নিরুপমার মৃত্যুর জন্য কে বা কারা দায়ী? আলোচনা করো।
আমরা জানি যে,দেনা ও পাওনা র সমন্বয় হলো দেনাপাওনা।আর দেনাপাওনা গল্পের মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথ এ সমাজের প্রতি তীব্র শ্লেষ বর্ষণ করেছেন। সেখানে আমরা দেখি রামসুন্দর মহাশয় পাঁচ ছেলের পর মেয়ে হওয়ায় তার নাম রাখলেন নিরুপমা।যে নামের মধ্যে আছে মমত্ববোধ, আদর,স্নেহ, ভালোবাসা। যেখানে-
নিরুপমা দেনাপাওনা গল্পের নায়িকা। যাকে কোন উপমা বা তুলনায় বাঁধা যায় না। সেই হলো নিরুপমা। রামসুন্দর মহাশয় অনেক দেখাশুনা করে পাত্র নির্বাচন করেছেন নিরুপমার জন্য। আর সেই পাত্র হলো রায় বাহাদুরের একমাত্র সন্তান। নিজের আর্থিক অবস্থার কথা না ভেবে তিনি পাত্রপক্ষের দাবি মত ১০ হাজার টাকা বরপন এবং অন্যান্য দামসামগ্রী দিতে রাজি হলেন। তবে তিনি যাবিতীয় সম্পত্তি বিক্রি করেও তিন চার হাজার টাকার বেশি জোগাড় করতে পারলেন না। অতিরিক্ত সুদে টাকা নেওয়ার কথা ভাবলেও বিয়ের দিন তা জোগাড় করতে পারলেন না। ফলে-
রায় বাহাদুর সমস্ত টাকা না বুঝে পুত্রকে বিবাহ সভায় নিয়ে যেতে অসম্মত হলেন। আর এই কথা শুনে অন্দরমহলে কান্নার রোল পড়ে গেল। এমন পরিস্থিতিতে বরও পিতার কথা অমান্য করে নিরুপমাকে বিবাহ করতে এগিয়ে এলো। কোনরকমে নিরুপমার বিবাহ সম্পন্ন হল সেই রাতে। বিয়ের পর শ্বশুর বাড়িতে নিরুপমার উপর নানান মানসিক অত্যাচার নেমে আসে। অবহেলায় নিরুপমা দিনে দিনে শুকিয়ে যেতে থাকে। এরূপ অবস্থার মধ্যে নিরুপমা জানতে পারে ভাইদের পথে বসিয়ে বাড়ি বিক্রি করে বাবা বরপনের টাকা পরিশোধ করতে এসেছে। ঠিক এই সময়কালে-
নিরুপমার বিদ্রোহিনী সত্ত্বা জেগে ওঠে। সেভাবে এই টাকা দেয়ার ভিতর তার নারীত্বের অপমান লুকিয়ে আছে। আর এখানে নিরুপমা কে বলতে শুনি-
'আমি কি কেবল একটা টাকার থলি, যতক্ষণ টাকা আছে ততক্ষণ আমার দাম।"
এই কথা শুনে তার পিতা চলে গেলে নিরুপমার অপর মানসিক অত্যাচার দ্বিগুণ বেড়ে যায়। এখন নিরুপমার কাছে তার স্বামী নেই, বাপেরবাড়ির লোকজনদের আসার পথও বন্ধ। এদিকে নিরুপমা কঠিন রোগে আক্রান্ত। বলা যায় নিরুপমা অন্তিম শয্যায় শুয়ে জীবনের শেষ প্রহর গুনতে থাকে। এমন সময় প্রথম ডাক্তার এলো এবং সেটাই ডাক্তারের শেষ আসা। নিরুপমার মৃত্যুর পর তার শ্বশুর মশায় বাড়ির মর্যাদা রক্ষা করতে গিয়ে মহাসমারোহে পারলৌকিক কাজ সম্পন্ন করলেন।আসলে-
নিরুপমার মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে রবীন্দ্রনাথ অর্থলোলুপ সমাজে নারীরা অবস্থানকে তুলে ধরেছেন। যেখানে আমাদের এই সমাজ নিরুপমা কে বাঁচতে দেয়নি। আর সেই নিরুপমা কে নিয়ে এই গল্পে শোকের পরিবেশ ও ট্রাজিকরস সৃষ্টি হয়েছে। যেখানে নিরুপমার মৃত্যুর জন্য অনেকেই দায়ী। নিরুপমার পিতা রামসুন্দর এই মৃত্যুর দায় এড়াতে পারেন না। কারণ নিজের আর্থিক কথা না ভেবে বনেদী বংশের সাথে আত্মীয়তা করতে গিয়ে তিনি ভুল করেছেন। আবার-
রায়বাহাদুর তার শিক্ষিত পুত্রের শিক্ষাকে কটাক্ষ করেছেন। অন্যদিকে রায়বাহাদুরের পরোক্ষ মদত থাকার জন্য তার স্ত্রী নিরুপমার উপর নিদারুণ অত্যাচার করে। অর্থ মানুষকে কতটা মানুষকে নিচে নামিয়ে আনতে পারে রায় বাহাদুরের স্ত্রীর মধ্যে তার পরিচয় পাওয়া যায়। তাই নিরুপমার শাশুড়ি নিরুপমার মৃত্যুর জন্য প্রত্যক্ষভাবে দায়ী, তাই আমাদের এই সমাজব্যবস্থা।
(ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের SHESHER KOBITA SUNDORBON YOUTUBE CHANNEL)
Comments
Post a Comment