Skip to main content

সুভাগার জীবন (3rd. Semester) কাহিনী লেখো রাজকাহিনী গল্পগ্রন্থ অবলম্বনে।

সুভাগার জীবন কাহিনীটি আলোচনা করো রাজকাহিনী গল্পগ্রন্থ অবলম্বনে (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার, বাংলা মাইনর)।

আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অন্যতম একটি গল্পগ্রন্থ রাজকাহিনী। আর সেই গল্পগ্রন্থের একটি গল্প শিলাদিত্য। যে গল্পে গল্পকার সুভাগার এক করুণ জীবন কাহিনী চিত্রিত করেছেন। আসলে অবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছবি আঁকেন না, তিনি ছবি লেখেন। রাজকাহিনী গল্পে ঠিক এই ধরনের ছবি আমরা স্পষ্টতই দেখতে পাই। আর সেই সকল ছবিগুলির বর্ণনার গুণে তারই সৃষ্ট চরিত্রগুলি জীবন্ত হয়ে ওঠে। ঠিক এমনই এক চরিত্র সুভাগা।

   সুভাগা ব্রাহ্মণ বেদবিদ দেবাদিত্যের কন্যা। বিয়ের রাতে তার স্বামী মারা যাওয়ার কারণে তার শ্বশুর শাশুড়ি মিলে সুভাগাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। শ্বশুরবাড়ি থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর সুভাগা দেশের মধ্যে কোথাও একটু আশ্রয় ছিল না। ঠিক এ এরূপ পরিস্থিতির মধ্যে সুভাগা সূর্য মন্দিরের এক বৃদ্ধ পুরোহিত কাছে এসে আশ্রয় ভিক্ষা করলো। সূর্যমন্দিরে ব্রাহ্মণ পুরোহিত একাই থাকতেন। বলা যায় সেই মন্দিরের সব কাজ তিনি একাই করতেন। তবে একাকী থাকার কারণে তাঁর একজন সঙ্গীর ভীষণ প্রয়োজন ছিল। তাই তিনি সুভাগাকে বিন্দুমাত্র কিছু না ভেবে মন্দিরে আশ্রয় দিলেন। অতঃপর-

    সুভাগা সেই সূর্যমন্দিরে একাই সব কাজ সামলে নিতে কোনরকম গাফিলতি করত না। তবে ওই মন্দিরে ত্রিশ সের ওজনের চেয়ে আরতির প্রদীপ ছিল, সেই প্রদীপের কাজ ঠিক করতে পারত না। তাই সুভাগা একটি এক সের ওজনের প্রদীপ আরতি করার জন্য মন্দিরে নিয়ে আসে। কিন্তু মন্দিরের পুরোহিত আগের প্রদীপ নিয়ে আরতি করবেন বলে সুভাগাকে জানিয়ে দেন। ঠিক ওই দিনে পুরোহিত সুভাগাকে সূর্যমন্ত্র শেখালেন এবং বললেন যে, একবার এই সূর্যমন্ত্র পড়লে সূর্যদেব এসে তাকে বর দেবেন।আর দু’বার এই মন্ত্র পড়লে তার মৃত্যু হবে। কিন্তু ঘটনাক্রমে ওই দিনেই সন্ধ্যায় সূর্যমন্দিরের পুরোহিত মারা গেলেন!আর সেদিন থেকে-

     সুভাগা একাকী সেই সূর্যমন্দিরের সব কাজ নিজের হাতেই সম্পন্ন করতে থাকে। শুধু তাই নয়,এই মন্দিরের চারিদিকে পরিবেশ সুন্দর করার জন্য ফুলগাছ লাগিয়ে এবং মন্দিরের দেওয়াল নানা ফুল পাতা ছবি এঁকে পুরান ইতিহাসের ছবি তুলে ধরে। সুভাগার ফুলবাগান ফুলে ফুলে পরিপূর্ণ হয়ে উঠে এবং সেখানে নানা প্রকার প্রজাপতি আসে,আসে ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েরাও। আর এই সাথে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা বাগানে এসেই ফুল ছিঁড়ে ছড়িয়ে নানা উৎপাত করতে থাকে। অবশেষে তার সাধের বাগান পুবের ঝড়ে তছনছ হয়ে যায়।এইসময়ে-

     সুভাগা তার ফেলে আসা দিনগুলি কথা ভাবতে থাকে। মনে পড়ে যায় শশুর শাশুড়ির অমানবিক নিষ্ঠুরতার কথা। তবুও তার মনের মন্দিরে ভেসে ওঠে তার স্বামীর সুন্দর হাসি মুখটি। তবে এই হাসির মধ্যে সুভাগার দুই চোখ জলে ভরে যায়। এখন সুভাগার চারিদিকে অন্ধকার তাকে গ্ৰাস করে ফেলেছে। ঠিক এরকম পরিস্থিতির মধ্যে সুভাগা মন্দিরের চারিদিকে দরজা বন্ধ করে সূর্যমূর্তির সামনে ধ্যানে বসে। অতঃপর তার মন থেকে সব অন্ধকার নিমেষের মধ্যে দূরীভূত হয়। তবুও-

      সুভাগা অতি ভয়ে ভয়ে সূর্যমন্ত্র উচ্চারণ করলে সমস্ত পৃথিবী যেন তার কাছে নতুনভাবে জেগে উঠে। ঠিক এই সময় তার বাগানের চারিদিকে পাখির কলরব, আলোয় আলোয় ভরে ওঠে। এই সময়ে সূর্যদের তাকে দর্শন দিলেন। তবে সুভাগা সূর্যের তেজ কোনমতেই সহ্য করতে পারলেন না। তবুও সূর্যদেব তাকে বর প্রার্থনা করতে বলে। কিন্তু সুভাগা আজ বড়ই একাকী। তাই সূর্যদেবের প্রখর তেজ সহ্য করতে পারেনা এবং সে একান্তভাবে এ জীবন থেকে মুক্তি পেতে চায়। বলা যায় সে মৃত্যু কামনা করে। তবে-

        সূর্যদেব তাকে অন্য বর নিতে আহ্বান জানান। আর সূর্যদেবের পরামর্শ মত সুভাগা সূর্যের মতো তেজস্বী একটি ছেলে এবং চাঁদের মত সুন্দরী একটি মেয়ে কামনা করে। সূর্যদেব তার সেই বর দিয়ে তার সমস্ত কামনা-বাসনা পূর্ণ করলেন। অতঃপর ছেলেটির নাম রাখা হয় গায়েব এবং মেয়েটির নাম রাখা হয় গায়েবী। অতঃপর-

     গায়েব তার  ইস্কুলে বন্ধুদের কাছে তার জন্মবৃত্তান্ত এবং পিতার পরিচয় নিয়ে যথেষ্ট হেনস্থা হতে হয়। তার মা সুভাগা তাকে সবকিছু জানালেও গায়েব কিছুতেই তা বিশ্বাস করতে পারে না। কিন্তু সুভাগা জানত যে, আবার সূর্যমন্ত্র উচ্চারণ করলে তার মৃত্যু অনিবার্য। তবে গায়েবের মনে বিশ্বাস আনার জন্য সে সূর্যমন্ত্র উচ্চারণ করে এবং সূর্যদেব তার সামনে আবির্ভূত হলেন। অবশেষে সূর্যদেবের প্রবল, প্রখর তেজে সুভাগার শরীর পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

(ঠিক এরূপ অসংখ্য নোটস্, আলোচনা, সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের SHESHER KOBITA SUNDARBAN Youtube channel )।

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...