Skip to main content

ব্রিটিশ ক্যাবিনেটের (3rd.Sem) গঠন ও কার্যাবলী আলোচনা করো।

ব্রিটিশ ক্যাবিনেটের গঠন ও কার্যাবলী আলোচনা করো(West Bengal State University ,Third Semester, Political Science, Minor)।

ব্রিটেনে ক্যাবিনেট শাসনব্যবস্থা প্রচলিত। বস্তুতপক্ষে ব্রিটেনেই ক্যাবিনেট শাসনব্যবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ব্রিটেনের শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসের ক্রমবিবর্তনের ধারায় ক্যাবিনেট শাসন ব্যবস্থার গঠন প্রণালী তৈরি হয়েছে। আর সেখানে ক্যাবিনেটের গঠন পুরোপুরি শাসনতান্ত্রিক প্রথা বা রীতি-নীতির উপর নির্ভরশীল। যেখানে-

            •ব্রিটেনের ক্যাবিনেট শাসন ব্যবস্থার শীর্ষে আছেন রাজা বা রানী। কিন্তু তিনি নামমাত্র শাসক। শাসনকার্যের প্রকৃত দায়িত্ব ক্যাবিনেট এর উপর ন্যস্ত আছে। আর সেই ক্যাবিনেটের বৈঠকে রাজা-রানি উপস্থিত থাকেন না।তবে-

            •ক্যাবিনেট পার্লামেন্টের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ক্যাবিনেটের সদস্যদের পার্লামেন্টের কোন না কোন কক্ষের সদস্য হতে হয়। নির্বাচনের পর যে দল কমন্স সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সেই দলই মন্ত্রী পরিষদ বা ক্যাবিনেট গঠন করে। সেই দলের নেতাকে রাজা বা রানী মন্ত্রিসভা গঠন করার জন্য আহ্বান জানান। যেখানে-

             •প্রধানমন্ত্রী ক্যাবিনেটের গঠন ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করেন। ব্রিটিশ ক্যাবিনেটের সাধারণ ১৬ থেকে ২৪ জন সদস্য থাকেন। মন্ত্রিসভার কোন্ কোন্ সদস্যকে ক্যাবিনেটে মন্ত্রী করা হবে এবং কোন্ কোন্ দপ্তর ক্যাবিনেটের অন্তর্ভুক্ত হবে এ সমস্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের চূড়ান্ত ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে ন্যস্ত থাকে। আসলে ব্রিটিশ শাসন ব্যবস্থার মধ্যমণি হলো ক্যাবিনেট। আর সেই ক্যাবিনেটের কার্যাবলী হলো-

•১) নীতির নির্ধারণঃ ইংল্যান্ডে শাসন সংক্রান্ত মৌলিক নীতিগুলি ক্যাবিনেট নির্ধারণ করে। কারণ এটি একটি নীতির নির্ধারণকারী সংস্থা। ক্যাবিনেট জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এবং সকল বিষয়ে সম্মিলিতভাবে সুচিন্তিত নীতি নির্ধারণ করে থাকে। আর এই সকল কার্যসম্পাদনের জন্য বিভিন্ন বিভাগীয় মন্ত্রীরা আছেন কিন্তু ক্যাবিনেটই সরকারের মূল নীতি স্থির করে দেয়। 

•২)আইন প্রণয়নঃ সরকারি মূলনীতি নির্ধারণের সঙ্গে আইন প্রণয়নের বিষয়টি ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। বর্তমানে ব্রিটেনে 'অর্পিত ক্ষমতা প্রসূত' আইন অনুসারে ক্যাবিনেটের হাতে আইন প্রণয়নের ব্যাপক ক্ষমতা অর্পিত হয়েছে। আর সেখানে ক্যাবিনেটই আইনের প্রস্তাব প্রণয়ন করে, পার্লামেন্টে আইনের খসড়া উত্থাপন করে এবং পার্লামেন্ট তা পরিচালনার ব্যবস্থা করে। তবে ক্যাবিনেটের পিছনে সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিনিধিদের সমর্থন থাকে। তাই কোন প্রস্তাব পাশের ক্ষেত্রে তেমন কোন অসুবিধা হয় না।

•৩) শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণঃ আইনগতভাবে রাজা বা রানী শাসন বিভাগের যাবতীয় ক্ষমতার অধিকারী। তবে ক্যাবিনেটের পরামর্শক্রমে এই ক্ষমতা প্রযুক্ত হয়। কার্যক্ষেত্রে ক্যাবিনেটই সামগ্রিকভাবে শাসন বিভাগকে পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। ক্যাবিনেটই রাজা বা রানীর নামে দেশ শাসন করে। তবে পার্লামেন্ট প্রণীত আইন ও ক্যাবিনেট প্রবর্তিত নীতিগুলি যাতে যথাযথভাবে কার্যকরী হয় সে বিষয়ে ক্যাবিনেটকে লক্ষ্য রাখতে হয়।

•৪) বাজেট সংক্রান্ত বিষয়ঃ সরকারের আয়-ব্যয় বা বাজেট সম্পর্কেও ক্যাবিনেটের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। অর্থমন্ত্রী খসড়া বাজেট তৈরি করেন এবং কমন্স সভায় পেশ করেন। তার আগে তিনি ক্যাবিনেট এর সঙ্গে মুক্তভাবে আলোচনা করেন এবং আলোচনার পরই বাজেটের রূপরেখা চূড়ান্ত হয়।

•৫) বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সংহতি সাধনঃ শাসন বিভাগের কাজকর্ম বিভিন্ন বিভাগ দপ্তরের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। ক্ষমতা ও ক্ষেত্রেধিকার নিয়ে সরকারি দপ্তর সমূহের মধ্যে বিরোধ বাঁধতে পারে। তাই ক্যাবিনেট বিভিন্ন দপ্তরের ক্ষমতার পরিধি নির্ধারণ করে এবং বিভাগসমূহের মধ্যে যোগসূত্র রক্ষা করে।

•৬) অন্যান্য ক্ষমতাঃ জাতীয় বা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আকস্মিক কোনো ঘটনা ঘটলে বা সমস্যা সৃষ্টি হলে ক্যাবিনেট সে বিষয়ে সত্ত্বর আলোচনা করে এবং ব্রিটিশ সরকারের ভূমিকা ও নীতি নির্ধারণ করে। ব্রিটেন ও তার অধিবাসীদের আগামী দিনের পরিস্থিতি ও প্রয়োজনীয়তার কথা ক্যাবিনেটকে বিচার বিবেচনা করতে হয় এবং সেই অনুসারে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়।

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...