Skip to main content

বুদ্ধদেব বসুর (3rd.Sem) কাব্য ও কবি কৃতিত্বের পরিচয় দাও।

রবীন্দ্রোত্তর আধুনিক কাব্য ও কবিতায় কবি বুদ্ধদেব বসুর কৃতিত্বের পরিচয় দাও(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার বাংলা মেজর)।

         আলোচনা শুরুতেই আমরা বলতে পারি যে,আধুনিক বাংলা কাব্যের স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব হলেন বুদ্ধদেব বসু। কাব্যাঙ্গনে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের কৃতি ছাত্র হিসাবে নিজেকে তুলে ধরেছিলেন। শুধু তাই নয়, ছাত্রাবস্থাতেই তিনি ঢাকা শহরে আধুনিক বাংলা কাব্যের আন্দোলন গড়ে তোলেন। আর সেই কাব্য আন্দোলনের পটভূমি ছিল তার 'Meet nurse for a poetic child'.তবে-

         সেদিনকার তরুণ কবি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রুচি ও শালীনতার প্রশ্ন অভিযোগ ধূমায়িত হয়ে উঠেছিল। আর রক্ষণশীল সাহিত্য গোষ্ঠী তাঁদের বিরুদ্ধে লেখনী ধারণ করেছিলেন। তবে সেদিন সাহিত্যিক গোষ্ঠীর আক্রমণের প্রধান লক্ষ্য আধুনিক গোষ্ঠী হলেও তাঁদের দলনেতা বুদ্ধদেব বসুই ছিলেন বিতর্কের মুখ্য লক্ষ্য স্থল। আর এরূপ অবস্থায়-

          বুদ্ধদেব বসু ছিলেন ইংরেজি সাহিত্যের যশস্বী অধ্যাপক। যিনি জীবনের শেষ পর্বে ছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্যের অধ্যাপক। শুধু তাই নয়, সেকালের বিখ্যাত প্রগতি ও কবিতা পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন তিনিই। তবে এখানে তিনি থেমে থাকেননি, আমেরিকা ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় সাহিত্য বিষয়ে তিনি বক্তৃতাও দিতে যেতেন। বলা যায় সাহিত্যের সকল শাখায় তিনি সমানভাবে পদচারণা করেছেন এবং পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। আর রবীন্দ্রনাথ তাঁর কবিতার প্রশংসা করে বলেছেন-

   "এই রচনাগুলি জলভরা ঘন মেঘের মতো                     যার ভেতর সূর্যের আলোর রক্তরশ্মি বিচ্ছুরিত।"

           আসলে তিনি প্রগতি পত্রিকায় আধুনিক কাব্য যজ্ঞের অগ্নি প্রজ্বলিত করেছিলেন। যেখানে নানা বাধাবিঘ্ন সত্ত্বেও সারাজীবন তিনি নিষ্ঠাভরে অগ্নিরক্ষা করে চলেছিলেন। আর সেই সূত্র ধরে তিনি অজস্র কবিতা রচনা করেছেন। তবে একমাত্র কবিতার জন্যই ২০ বছরের অধিককাল পত্রিকা প্রকাশ করে চলেছেন ও কাব্য আলোচনা মাধ্যমে আধুনিক বহু কবিকেই রসিক সমাজে পরিচিত করেছেন। সৃজন করেছেন অসংখ্য কাব্যগ্রন্থ। আর সেই সব কাব্যগ্রন্থের মধ্যে অন্যতম কাব্যগ্রন্থ হল-

   বন্দীর বন্দনা(১৯৩০), কঙ্কাবতী(১৯৩৭),                         দময়ন্তী(১৯৪৭),দ্রৌপদীর শাড়ি(১৯৪৮),                         শীতের প্রার্থনা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

    আধুনিক প্রতিভার নির্ভুল সাক্ষ্য তাঁর প্রথম প্রখ্যাত 'বন্দীর বন্দনা' এই প্রেমেরই বিদ্রোহকাব্য। বিদ্রোহী যৌবন বসন্তের কবি বুদ্ধদেব প্রেমের যে রূপ আঁকলেন তা বাংলা কাব্যে যথার্থই আধুনিক। তাঁর সমগ্র কাব্যকলা নানা আবর্ত সংকুল প্রেম বিকাশ ও পরিণামের একটি তীব্র আনন্দ বেদনাময় অন্তনাট্যৈর ছন্দোরূপ। সামগ্রিক কবি জীবনের সৃষ্টি যে যৌবন স্বপ্নে তিনি আকুল হয়েছেন অবিরাম, তার লক্ষ্যে ছিল নারী ও কবিতা তুল্যরূপেই। কাব্যগ্রন্থ 'স্বাগত বিদায়' "এর 'সন্ধিলগ্ন' কবিতায় বুদ্ধদেব লিখেছেন-

