় সম্পর্কে তিনি যথেষ্ট সতর্ক ও সচেতন শিল্পী। তাই তিনি কবি হিসেবে একটি নিজস্ব জগৎ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।



Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...