Skip to main content

হিন্দি ছোটগল্প নির্মাণে(6th.Sem) মুন্সি প্রেমচন্দের অবদান আলোচনা করো।

হিন্দি ছোটগল্প নির্মাণে মুন্সি প্রেমচন্দের অবদান আলোচনা করো (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় ষষ্ঠ সেমিস্টার বাংলা অনার্স CBSE)

                 আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, মুন্সী প্রেমচন্দ হিন্দি কথা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ রচয়িতা। শুধু তাই নয়, তিনি ছিলেন ভারতবর্ষের বিশিষ্টতম ঔপন্যাসিক এবং বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ছোটগল্প লেখকদের সমপর্যায় ভুক্ত। তার সাহিত্য পূর্ববর্তী যুগের সাহিত্য থেকে এক স্পর্ধিত ও দুর্বার ব্যতিক্রম। যেখানে-

          প্রেমচন্দের পূর্ববর্তী যুগের এবং অব্যবহিত আগের যুগের সাহিত্যে সাধারণভাবে বাস্তবতার প্রকাশ থাকলেও সমাজের সমস্যা গুলির প্রখর রূপায়ণ সেখানে ছিল না বা জীবনের গভীর প্রত্যয় সেখানে রূপায়িত হয়নি। আসলে সেই সকল সাহিত্যগুলি ছিল রোমান্টিক। যার ফলে জীবনের সাথে সেই সকল সাহিত্যের সম্পর্ক খুব কম ছিল।আর সেখানে-

           প্রেমচন্দর সাহিত্যে চলমান সমাজজীবনের শিল্পিত প্রতিচ্ছবি প্রকাশ হতে দেখা গেল। যেখানে তাঁর রচনা পূর্বযুগের সাহিত্য থেকে সরে এসে এক বিস্ময়কর সৃজনকর্মরূপে প্রতিভাত হয়েছে। যে সাহিত্য বাস্তবসম্মত, সমাজসচেতন, যুগ ও জীবনের যথার্থ প্রতিভাস এবং মানবহৃদয়ের উন্মোচনকারী এক মহান শিল্প। আসলে তিনি যথার্থই যুগশিল্পী, যার সাহিত্যে সমগ্র ভারতবর্ষ প্রকাশ পেয়েছে। প্রসঙ্গগত ড. রামবিলাস শর্মা বলেন-

      “হেমচন্দ্র কি আওয়াজ সুনকর হমে অপনে                     দেশ ঔর জনতা পর গর্ব হোতা হে,উস জাতীয়              সংস্কৃতি পর গর্ব হোতা হ্যায়…ইসলিয়ে প্রেমচন্দ              আজ ভী হমারে সাথ হ্যয়।”

          মুন্সি প্রেমচন্দ হিন্দি ছোটগল্পের ক্ষেত্রে আপনার অধিকার নিশংসভাবে প্রতিপন্ন করেছেন। আর এই কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছেন তিনি প্রায় ৩০০ছোটগল্প রচনার মধ্যে দিয়ে। তাই তাঁকে ভারতবর্ষের তো বটেই, বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গল্পকার রূপে অভিহিত করা যায়। তবে সব ধরনের সাহিত্য জীবন-জাত অবশ্যই, তথাপি গল্প সাহিত্যকে মানবজীবনে যথার্থ প্রতিবিম্বিত উদ্ভাসন বলা যায়। আর এদিক থেকে-

          মুন্সী প্রেমচন্দের সামাজিকতার প্রতিসর্গ রচনা এবং তা মানবের অন্তর সত্যেরও শিল্পিত রূপচ্ছবি হয়ে ওঠে। শিল্পিত ছবি একুশ শতকেও তার জয়যাত্রা অব্যাহত রেখেছে। যা অনন্ত জীবনের শিল্পী বিবর্তনকালের নতুন সৃজনকলা, পরিপূর্ণ মহিমা এবং তীক্ষ্ণ ধারালো, গভীর ব্যঞ্জনাময়। সেই কারণে তার ছোট গল্প চিরকালের সম্পদ হয়ে উঠেছে। যেখানে-

        প্রেমচন্দ সমকালীন জীবনের কথা বলেছেন, ভারতবর্ষের কৃষক ও নিম্নবিত্ত সম্প্রদায়ের জীবনচিত্র তিনি অঙ্কন করেছেন, যা অনন্ত জীবনসত্য। আসলে তাঁর ছোটগল্পে মানুষের নিত্যকালীন হাসি কান্না,সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, মিলন-বিরহ, বিস্ময়কর রূপে পরিগ্রহ করেছে। তাই তিনি কালশিল্পী, মহাজীবনের তিনি মহাভাস্যকর, সত্যই তাঁর অন্বিষ্ট যা চিরন্তন ও চিরায়ত। তবে ভারতবর্ষে রবীন্দ্রনাথ ব্যতীত এমন গল্প কেউ লিখেছেন কিনা সন্দেহ। অন্তত শরৎচন্দ্র তাই মনে করতেন। একদা তিনি ‘সপ্তসরোজ’ গল্পগ্রন্থের ভূমিকা লেখার জন্য শরৎচন্দ্রকে অনুরোধ করলে তিনি জানালেন-

    “বাংলায় রবীন্দ্রনাথ ব্যতীত এমন গল্প আর কেউ লিখতে পারবে না। আপনার গল্পগ্রন্থের ভূমিকা লেখার যোগ্যতা আর যার থাক, আমার নেই।”

