Skip to main content

বাংলার ইলিয়াস শাহী বংশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অবদান আলোচনা করো।

বাংলার ইতিহাস ইলিয়াস শাহী রাজবংশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব আলোচনা করো। •অথবা• বাংলার ইলিয়াস শাহী বংশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অবদান আলোচনা করো 

আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে,লখনৌতির শাসক হাজী ইলিয়াস শাহ দিল্লীর সুলতানদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ১৩৪২ সালে সোনার গ্ৰাম বা সোনার গাঁ অধিকার করেন। তিনিই বাংলায় বিখ্যাত ইলিয়াস শাহ রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন।আর-                                                                      

          বাংলার স্বাধীন শাসক হিসেবে ইলিয়াস শাহ্ কামরূপ, ওড়িশা, অযোধ্যা প্রভৃতি রাজ্য অধিকার করেন। ইলিয়াস শাহ এই সময়কালে তাঁর রাজধানী স্থানান্তরিত করেন। দিল্লির সুলতান ফিরোজ শাহ বঙ্গদেশ আক্রমণ করলে তিনি একডালাষ দুর্গে আশ্রয় নেন। অবশেষে ইলিয়াস শাহের সাথে ফিরোজ শাহের তুঘলক সন্ধি স্থাপিত হয়। আর সন্ধি স্থাপনের পর ফিরোজ শাহ দিল্লিতে ফিরে যাওয়ার পরই ইলিয়াস শাহ কামরূপ এবং সোনারগাঁও দখল করেন। তবে-

             ইলিয়াস শাহের মৃত্যুর পর তার পুত্র সিকান্দার দীর্ঘকাল বাংলার শাসক ছিলেন। কিন্তু তার শাসনকালেও ফিরোজ শাহ বঙ্গদেশ আক্রমণ করেন। তবে এবারেও ফিরোজ শাহ ব্যর্থ হন। অতঃপর বাংলার ইতিহাসে প্রায় ২০০ বছর ইলিয়াস শাহের রাজবংশের স্বাধীন শাসন কায়েম হয়েছিল। যেখানে -

             সিকান্দার শাহের মৃত্যুর পর তার পুত্র গিয়াসউদ্দিন আজমশাহ বাংলার স্বাধীন সুলতান হন। আর তাঁর সাথে ইরানের বিখ্যাত কবি হাফিজের যোগাযোগ ছিল। এই সময়কালে গিয়াসউদ্দিন কামরূপ ও কামতা রাজ্যের মধ্যে বিবাদের সুযোগ নিয়ে কামতা রাজ্য আক্রমণ করেছিলেন। পাশাপাশি গিয়াসউদ্দিন জৌনপুরের রাজার সাথে সুসম্পর্ক রেখেছিলেন। শুধু তাই নয়, চীনের সাথেও তাঁর দূত বিনিময় হয়েছিল। যার ফলে বঙ্গদেশ ও চীনের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। আর এই সময়ে মা-হুয়ানের বিবরণ থেকে জানা যায় যে, সেই সময়কালে বঙ্গদেশে নৌকা তৈরি, কার্পাস বস্ত্র শিল্প, রেশম শিল্প খুবই উন্নত ছিল। তবে সেই সময়ে বেশিরভাগ লোকই ছিল কৃষিজীবী। তবে-

       ইলিয়াস শাহ রাজবংশের শাসনকালে বাংলায় হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে একটা প্রীতিপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। পাশাপাশি চীন দেশের সাথে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তবে সেই সময় কালে চীনের রেশম বাংলাতে বেশ সমাদৃত ছিল। চীনের মিং সম্রাটদের বিবরণীতে জানা যায় যে, বাংলায় সেই সময়ে গ্রামে গ্রামে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে সহযোগিতার মনোভাব পড়ে ওঠে। তবুও এই সময়কালে ইসলামের বাণী অনেকের মনে নতুন প্রানের আশার সঞ্চার করেছিল। আর সে কারণে নিম্ন শ্রেণীর অনেকেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। শুধু তাই নয়, বাংলার কাব্যচর্চার ক্ষেত্রে নতুন প্রেরণার জোয়ার এসেছিল। যেখানে-

            ইলিয়াস শাহী রাজত্বকালে বঙ্গ দেশে যে শান্তি ও সমৃদ্ধির অগ্রগতির সূচনা হয়, তার ফলে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও বঙ্গদেশে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। সাহিত্য ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতার ক্ষেত্রে তারা যে ধারার প্রচলন করেছিলেন, বঙ্গদেশের ক্ষেত্রে তা সুবর্ণযুগ বলা যেতে পারে। ইলিয়াস শাহী বংশের রাজত্বকালেই বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের শৈশবকাল উত্তীর্ণ হয়। আর এ যুগেই চর্যাপদ থেকে শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন এর উত্তরণ ঘটেছিল। পাশাপাশি গীতগোবিন্দ, কুমারসম্ভব প্রভৃতি গ্রন্থের টীকা রচিত হয়। অতঃপর -

           রাজধানী পান্ডুয়া ও গৌড়কে চমৎকার অট্টালিকার দ্বারা শোভাময় করে গড়ে তোলা হয়েছিল। আর সুলতানদের নির্মিত মসজিদ ও সমাধিভবন ছিল বঙ্গদেশের স্থাপত্য শিল্পের উৎকৃষ্ট নিদর্শন। আর এই উৎকৃষ্ট নিদর্শন গুলি গৌড় ও পান্ডুয়াতে অবস্থিত ছিল।

           পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, ইলিয়াস শাহী রাজত্বকালে বাংলায় অতি দ্রুত সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল পরিবর্তিত হয়। তবে সেই সাথে শিক্ষাক্ষেত্রেও ইলিয়াস শাহ ী সুলতানরা অতি উৎসাহে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আর শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নতিতে ইউসুফ শাহ একটি কলেজও নির্মাণ করেছিলেন। তাই বলা যায় ইলিয়াস শাহী রাজত্বকাল বাংলাদেশের ইতিহাসে সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেছিল।

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...