হাম্বীরের রাজ্যলাভ গল্পে হাম্বির কীভাবে রাজা হয়ে উঠলেন, আলোচনা করো।(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার বাংলা মাইনর)
মহারাজা হাম্বির কৈলোরের কেল্লায় থাকাকালীন তাঁর আয়ত্তে ছিল বেশ কয়েকটি গ্রাম ও প্রায় ২০০০ রাজপুত সৈন্য। এই হাম্বিরের যেকোনো কারণে কৌলোরে এসে আশ্রয় গ্রহণ করেন। মহম্মদ খিলজর হয়ে চিতোরের সিংহাসনে বসে মালদেব মেবার শাসন করতেন। তবে-
মাতা লছমি ভেবেছিলেন হাম্বির হয়তো রাজ্য উদ্ধারের জন্য কোন কিছু করছে না। এখানে পুত্র হাম্বির প্রমাণ করেন যে, মাতা লছমির ধারণা সঠিক নয়। আর মায়ের আশা পূর্ণ করতে হাম্বির গোটা গ্রামকে দেওয়ালির সময় আলোয় পরিপূর্ণ করে দিলেন। আর গ্রামের এরূপ দৃশ্য দেখে হাম্মিরের মা একটু অবাক হলেন বটে। কারণ সেখানে সে গ্রামের লোকেদের জন্য ও ভীলদের জন্য প্রদীপ ও তেলের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। এই প্রদীপ জ্বালিয়ে গোটা গ্রামের লোক আনন্দে মেতে উঠলেন।তবে-
হাম্বির এই গ্রামটির একটি নতুন নাম দেওয়ার চেষ্টা করলে মা লছমি জানায় শুধু গ্রামের নতুন নাম নয়, সেই সাথে একটি লক্ষ্মী বউও আনতে হবে। মাতা পুত্রের এই কথোপকথনের মাঝে মালদেব চিতোর থেকে দূতের খবর পাঠায় যে, তার মেয়ের সাথে হাম্বিরের বিয়ের প্রস্তাব। এই প্রস্তাবের মাধ্যমে তাদের বিয়ের ব্যবস্থা ঠিক হয়। অবশেষে হাম্বিরের বিয়ের দিন বেশ কিছু সৈন্যসহ বরযাত্রীর দল চিতোরের অভিমুখে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু-
গোটা বরযাত্রীর দল চিতোরের অভিমুখে রওনা হয়ে দেখল যে, সেখানে কোন অনুষ্ঠানের আভাস পাওয়া যাচ্ছে না। শুধু তাই নয়, গোটা দুর্গ চুপচাপ। এই বিষয়টি দেখে সকলেই প্রায় ভয় পেয়ে গেল। কিন্তু হাম্বির বিন্দুমাত্র ভয় পেল না। সে সরাসরি দুর্গের মধ্যে প্রবেশ করে। কারণ হাম্বির জানায় নিজের কেল্লায় প্রবেশ করতে অনুমতির প্রয়োজন নেই। ঘটনাক্রমে এখানে মালদেব এসে জানায় যে-এ দুর্গ হাম্বিরের, তবে প্রবেশ করতে বাধা কোথায়?
অবশেষে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে মালদেবের কন্যা কমলকুমারীর সাথে হাম্বিরের শুভ বিবাহকার্য সুসম্পন্ন হল। এই ঘটনার বেশ অনেকদিন পর চিতোরের কেল্লায় মঙ্গল শঙ্খ বেজে ওঠে। কমলকুমারীর বিয়ের দু'বছরের মধ্যে হাম্বির চিতোর কেল্লা দখল করে নিলেন। হাম্বির চিতোর দখল করলে মালদেবের পুত্র রণবীর বেশ ক্ষুব্ধ হয়। কারণ-
রণবীর ভেবেছিল পিতার অবর্তমানে সে রাজ্য চালাবে। কিন্তু বিষয়টি অন্যরকম হওয়ার কারণে রণবীর এই খবরটি নিয়ে দিল্লির নবাব মহম্মদ খিলজির কাছে যায়। অবশেষে দিল্লির নবাব চিতোরের দিকে রওনা হলেন। কিন্তু হাম্বিরের রাজপুত সৈন্যদল পাঠান সর্দারকে পরাস্ত করে। অতঃপর হাম্বির মহম্মদ খিলজী এবং রণবীরকে বন্দী করে চিতোরের কেল্লায় নিয়ে আনলেন। যেখানে -
হাম্বির চিতোর থেকে কৈলোরে এসে নিশ্চিন্তে জীবনযাপন করতে থাকেন। কিন্তু তাঁর মা লছমি তাঁকে জানায় এইভাবে জীবন-যাপন নয়, চিতোরের সিংহাসনে বসতে হবে। শুধু চিতরের সিংহাসনে বসলে হবে না, চিতোর থেকে যে রাজমুকুট চুরি হয়ে গিয়েছিল সেটি উদ্ধার করতে হবে। সেই সাথে ভবানী মায়ের হাতের খাঁড়া খুঁজে পেতেই হবে। আর এই দুটি কাজ সুসম্পন্ন করতে পারলে তবেই তাঁর সিংহাসনে বসা সম্ভব। এখানে মা লছমি হাম্বিরকে জানায়-
“ভবানী মায়ের খাঁড়া যতদিন না খুঁজে পাচ্ছে ততদিন সে সিংহাসনে বসবে না।”
হাম্বির মায়ের এই কথা শুনে কমলকুমারীকে সাথে নিয়ে সূর্যাস্তের পরে খাড়া খোঁজার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। পথে নানা বাধা-বিপত্তির মধ্যেও হাম্বির ভবানী মায়ের খাঁড়া উদ্ধার করলেন। অতঃপর তিনি সেই খাড়া হাতে নিয়ে চিতোরের সিংহাসনে বসেন। সিংহাসনে বসার পর দিল্লির বাদশা মহম্মদ খিলজি হাম্বিরকে পঞ্চাশ লক্ষ মোহর দেবেন বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলেন। অবশেষে-
মহম্মদ খিলজিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আর কমলকুমারীর দেখানো পথে হাম্মির ভবানী মায়ের খাঁড়া খুঁজে পেলে তারই কথামতো ভাই রণবীরকে ছেড়ে দিতে হলো। অতঃপর কৈলোরের কেল্লার নাম করা হয় কমলমীর। হাম্বির চিতোরের সিংহাসনে বসলেন বটে, কিন্তু অতি সুসময়ে তাঁর মা লছমিরানী উজলা গ্রামে বাপের বাড়িতে চলে যান। কিন্তু হাম্বির হাল না ছেড়ে রাজ্যশাসন নিজেও গুণে চালিয়ে যান।।
Comments
Post a Comment