Skip to main content

কালিদাসের (6th.Sem) নাট্য কৃতিত্ব আলোচনা করো।

কালিদাস রচিত নাটকগুলির নাম লেখো। উক্ত নাটকগুলির মধ্যে কোনটিকে তুমি শ্রেষ্ঠ বলে মনে করো, সে সম্পর্কে আলোচনা করো।

        আলোচনা শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, সংস্কৃত সাহিত্যে কালিদাস অতুলনীয় কবি।শুধু মাত্র কবি নন, তিনি সংস্কৃত সাহিত্যের একজন অতি পরিচিত নাট্যকার। বলা যেতে পারে ভারতবর্ষের সাহিত্য বিশ্বে যে খ্যাতি লাভ করেছিল তা তাঁরই সাহিত্য রচনার মধ্যে দিয়ে, বিশেষ করে নাট্য রচনার মাধ্যমে।আর সেই নাট্যকারের অন্যতম বিশেষ, বিখ্যাত নাটক হলো 'অভিজ্ঞান শকুন্তলম্'। শুধুমাত্র অভিজ্ঞান শকুন্তলম নয়, তার অন্যান্য নাটকগুলি হলো-বিক্রমোর্বশী, মালবিকাগ্নিমিত্র। 

          •'অভিজ্ঞান শকুন্তলম্'নাট্যকার কালিদাসের শ্রেষ্ঠ রচনা। প্রেম ও সৌন্দর্যকে তিনি এই নাটকে এমনভাবে তুলে ধরেছেন যে প্রত্যেক পাঠকই এই নাটকটি পড়ে মুগ্ধ না হয়ে পারবেন না। তবে প্রেম এখানে শ্রেয়োবোধের দ্বারা পরিশলিত হয়ে পবিত্ররূপ ধারণ করেছে। তাই প্রেম এখানে শুধু সম্ভোগের বস্তু বলে গণ্য হয়নি। তবে-

     অভিজ্ঞান শকুন্তলম্ নাটকের কাহিনী নাট্যকার গ্রহণ করেছেন মহাভারতের আদিপর্ব এবং পদ্মপুরাণ থেকে। তবে এখানে বলে রাখা ভালো যে, তিনি মহাভারতের এবং পদ্মপুরাণ থেকে কাহিনী গ্রহণ করলেও কাহিনীর মধ্যে নাটকীয় সুক্ষরসের আমদানি করেছেন, যা তাঁর একান্ত নিজস্ব। শুধু তাই নয়, মহাভারতে দুর্বাসার অভিশাপ নেই, এটি নাট্যকারের উদ্ভাবনা এবং এই উদ্ভাবনে দেখানো হয়েছে ভোগে নয়, ত্যাগেই মঙ্গলকে পাওয়া যায়। যার ফলে তাঁর নাটকে প্রেম অপেক্ষা প্রেমের কামনা যুক্ত হয়েছে। তবে -

          আমরা বলতে পারি অভিজ্ঞান শকুন্তলা কালিদাসের শ্রেষ্ঠ রচনা প্রেম ও সৌন্দর্যকে তিনি নাটকে উপস্থাপিত করেছেন একান্ত নিজস্ব বৈশিষ্ট্যগুনে।‌ যার ফলে তাঁর নাট্যেৎকর্ষ এবং কবিত্ব পাঠকের মনকে জয় করে নিয়েছেন। আসলে শকুন্তলায় যা কিছু বাস্তব রসের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়; কালিদাসের কালে সমাজে কি চেহারা ছিল-তারও কিছু ছবি শকুন্তলা নাটকের দেখা যায়। রাজপ্রাসাদে দ্বারপালের উৎকোচ গ্ৰহণের বিষয়টিও তাঁর দৃষ্টি এড়ায়নি। আসলে বাস্তব জগতের প্রতি কালিদাস দৃষ্টি দিয়েছেন এবং জাগতিক ঘটনার কিছু কিছু বিচার বিশ্লেষণ করেছেন,যা নাট্যকারেরাই করে থাকেন। তবে-

          প্রসঙ্গত বলা দরকার যে,কালিদাসের মধ্যে নাটকাবলীর অভিনেতা গুণ একটু কম ছিল। তাঁর কোন নাটকেই ঘটনার দুর্বার গতি নেই, শুধু আবেগের সুক্ষতাই সেখানে মুগ্ধ হয়ে উঠেছে। তবে শকুন্তলাতে যে প্রেমের পরিচয় পাওয়া যায় তাতে বাস্তবতার যোগ নেই প্রায় বললেই চলে। অবশ্য প্রেম লিরিক কাব্যেরই বর্ণিতব্য বিষয়। কালিদাসও লিরিক রসের মাধ্যমে কিছু শ্লোকের সাহায্যে এই প্রেমের আবেগ পাঠক তথা দর্শকের সামনে তুলে ধরেছেন।সেই জন্য তাঁকে নাট্যকার অপেক্ষা কবি হিসেবেই সমালোচকরা বড় বলে ভেবেছেন।

