মনসামঙ্গল কাব্যের(1st Sem )কাহিনী বা বিষয়বস্তু আলোচনা করো।
আলোচনা শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, মনসামঙ্গল কাব্যের প্রধান নায়ক চরিত্র চাঁদ সদাগর। যিনি চম্পক নগরের বিত্তশালী বণিক ছিলেন। আর সেই নগরে মনসা চাঁদ সদাগরের মাধ্যমে পূজা করতে চেয়েছিলেন। আসলে চাঁদ শৈব পূজারী, তাই তিনি মনসা পূজা করবেন না। কিন্তু মনসাও নাছোড়বান্দা। তাই চাঁদ ও মনসার দ্বন্দ্ব এবং পরিণামে মনসার জয়-এই হলো মনসামঙ্গল কাব্যের মূল কাহিনীর গঠন। আর সেই কাব্যে-
বণিক চাঁদ সদাগরের ছয় পুত্র, পুত্রবধূ সহ সুন্দর সুখের সংসার। শিবভক্ত চন্দ্রধর শিবের আশিসে 'মহাজ্ঞান কবচ' এর অধিকারী। অন্যদিকে মনসা দেবকন্যা হয়েও দেব সমাজে প্রতিষ্ঠা পেল না। শৈশবে বিমাতা তার চন্ডীর খোঁচায় তাঁর চোখ কানা হয়। এমনকি স্বামী জরৎকারুও তাকে ত্যাগ করেছেন। তাই শিব তাঁকে সিজুয়া পর্বতে থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন। আর সেখানে-
সিজুয়া পর্বতে মনসার সহচরী নেতা তাঁর সেবিকা ও সখি। একদিন মনসা স্বর্গের উদ্যানে সর্পশজ্জায় সজ্জিতা ছিলেন। এমন সময় চাঁদ শিব পূজার জন্য ফুল তুলতে সেখানে এলেন। চাঁদের ভয়ে সাপেরা পালিয়ে গেল। ফলে মনসা আবরণহীনা হয়ে পড়লেন। অবশেষে তিনি ক্রুদ্ধা হয়ে চন্দ্রধরকে মর্তে জন্মগ্রহণ করার অভিশাপ দিলেন। অভিশপ্ত হয়ে চন্দ্রধর মর্তলোকে চম্পক নগরে বিজয় সাধুর পুত্ররূপে জন্মগ্রহণ করলেন। এরপর একই উদ্দেশ্যে স্বর্গের নর্তকী ঊষা ও তার স্বামী অনুরুদ্ধকেও শাপগ্ৰস্ত হয়ে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করতে হলো।আর এই অনিরুদ্ধই জন্ম নিল লখিন্দর এবং উষা জন্ম নিল উজানী নগরে সায়বেনের ঘরে, নাম তার বেহুলা। অতঃপর-
চাঁদ সদাগর শিবের ভক্ত হওয়ার কারণে তিনি কিছুতেই মনসা পূজা করবেন না, কিন্তু তাঁর স্ত্রী সনকা লুকিয়ে মনসার পূজা করতে থাকেন। আর এই ঘটনায় চাঁদ সদাগর রুষ্ট হয়ে সনাকার পূজার ঘট লাথি মেরে ভেঙে দেন। অতঃপর শুরু হয় দেবী মনসার সাথে চাঁদের প্রত্যক্ষ সংগ্রাম। এখানে মনসার ক্রোধে চাঁদের গুয়াবাড়ি নষ্ট হয় এবং তাঁর ছয় পুত্র সর্পদংশনে প্রাণ হারান। এমনকি ব্যবসা-বাণিজ্যে তিনি সর্বস্বান্ত হলেন। পুত্রদের হারিয়ে চাঁদ সদাগর নিজে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলে তাঁর বাণিজ্যতরী দেবী মনসা ডুবিয়ে দিয়ে চাঁদ সদাগারকে সমুদ্রে ভাসিয়ে দেন। আর এভাবে সমুদ্রে ভাসতে ভাসতে চাঁদ সদাগর কুলে উপস্থিত হলে নানা পরীক্ষার সম্মুখীন তাকে হতে হয় এবং তিনি সব পরীক্ষায় দৃঢ়তার সাথে উত্তীর্ণ হন। অবশেষে তিনি ঘরে ফিরে আসেন।এমন বিষন্নতার মাঝে-
সনকার কোলে জন্ম নেয় সপ্তম পুত্র লখিন্দর। আর নবজাত পুত্রের মুখ দেখে চাঁদের মনে সব দুঃখ বিস্মৃত হয়। সেই পুত্র বয়ঃপ্রাপ্ত হলে বেহুলার সাথে বিবাহ হয়। আর বিবাহের রাত্রে দেবী মনসা কালিয়নাগকে পাঠিয়ে লখিন্দরকে দংশন করিয়ে বেহুলার মাথার সিঁদুর কেড়ে নেন। আর এখানে লক্ষিন্দর আর্তনাদ করে বলে ওঠেন-
"জাগ অহে বেহুলা সায়বেনের ঝি। তোরে পাইল কালনিদ্রা মোরে খাইল কি।।"
অতঃপর জেদি চাঁদ সদাগরের চোখের জল দেখে সতী বেহুলা স্বামীর মৃতদেহে প্রাণের সঞ্চার ঘটাতে বদ্ধপরিকর হলেন। অবশেষে বেহুলার দুঃখের সাধনা সফল হলো। দেবতারা বেহুলা স্বামীর জীবন ফিরিয়ে দিতে বললেন মনসাকে। তবে-
মনসা বেহুলাকে দিয়ে প্রতিজ্ঞা করিয়ে নিলেন যে, শ্বশুরকে দিয়ে মনসার পূজা করে নিতে হবে। বেহুলা সম্মত হলে লখিন্দর জীবন ফিরে পান। শশুরের নিমজ্জিত বাণিজ্যের নৌকাও ভেসে উঠল। এখানে বেহুলা শ্বশুরকে দিয়ে মনসার পূজা করাতে চাইলেন। আর সেই প্রস্তাব শ্বশুর চাঁদ সদাগর প্রত্যাখ্যান করে বলেন যে-
"যে হাতে পূজেছি আমি দেব শূলপানি। সে হাতে না পূজিব চেঙমুড়ি কানী।।"
কিন্তু শেষ পর্যন্ত বেহুলার কাছে তিনি পরাজয় স্বীকার করলেন। আর এই পরাজয় মানুষের কাছে পরাজয়,স্নেহের কাছে পরাজয়। কোন রকমে তিনি বাম হাতে মনসার পূজা করতে সম্মত হলেন। আর চাঁদ সদাগর পূজা করার কারণে দেবী মনসা উচ্চ সমাজে স্থান লাভ করলেন। এরপর ঊষা ও অনুরুদ্ধ (বেহুলা ও লখিন্দর) শাপের অবসানে স্বর্গে ফিরে গেলেন।
ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন SHESHER KOBITA SUNDORBON YOUTUBE CHANNEL
Comments
Post a Comment