     "যৌবনে ভেবেছিলাম কবিতায় প্রেম...                             কিন্তু অন্য ধারনা সম্প্রতি                                               মাঝে মাঝে হানা দেয় আমাকে-বিশেষ ভাবে।"

       বুদ্ধদেবের কবিতা রবীন্দ্রোত্তরণের সেই সন্ধিলগ্নে নব যৌবনের প্রেমের তীব্র আর্তি, বাস্তবতা ও মদিরতাকে বুকে গ্রহণ করেছে একান্ত সত্য রূপে। তাই রবীন্দ্রনাথ সম্বন্ধে বুদ্ধদেবের যদিও মনে হয়েছিল-

      রবীন্দ্র কাব্যে বাস্তবের ঘনিষ্ঠতা নেই সংরাগের তীব্রতা নেই, নেই জীবনের জ্বালাযন্ত্রণার চিহ্ন, মনে হল তাঁর জীবনদর্শনের মানুষের অনতিক্রম্য শরীরটাকে তিনি অন্যায়ভাবে উপেক্ষা করে গেছেন। যেখানে তিনি 'শীতের প্রার্থনা বসন্তের উত্তর' কাব্যে এই সত্যটিকে সুন্দরভাবে প্রকাশ করেছেন।আসলে-

      'বন্দীর বন্দনা' কাব্যের মূল কথা ছিল সৌন্দর্যের উপলব্ধিতে নিজের ভিতর যত বাধা, যত মানসিক প্রলোভন ও দুর্বলতা তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। আর সেই বিদ্রোহের ফসল হিসেব দেখা গেল তাঁর কাব্য ও কবিতায় প্রেমের উদ্দামের পরিবর্তে প্রেমের দর্শন চিন্তা। তাই তিনি রোমান্টিক কবি শিল্পীর সত্তায় অবিচলভাবে বিশ্বাসী। আর সেই বিশ্বাসের উপর ভর করে সাহিত্যের সকল প্রাঙ্গনে তাঁর অভিনন্দিত সাফল্য। তাই-

"যার সম্বল কেবল শব্দ, কাকে বাধ্য হ'য়ে                 শব্দেই চালাতে হবে সব কাজ-যতই কঠিন মনে হোক। তাই আমি অবিরল পরিশ্রমী।"

          রবীন্দ্রোত্তর আধুনিক বাংলা কাব্যের সাধন ক্ষেত্রে বুদ্ধদেব বসু সর্বতোভাবে প্রেমের কবি। যৌবন বসন্তের কবি হিসেবে আবির্ভূত। তবে বুদ্ধদেবের সুদীর্ঘকালের কবিতা রচনার একটি বিষয়-প্রেম। তাই বুদ্ধদেব বসুকে বলতে শুনি-

   "যা লিখেছি সবই ভালোবাসার কবিতা।"

      সেই কবিতার মধ্যে আছে উন্মাদনা, বসন্তের সুতীব্র বেদনা, আছে জীবন বসন্তের স্মৃতি,যা মমতাময়, স্পর্শকাতর। আসলে তিনি সমগ্র কবিতাবলী পর্যায়ক্রম প্রেমতন্ময়তার বিভিন্ন স্তরে তুলে ধরেছেন। আর সেখানে প্রেমোচ্ছল কাব্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিতা হল 'শেষের রাত্রি'। আর কাব্যগ্রন্থটি হল 'শেষ কবিতা'। যেখানে আবেগ, কল্পনা, রূপকর্মের সৌন্দর্য প্রতিফলিত। মোটকথা হলো, একাগ্র নিষ্ঠায় অনান্যমনা হ'য়ে কাব্য সৃষ্টির সাধনায় কবিদের মধ্যে বুদ্ধদেব বসু অদ্বিতীয়।




Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...