         কালিদাসের সর্বশ্রেষ্ঠ নাটক অভিজ্ঞান শকুন্তলম্। যেখানে শকুন্তলার জীবন কাহিনী অবলম্বন করে তিনি এই নাটকটি রচনা করেছেন। একতা সম্রাট দুষ্মন্ত উপলক্ষে কণ্বমুনির আশ্রম সীমান্তে উপনীত হয়ে মহর্ষির আতিথ্য গ্রহণ করেন। তখন অবশ্য মহর্ষি কন্ব আশ্রমে ছিলেন না। যেখানে দুষ্মন্ত শকুন্তলার রূপ লাবণ্য বিমোহিত হয়ে তার জন্ম বৃত্তান্ত জেনে গান্ধর্ব মতে বিবাহ করেন। বিবাহের পর রাজনীতিতে নিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দিয়ে দুষ্মন্ত ফিরে যান। কিন্তু-

      শকুন্তলা দুষ্মন্তের চিন্তায় একদা ভাবতন্ময় হয়ে পড়েন। ঠিক সেই সময় ঋষি দুর্বাসার আগমন ঘটলেও তাঁর আহ্বান শকুন্তলা শুনতে পাননি। ঠিক সেই সময় দুর্বাসা তাকে অভিশাপ দেন যে, যার জন্য সে এতই ভাবতন্ময় হয়ে পড়েছে সে তার জীবন থেকে বিস্মৃত হবে। এই সময় শকুন্তলার সখী অনুসূয়া ও প্রিয়ম্বদা ঋষিকে  তুষ্ট করে অভিশাপ খন্ডনের একটি উপায় জানতে পারেন। আর সেই উপায়টি হলো শকুন্তলা যদি কোন অভিজ্ঞান দেখাতে পারেন তবে রাজার তাঁকে মনে পড়বে। এদিকে সন্তানসম্ভবা হয়ে পতিগৃহে যাওয়ার সময় নদীতে রাজা দুষ্মন্তের দেওয়া আংটিটি আঙ্গুল থেকে খুলে পড়ে যায়।তবে-

              সঠিক সময়েই শকুন্তলা কোন অভিজ্ঞান দেখাতে না পারায় অপমানিত হয়ে রাজসভা থেকে বিতাড়িত হন। অবশেষে তিনি কশ্যপমুনির  আশ্রমে আশ্রয় লাভ করার পর এক সন্তানের হয়। তিনি হলেন ভরত। নানা ঘটনা প্রবাহের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া শকুন্তলার আংটি টি রাজা দুষ্মন্তের হাতে এসে পৌঁছায়। অতঃপর দুষ্মন্তের পূর্বের সব কথা মনে পড়ে। কিন্তু নানা খোঁজাখুঁজির পরেও তিনি শকুন্তলাকে ফিরে পেলেন না। অতঃপর অসুর দমন করে স্বর্গ থেকে প্রত্যাবর্তনের সময় কশ্যপমুনির আশ্রমে উপনীত হয়ে একটি দুরন্ত বালকের হাতের রেখা প্রত্যক্ষ করে ভাবলেন এ নিশ্চয়ই কোন সৌভাগ্যবান রাজার তনয়। আর সেই তনয় ভারতের সূত্র ধরে রাজা দুষ্মন্ত  ও শকুন্তলার পুনর্মিলন ঘটে। 

        নাটকটির মধ্যে ভাবাবেগ এবং রসসৃষ্টির উৎকর্ষতা সম্পর্কে  সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। কারণ নাটকটিতে তিনি প্রকৃতির যে সজীবতা এবং প্রকৃতির সঙ্গে মানবহৃদয়ের  অবিচ্ছেদ্য সম্বন্ধ, তা তিনি শকুন্তলা নাটকের মধ্যে তুলে ধরেছেন। যার মধ্যে দিয়ে নাট্যকারের গার্হস্থ্য জীবনবোধ ও পরিমিতি বোধের পরিচয় দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, চরিত্র সৃষ্টিতে তিনি স্বাতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের পরিচয় দিয়েছিলেন,যা নাট্য সাহিত্যের ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা। এদিক থেকে বিচার করলে অবশ্যই বলা যায় যে অভিজ্ঞান শকুন্তলম্ নাটকটি নাট্যকার কালিদাসের অনন্য সৃষ্টি এবং তিনি অনন্য নাট্যকার।

 

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...