মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভার উচ্চকক্ষ সিনেটের গঠন,ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলোচনা করো( পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার, রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)
• গঠনঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট, যার উচ্চকক্ষের নাম সিনেট এবং নিম্নকক্ষের নাম প্রতিনিধি সভা। যুক্তরাষ্ট্রীয় নীতি অনুসারে অঙ্গরাজ্য গুলির সমপ্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে সিনেট গঠিত হয়। আর সেখানে আয়তন ও জনসংখ্যা নির্বিশেষে প্রত্যেক অঙ্গরাজ্য দুজন করে প্রতিনিধি সিনেটে প্রেরণ করে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যের সংখ্যা ৫০ সেই হিসেবে সিনেটের বর্তমান সদস্য সংখ্যা হল ১০০। আর সেখানে বলা হয়েছে-
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের সদস্য হতে গেলে তাদের অবশ্যই ৯ বছর যাবৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হতে হবে। সেই সাথে তাদের বয়স ৩০ বছর হতে হবে এবং যে অঙ্গরাজ্য থেকে তিনি নির্বাচিত প্রার্থী হবেন তাকে সেই অঙ্গরাজ্যের নাগরিক হতে হবে।আর-
সিনেট যেহেতু সে রাষ্ট্রের একটি স্থায়ী সভা সুতরাং তাকে একেবারে ভেঙে দেওয়া যায় না। সিনেটের সদস্যগণ ৬ বছরের জন্য নির্বাচিত হন কিন্তু প্রতি দু'বছর অন্তর এক তৃতীয়ংশ সদস্য অবসর গ্রহণ করেন আর তাদের শূন্যস্থানে নতুন সদস্য নির্বাচন করা হয়।
•ক্ষমতা ও কার্যাবলী•
১) আইন বিষয়ক ক্ষমতাঃ সাধারণ বিলের ক্ষেত্রে মার্কিন কংগ্রেসের দুটি কক্ষ সিনেট ও প্রতিনিধি সভা সমক্ষমতা সম্পন্ন। কারণ এই সাধারণ বিল প্রতিনিধি সভার মতো সিনেটেও উত্থাপিত হতে পারে। আবার কোন বিল পাশের জন্য প্রতিনিধি সভার সমর্থনই যথেষ্ট নয়, সিনেটের অনুমোদনও অত্যাবশ্যক। আর সেখানে উভয় পক্ষের সমর্থন পেলে বিলটি কংগ্রেস কর্তৃক অনুমোদন হয়েছে বলে ধরা হয়। তবে প্রয়োজন বোধে সিনেট সেই বিলের পরিবর্তন বা পরিমার্জন করতে পারে।
২) অর্থ বিষয়ক ক্ষমতাঃ অর্থ সংক্রান্ত বিল বা বাজেট প্রথমে সিনেটে উত্থাপিত হয় না, প্রতিনিধি সভায় উত্থাপিত হয়। প্রতিনিধিসভায় অনুমোদনের পর বিলটি সিনেটে প্রেরিত হয়। সিনেট অর্থবিলের সংশোধন বা পরিবর্তন করতে পারে। বিলের শিরোনামটি ছাড়া সিনেট অর্থবিলের আমূল পরিবর্তন করতে পারে। সিনেট এই ক্ষমতার সুযোগে কার্যত একটি নতুন অর্থবিল উত্থাপন করার ক্ষমতা ভোগ করে থাকে।
৩) শাসন বিষয়ক ক্ষমতাঃ সরকারি কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রেও মার্কিন সিলেট ব্যাপক ক্ষমতা ভোগ করে থাকে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, পদস্থ কর্মচারী, রাষ্ট্রদূত প্রভৃতি উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারীদের নিয়োগের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত। তবে রাষ্ট্রপতি শাসন ও বিচার বিভাগের বিভিন্ন পদের যে সমস্ত নিয়োগ করেন তা সিনেটের অনুমোদন সাপেক্ষ। আসলে সিনেটই নিয়োগ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং রাষ্ট্রপতি সেই সিদ্ধান্তকে অনুমোদন ও কার্যকর করে থাকেন।
৪) পররাষ্ট্র বিষয়ক ক্ষমতাঃ রাষ্ট্রপতি সাধারণত বৈদেশিক ও সামরিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটি ও নেতৃস্থানীয় সিনেটদের সঙ্গে পরামর্শ করে থাকেন। কোনো বৈদেশিক রাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো বিষয় আলাপ-আলোচনার করার জন্য সিনেট রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ করতে পারে। আর রাষ্ট্রপতি সেই অনুরোধ রক্ষা করে উক্ত কাজ সম্পাদন করেন। তবে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সম্পাদিত যেকোনো বৈদেশিক চুক্তি বা সন্ধি সিনেটের অনুমোদন সাপেক্ষ।
৫) বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতাঃ সিনেট গুরুত্বপূর্ণ বিচার বিষয়ক ক্ষমতার অধিকারী। আর সেদেশের প্রতিনিধিসভা রাষ্ট্রপতি,উপরাষ্ট্রপতি এবং উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনতে পারে কিন্তু সিনেট সেই সকল অভিযোগের অনুসন্ধান ও বিচার করে থাকে। আসলে ইনপিচমেন্ট পদ্ধতিতে বিচার করার ক্ষমতা একমাত্র সিনেটৈরই আছে। এছাড়াও সরকারি কার্যকলাপ ও দুর্নীতির সম্পর্কে অনুসন্ধান করার ক্ষমতা সিনেট তদন্ত কমিশন গঠন করতে পারে। আবার সরকারি কর্মচারীদের কার্যকলাপ সম্পর্কে তদন্তের জন্য সিনেট তদন্ত কমিটি নিয়োগ করতে পারে।
৬) নির্বাচন সংক্রান্ত ক্ষমতাঃ মার্কিন সংবিধান অনুসারে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে কেউ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে সিনেট অধিক সংখ্যক ভোট প্রাপ্ত প্রথম দুইজন প্রার্থীর মধ্যে একজনকে উপরাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত করে থাকে।
ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন SHESHER KOBITA SUNDORBON YOUTUBE CHANNEL ।
Comments
Post a Comment