          শরৎচন্দ্রের এই কথা গল্পকার প্রেমচন্দের প্রতিভা ও মর্যাদার গৌরবময় স্বীকৃতি। শরৎচন্দ্রের মর্যাদাও এতে প্রতিপাদিত। প্রেমচন্দ সমকালীন হয়েও চিরকালীন, ভারতবর্ষ তাঁর শিল্পের প্রেক্ষাপট হলেও বিশ্বের সত্য সেখানে বিধৃত হয়েছে। আর সেই প্রেক্ষাপটে-

     প্রেমচন্দের ছোট গল্পগুলিকে পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, দেশপ্রেমমূলক ও মনোবিজ্ঞানসম্মত পর্যায়ে বিন্যস্ত করা যায়। তবে সেখানে কোন ভাবনাই একক বা স্বতন্ত্র নয়। সেখানে সেই ভাবনা পরস্পর সংযোগহীন অবস্থায় না থেকে একটি ভাব অন্যের সঙ্গে মিলেমিশে গেছে। যার ফলে তার প্রত্যেকটি গল্পের কাহিনী বিচিত্র ও বিভিন্ন আবেগ ও অভিপ্রায় অন্যতায় বিকশিত হয়েছে। আর সেই গল্পগুলি হল-

‘বড়ে ঘর কী বেটী’প্রেমচন্দের একটি অন্যতম পারিবারিক গল্প। যে গল্পে অভিজাত ঘরের মেয়ে আনন্দীর বিবাহ হয় একদা জমিদার কিন্তু বর্তমানে দুরবস্থায় পড়া এক পরিবারে। আনন্দী সব কিছু সহজভাবে মেনে নেয়। তবে একদিন তার দেবর লালবিহারী তার সঙ্গে অত্যন্ত খাওয়া খারাপ ব্যবহার করলে অভিমানী আনন্দী আহত ও ক্ষুব্ধ হয়। আর এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তার স্বামী শ্রীকন্ঠ স্ত্রীকে নিয়ে ঘর ছাড়া সিদ্ধান্ত নেয়। যৌথ একত্রিত এবং ভালোবাসায় গড়ে ওঠা পরিবারের ভাঙ্গন আসন্ন হয়ে ওঠে। শেষপর্যন্ত লালবিহারী তার ভুল বোঝে এবং আনন্দীও তার রাগ ও অভিমানকে দূরে সরিয়ে সবাইকে কাছে টেনে নেয়। প্রেমচন্দ্রের আদর্শবাদ ও যৌথ পরিবারের প্রতি অনুরাগ এই গল্পে সুন্দরভাবে প্রকাশ পেয়েছে।

       সামাজিক গল্পগুলির মধ্যে প্রেমচন্দের শিল্পচেতনার শ্রেষ্ঠ প্রকাশ ঘটেছে। এই গল্পগুলিতে প্রেমচন্দ গ্রামীণ সমাজের চিত্র অঙ্কন করেছেন। যার মধ্যে আছে জমিদার, মহাজন, প্রশাসন ইত্যাদির নির্মম নিষ্ঠুর অত্যাচার। যে অত্যাচারে দরিদ্র অসহায় কৃষক সম্প্রদায়ের জীবন সর্বনাশের অতলে তলিয়ে যায়। শুধু তাই নয়, তাঁর সামাজিক গল্পগুলিতে ভারতবর্ষের নিম্নবর্গীয় মানুষের জালা-যন্ত্রণা, বেদনাদাহ যথাযথ রূপ পেয়েছে। যেখানে-

‘সদগতি’প্রেমচন্দের অন্যতম একটি সামাজিক গল্প। যে গল্পে অস্পৃশ্য মানুষদের উপর ব্রাহ্মণ্যসমাজের মর্মান্তিক আঘাত ও নিচুতলার মানুষদের শোচনীয় পরিনাম হৃদয়বিদারক রূপ পেয়েছে। যেখানে দুখী চামার মেয়ের বিয়ের দিন স্থির করার জন্য খাসিরাম পন্ডিতের কাছে যায়। আর পন্ডিত তাকে কাঠ কাটার নির্দেশ দিয়ে সারা শরীরে চন্দন মেখে পূজায় বসেন। দুখী সারাদিন কাঠ কাটার পর ক্লান্ত হয়ে অবশেষে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এবং সেখানে তার মৃত্যু হয়। পন্ডিতের এই চরম বর্বরতার বিষয়টি চামাররা মেনে নিতে পারে না। দুঃখীর মৃত্যু দেহকে অবশেষে পন্ডিত পায়ে দড়ির ফাঁস লাগিয়ে বাইরে বের করে নিয়ে আসে। অবশেষে শকুন, কাক আর কুকুরদের ভোজ হয় দুঃখী।আজীবন সৎ ভক্তিমান সেবারত দুখী এভাবেই লাভ করল সদগতি।

          পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, প্রেমচন্দ একান্তভাবে নিজের জীবন দিয়ে অনুভব করেছিলেন তৎকালীন সমাজের কিছু ক্ষতবিক্ষত বিষয়কে। আর সেই ক্ষতবিক্ষত স্থানে আপন সংবেদনশীলতার কোমল লেখনি স্পর্শ বুলিয়ে তিনি আমাদের চোখ খুলে দিয়েছেন। এছাড়াও তিনি অনাগত কালের পাঠকদের সামনে উপস্থাপন করেছেন কিছু সামাজিক সমস্যা। শুধু উপস্থাপন করেননি সেগুলি সমাধানের পথও তিনি বলেছেন। আসলে তাঁকে প্রকৃত সমাজ সংস্কারকের ভূমিকাতেও আমরা দেখতে পাই। তাই তাঁর গল্পগুলি হয়ে উঠেছে জীবনের যথার্থ প্রতিভাস।

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...