Skip to main content

কবি কিটসের (6th.Sem) কাব্য প্রতিভা আলোচনা করো।

কবি কিটসের কাব্য ও কবিতা আলোচনা করে তাঁর কাব্য প্রতিভা আলোচনা করো(ষষ্ঠ সেমিস্টার, বাংলা অনার্স CBSE)

           আলোচনা শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, ইংরেজি সাহিত্যের একজন অন্যতম রোমান্টিক কবি হলেন জন কিটস। শুধু তাই নয়, তিনি অন্যতম একজন দ্বিতীয় প্রজন্মের রোমান্টিক কবিও ছিলেন। তবে তৎকালীন সমালোচকদের দৃষ্টিতে তার কবি খ্যাতি এবং তার কবিতা খুব বেশি মর্যাদা পায়নি। কিন্তু উনিশ শতকের শেষ দিকে তিনি অন্যতম জনপ্রিয় ইংরেজি কবি স্বীকৃতি পান।যা ইংরেজি সাহিত্যে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা বলা যেতে পারে। কারণ এই সাহিত্যিক পরবর্তী সময়ে অসংখ্য কবি সাহিত্যিকের উপর প্রভাব করেছিল। কিন্তু-

       কিটস সময় প্রবাহের দুর্যোগ দুর্বিপাকের মধ্যেও নিয়ন্তর সন্ধান করেছেন চিরন্তনের, অমরত্বের। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনের ধারাবাহিক বিপর্যয় তাঁর শারীরিক ও মানসিক ভারাক্রান্ত করেছিল বটে কিন্তু মৃত্যুর ছায়াপড়া জীবনের তরুণ কবি অনন্ত তথা সুন্দরের ভাবমূর্তি ফুটিয়ে তুলেছেন কবিতায়, শিল্পের মাধুর্যে। যেখানে তাঁর কাব্য সাহিত্যের কেন্দ্রীয় বিষয় হলো অপূর্ণতা ও অবিনশ্বর সৌন্দর্য। তবুও তার কাব্যের মধ্যে আত্মবিলাপের কোন চিহ্ন নেই। বরং কল্পনার আকাশ থেকে তিনি ফিরে এসেছেন এই বাস্তব জগতে, উপলব্ধি করেছেন সরল রৈখিক মানব জীবনে ক্ষয় ও মৃত্যুর অনিবার্যতা। আসলে তিনি সৌন্দর্যের সন্ধান ও ইন্দ্রিয়ময়তাকে শিল্প সুসমার এক ঈর্ষণীয় উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন। আর এখানে ছিল চিত্রকল্পের দক্ষতা ও ছন্দ তথা ধ্বনির অনুপম মাধ্যম।তবে-

         কিটসের সমস্ত রচনার মধ্যে তার ওডগুলি সর্বশ্রেষ্ঠ। তবে এখানে বলে রাখার দরকার যে, তিনি যদি তার ওডগুলি লিখে আর কিছু না লিখতেন তাহলেও কবি হিসেবে ভবিষ্যতে তাঁর সমান স্বীকৃতি থাকতো। কল্পনা এবং আবেগের অপূর্ব সমন্বয় এবং বেদনা বিহ্বল চিত্তের অবর্ণনীয় প্রকাশ তার ওডকে মহিয়ান করে তুলেছে। তবে যখন মৃত্যুর পদধ্বনি সুস্পষ্ট শোনা গিয়েছিল, প্রেমের শিখা যখন নির্বোণোন্মুক, জীবন যখন সুখিয়ে এসেছে, তখন কি কি সূরা রসে জারিত ওডগুলি রচিত হয়েছিল। আর এই ওডগুলি তাঁকে মৃত্যুঞ্জয় করে রেখেছে। কিন্তু তিনি এই উড রচনায় কারো কাছে ঋণী নয়। তবে তার কবিতায় স্কুল বৈশিষ্ট্য গুলি লক্ষ্যণীয় সেগুলি হল-

•প্রকৃতি প্রেমঃ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের রূপময় ও বর্ণময় ছবি কবি কিটসের কবিতায় বড় আকর্ষণ। তবে তিনি ওয়ার্ডস ওয়ার্থের মত প্রকৃতির বাহ্যরূপের গভীরে কোন অন্তর্জীবনের সন্ধান করেননি। আবার তিনি বিশ্ব প্রকৃতির রূপ বৈচিত্র্যের ঊর্ধ্বে কোন দর্শন লোকের উদ্দেশ্যে ধাবিত হতে চাননি। তাই তার কাব্য কবিতায় প্রকৃতির চিত্ররূপময় জগত নিবিড় ইন্দ্রিয়গ্ৰাহ্যতায় চিত্রিত।

•সৌন্দর্য চেতনাঃ কাব্য সাধনায় সৌন্দর্য ছিল কিটসের ধ্রুবতারা। তাই তিনি শিল্পে বা প্রকৃতিতে কিংবা প্রেমে নিরন্তর সন্ধান করেছেন সৌন্দর্যের। যেখানে রূঢ় বাস্তবের দুর্দশা পীড়নকে বিস্তৃত হতে তিনি কল্পনার আশ্রয় নিতে চেয়েছেন। আশ্রয় নিতে চেয়েছেন মধ্যযুগীয় রোমান্স আর গ্রিক পুরাতত্ত্বের জগতে। আর সেখানে ধর্মীয় কিংবা সামাজিক দর্শন চিন্তার মাধ্যম রূপে নয়, কবিতাকে কিটস দেখেছিলেন সৌন্দর্য প্রীতির প্রকাশরূপে। তবে কবিতার প্রচার মুখীনতার ঘোর অপছন্দ ছিল এই কবির।

•চিত্ররূপময়তাঃ কবি কিটসের কবিতার জগত এক আশ্চর্য চিত্ররূপময় জগত। যে জগত শব্দচিত্রের এমন সুন্দর ও সজীব ভান্ডার রোমান্টিক কাব্যে বিরল। বলা যায় শেলীর বিমূর্ততা কিটসের এই সকল ছবিতে নেই। তাঁর চিত্র কল্পগুলি আবেগময়, মূর্ত ও ইন্দ্রিয়ঘন।

         পরিশেষে বলা যায় যে, কিডস এর ভাষার মধ্যে যথার্থ আনন্দ সম্ভোগের একটি আন্তরিকতা আছে। তাই তার সমগ্র ইংরেজি সাহিত্য তথা বিশ্ব সাহিত্যে চির অমর আসনে আজও অধিষ্ঠিত। আসলে তিনি সৌন্দর্যময় কাব্য কবিতার জগতে মূল পথিকৃৎ। আর এই কারণেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন-

 “আমি যত ইংরাজ কবি জানি সবচেয়ে কিটসের  সঙ্গে আমার আত্মীয়তা আমি বেশি করে অনুভব করি।”

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...