Skip to main content

আকবরের (3rd.Sem) ধর্মীয় নীতি আলোচনা করো।

সম্রাট আকবরের ধর্মীয় নীতি আলোচনা করো [পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস তৃতীয় সেমিস্টার মাইনর]। 

       •আলোচনা শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, মুঘল আমলের যে ক'জন শাসক খ্যাতির শীর্ষে অবস্থান করার সুযোগ পেয়েছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন সম্রাট আকবর। তবে বলা যায়, তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের এবং মহত্ত্বের মধ্যে এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছিল। তাঁর মধ্যে যে মানবতাবাদী ধর্মনীতি ছিল তা সকলের কাছে উচ্চ প্রশংসিত হয়েছিল। বলা যায় তাঁর ধর্মমত ভারতে এক নতুন চেতনার উন্মেষ ঘটায়। যেখানে গতানুগতিকতার বাইরে মানুষকে নতুনভাবে ভাবিয়ে তুলেছিল তাঁর ধর্মীয় নীতি। আর সেখানে আমরা দেখি-

•আকবরের ধর্মনীতিঃ সম্রাট আকবরই প্রথম ধর্মনিরপেক্ষ শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। যেখানে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, হিন্দুস্থানের সম্রাটকে জাতি, ধর্ম, নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের স্বাভাবিক আনুগত্যের উপর নির্ভরশীল জাতীয় সম্রাটের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হতে হবে। তাই তিনি রানী এলিজাবেথ, রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ এবং মার্টিন লুথারের অনুকরণে পাক-ভারতে ধর্মীয় সংস্কারে ব্রতী হয়েছিলেন। আর সেখানে তার ধর্মনীতিতে দেখা যায়-

•১) যুগ ধর্মের প্রভাবঃ যুগের ধারা ও পারিপার্শ্বিক প্রভাব আকবরের ধর্মমতকে প্রভাবান্বিত করে। তবে ১৬ শতকে বিশ্বব্যাপী এক ধর্মীয় জাগরণ দেখা দিয়েছিল। আসলে সেটি ছিল জ্ঞানান্বেষণের যুগ এবং আকবর ছিলেন সেযুগের একজন অকৃত্রিম প্রতিনিধি।

•২) পারিবারিক প্রভাব ও গৃহ শিক্ষকঃ আকবরের পিতা হুমায়ুন ও পিতামহ বাবর কেউই গোঁড়া মুসলমান ছিলেন না। এমনকি মাতা হামিদা বানুর মানসিক উৎকর্ষ ও পরমত সহিষ্ণুতা তাঁকে শৈশবকাল থেকে যথেষ্ট প্রভাবিত করেছিল। পাশাপাশি আকবরের গৃহশিক্ষক আব্দুল লতিফ ছিলেন একজন উদারপন্থী শিক্ষক। তাঁর সুলহ-ই-কুল  নীতি আকবরের ধর্মীয় আদর্শ গড়ে তুলতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।

•৩) রাজপুত পত্নীদের প্রভাবঃ রাজপুত রমণীদের প্রভাব এবং সমসাময়িক আমলের হিন্দু ধর্মচার্যগনের ধর্মসংস্কার আন্দোলন আকবরের ধর্ম মতবাদকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিল।

•৪) ভক্তি আন্দোলনের প্রভাবঃ আকবরের সর্বজনীন ধর্মীয় সহিষ্ণুতার সুফল পরিলক্ষিত হয় তাঁর ভক্তি আন্দোলনের মাধ্যম। আর সেখানে কবির, নানক, চৈতন্য প্রমুখ ধর্মাচার্যের ন্যায় আকবরও সকল ধর্মের সর্বজনীনতায় ও একেশ্বরবাদে প্রবলভাবে বিশ্বাসী ছিলেন।

•৫) সুফিদের প্রভাবঃ আকবর বাল্যকালেই সুফিদের সংস্পর্শে এসে সেই মতাদর্শে বিশেষভাবে প্রভাবান্বিত হন। তিনি শেখ মুবারক ও তাঁর দুই পুত্র ফজল ও ফৈজির প্রভাবে প্রভাবান্বিত হয়েছিলেন। বস্তুত তিনি বিভিন্ন পরিবেশের মাধ্যমে ধর্মকে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন।

•৬) রাজনৈতিক কারণঃ রাজনৈতিক দৃষ্টি নিয়ে আকবর উপলব্ধি করতে সক্ষম হন যে, সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের সহযোগিতা ব্যতীত সাম্রাজ্যের ভিত্তি সুদৃঢ় হতে পারে না। তাই তিনি সকল শ্রেণীর প্রজাদের শুভেচ্ছা ও সহযোগিতার উপর ভিত্তি করে মুঘল সাম্রাজ্যকে সুদৃঢ় করার প্রয়াস গ্রহণ করেন।

         পরিশেষে বলা যায যে, সম্রাট আকবরের ধর্মীয় চিন্তা চেতনায় এক নতুন চেতনার জন্ম দেয়। তার ধর্মমত মানুষকে বিশেষভাবে ভাবিয়ে তুলেছিল। তবে বলে রাখা ভালো যে, তাঁর ধর্মমত প্রচারের আসল উদ্দেশ্য রাজনৈতিক ধর্মীয় নয়। তবে তিনি একজন সুদক্ষ রাজনীতিবিদ হিসেবে হিন্দু মুসলমানদের একসাথে গাঁথার পরিকল্পনা করেছিলেন।আর সেখানে রাজনৈতিক সংস্থা হিসেবে তাঁর আশা পূর্ণ হয়েছিল।

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...