Skip to main content

ছায়াবাদের(6th.Sem) কবি হিসেবে মহাদেবী বর্মার কৃতিত্ব আলোচনা করো।

ছায়াবাদের কবি হিসেবে মহাদেবী বর্মার কৃতিত্ব আলোচনা করো(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় ষষ্ঠ সেমিস্টার বাংলা অনার্স)

আলোচনা শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, বেদনাবিধুর বিষাদের গভীর প্রকাশ পরিলক্ষিত হয় ছায়াবাদী কবিদের রচনায়। আর সেই বেদনাবিধুর বিষাদের ছবি আমরা দেখতে পাই মহাদেবী বর্মার রচনায়। আসলে মহাদেবীর ব্যক্তিগত জীবনের বিষাদময় পরিণতির প্রকাশ তাঁর কাব্যের ছত্রে ছত্রে প্রকাশিত। আর সেখানে তিনি মূলত গীতিকবি ছিলেন। তাই তাঁর কাব্যের প্রধান ভাব হলো প্রেম। তবে এক শ্রেণীর সমালোচক আছেন- যারা মহাদেবীর প্রেমের কবিতায় আধ্যাত্মিকতার রং চড়িয়ে দিতে বদ্ধপরিকর।তবে-

         আমরা জানি ভারতীয় গীতিকাব্য গড়ে উঠেছে প্রধানত প্রেমকে আশ্রয় করে। আর সেই প্রেমের যে দুটি ধারা আছে, সেই ধারাগলি হল পার্থিব প্রেম এবং অপার্থিব প্রেম। আর সেখানে রক্ত মাংসে গড়া মানবমানবীর হাসি অশ্রুভরা প্রণয় কাহিনীকে অবলম্বন করে পার্থিব প্রেম রচিত হয়। পাশাপাশি মানবপ্রেম যখন উচ্চতর ভূমিতে উন্নীত হয় তখন ভোগের জায়গা দখল করে নেয় ত্যাগ। অতঃপর আত্মকামনার জায়গা দখল করে আত্ম বলিদান।যে বিষয়টি আমরা কাব্যের ভাষায় বলে থাকি আত্মার মিলন। আসলে-

           আমরা ভক্তিপূত প্রেমের দুটি রূপ দেখতে পাই। যার একটি রূপ হল রাধাকৃষ্ণের প্রেম বা রামসীতার প্রণয় কাহিনী। আর অন্য আরেকটির রূপ হল ঈশ্বরের সাকার বা নিরাকার রূপের প্রতি শ্রদ্ধা বা ভালবাসা। আর এই নিরিখে-

          মহাদেবীর কাব্যের প্রধান বিষয় হল প্রেম ও সৌন্দর্য। জীবনের মধুর ও কোমল রূপকেই তিনি তাঁর কাব্যের প্রতিপাদ্য বিষয় হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। যার ফলে ছায়াবাদের গতিশীলতার ধারায় তাঁর গীতগুলি শরীরী মায়াকে অবলীলায় ত্যাগ করে বেরিয়ে এসেছে। আর সেখানে তাঁর সান্ধ্যগীতে সংকলিত কবিতাগুলি রমনীয় কাব্যকলার অত্যৎকৃষ্ট নিদর্শন রূপে পরিগণিত হয়েছে।আর সেখানে -

        মহাদেবীর বর্মার কাব্যের এক বিশাল অংশ জুড়ে আছে বিরহ বেদনা। তবে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের যে প্রেমধারনা, সেই প্রেমধারণার সাথে মহাদেবীর প্রেমধারণার মধ্যে যথেষ্ট ফারাক আছে। আসলে তাঁর আবেগতাড়িত মানবিক প্রেম এবং তত্ত্বগত দার্শনিক চেতনা মিলিত হয়ে তাঁর কবিতা গুলি দুরূহ হয়ে উঠেছে। তবে-

          মহাদেবী বর্মা প্রেমকে কামনাবিমুক্ত করে রাখতে চেয়েছেন। আর সেখানে তিনি মনে করতেন কল্যাণই হল প্রেমের চরম লক্ষ্য। তাই মানবজীবনের ব্যক্তিগত প্রেম এবং বিশ্বপ্রেমের নিবিড় সম্পর্ক তাঁর কাব্যে প্রতিধ্বনিত। আর সেখানে-

         মহাদেবীর কবিতা বিষাদের সিন্ধু। তাই বিরহ ও অতৃপ্তির বেদনা তাঁর কবি মনকে অত্যন্ত পীড়া দিত। আর সেই কারণে অনেকেই তাকে ‘ছায়াবাদের মীরা’ নামে আখ্যায়িত করতেন। তবে তাঁর বিশ্বাস ছিল যে, পৃথিবীর বেদনার সাথে নিজের বেদনাকে যদি মিলিত করা যায় তবে কবির মোক্ষ লাভ সম্ভব হবে।

        পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, মহাদেবী বর্মা এমনই এক কবি যিনি দুঃখের মধ্যে প্রিয়তমকে খুঁজেছেন আবার প্রিয়তমের মধ্যে দুঃখকে খুঁজে বেড়িয়েছেন। তাই তাঁকে বলতে শুনি-

       “পীড়া মেরে মানসমেঁ ভাগে পট সীলিপটি                        হই হ্যায়।”

অর্থাৎ তিনি বলতে চেয়েছেন যে,দুঃখ তাঁর মনকে ভিজে কাপড়ের মত জড়িয়ে আছে। আসলে ভারতীয় নারী জীবনের ব্যক্তিগত হতাশা জনিত অসন্তোষ এবং ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষাকে একাকার করে তিনি তাঁর কাব্যের সুর বেঁধেছেন। যার ফলে তিনি যথার্থভাবে দুঃখবাদের প্রবক্তারূপে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব। তাই বলা যায় মহাদেবী বর্মা হিন্দি সাহিত্যের ছায়াবাদী ধারার যথার্থ ‘মীরা’।

ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন SHESHER KOBITA SUNDORBON YOUTUBE CHANNEL ।



নোটস ১৮৫ পেজ

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...