শিশু শিক্ষায় পরিবারের ভূমিকা ও গুরুত্ব আলোচনা করো (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্র বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার শিক্ষা বিজ্ঞান)
আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে,সুপ্রাচীন কাল থেকে পরিবার একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা হিসেবে কাজ করে চলেছে। বিদ্যালয়ের আবির্ভাবের অনেক আগেই শিশুরা প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করত পরিবারের বয়স্ক ব্যক্তিদের কাছ থেকে। সেই সময়কালে সামাজিক ধর্মীয় নৈতিক বৃত্তিমূলক শিক্ষার ভিত্তি পরিবারের মধ্যেই গড়ে উঠতো। আর ভারতবর্ষে এই শিক্ষা কার্য সম্পন্ন হতো একান্নবর্তী পরিবারের মধ্যেই। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে শিল্প কারখানা স্থাপিত হওয়ার ফলে শহরকেন্দ্রিক সভ্যতার দ্রুত বিকাশ ঘটে। আর তার ফলেই কর্মসংস্থানের তাগিদে গ্রাম থেকে মানুষ শহরে এসে বসবাস শুরু করে। এখান থেকেই শুরু হয় একান্নবর্তী পরিবারের ভাঙ্গন। সেই সাথে পরিবারের সদস্য সংখ্যাও দ্রুত কমতে শুরু করল। তবে -
স্বাধীন ভারতে শহর ও গ্রামীণ জনসমাজে শিক্ষার ক্ষেত্রে পরিবারের গুরুত্ব অপরিসীম। এখানে শিক্ষাব্যবস্থায় আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা হলেও বিদ্যালয় শিক্ষাব্যবস্থায় চারিত্রিক গুণাবলীর বিকাশ, দেশাত্মবোধ,জাতীয়তাবোধের বিকাশের সুযোগ খুবই কম। এক্ষেত্রে পরিবার একমাত্র সংস্থা যেখানে উক্ত গুণগুলির বিকাশ সম্ভব। তবে গ্রামীণ ও শহরকেন্দ্রিক শিক্ষার মধ্যে একটা পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। যেখানে গ্রামীণ জনসমাজের মধ্যে শিক্ষার সুযোগ সর্বত্র ঠিকমতো ছড়িয়ে পড়েনি। কিন্তু শহরে বিত্তশালী মানুষের বসবাস থাকার ফলে সেখানে শিক্ষার সুযোগ অনেক বেশি। তবে-
গ্রামীন জনসমাজের মধ্যে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায় যে, এখানে আর্থিক অনটন সম্পন্ন পরিবারে স্কুলছুট শিশুর সংখ্যা সর্বাধিক। আবার গ্রামীণ সমাজে পুরাতন সংস্কৃতি,মূল্যবোধগুলি বর্তমান। সেহেতু শহরে বসবাসকৃত ছেলেমেয়েদের তুলনায় গ্রামীণ ছেলেমেয়েরা চিন্তায় চেতনায় অনেকটা পিছিয়ে। শহর অঞ্চলে অধিকাংশ পরিবার চাকুরি অথবা ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল। আর শহরের ছেলেমেয়েরা বিদ্যালয়ের উপর নির্ভরশীল হওয়ার কারণে তাদের চরিত্রে গৃহ পরিবেশের প্রভাব বেশ কম। আবার শহরের শিশুরা প্রাথমিক গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতাগুলি গৃহ পরিবেশের মধ্য থেকে লাভ করে থাকে। যার ফলে ওই সকল শিশুরা এই বাস্তব অভিজ্ঞতাগুলি সারা জীবন মনে রাখে। কিন্তু -
বর্তমান সময়কালে শিক্ষাভিত্তিক সমাজব্যবস্থায় নারী পুরুষ সমমর্যাদায় উৎপাদন ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ করে থাকে। সেই কারণে প্রচলিত অর্থে এরা পারিবারিক জীবন গড়ে তুলতে পারেনা। শুধু তাই নয় এই সকল পরিবারের শিশুরা বাড়ির পরিচারিকার কাছে মানুষ হয় এবং তিন বছরের আগেই বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। আর তার ফলে শহর অঞ্চলের ছেলেমেয়েদের মনে বিদ্যালয় প্রভাব বেশি লক্ষ্য করা যায়।
পরিবারের ভূমিকা ও গুরুত্বঃ লক, মন্তেশ্বরী প্রমূখ শিক্ষাবিদ গৃহ বা পরিবারের শিক্ষার ওপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করেছেন। কারণ শিশুদের সমস্ত রকম শিক্ষার মূল উৎসই হলো পরিবার। তাই শিশুর পারিবারিক শিক্ষাই হলো তার কাছে সর্বাপেক্ষা কার্যকরী এবং শিশুর পারিবারই তার প্রথম বিদ্যালয়। আর-
পরিবারই শিশুর শারীরিক বিকাশের প্রতি নজর দেয়। পাশাপাশি শিশুদের মধ্যে এই পরিবার নৈতিক ও ধর্মীয় চেতনা বোধ গড়ে তোলে। যার ফলে শিশুর আগ্রহ,বুদ্ধিমত্তা এবং অন্যান্য প্রক্রিয়ার জাগরণ ঘটে।যেটি শিশুর সামাজিকীকরণের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা। তবে-
কোনো কোনো পরিবারে আবার বিশেষ ধরনের কিছু পেশাগত শিক্ষা শিশু পেয়ে থাকি। আর এ কারণে আমরা বলতে পারি, পরিবার ও বিদ্যালয়ের মধ্যে সহযোগিতা শিশুর শিক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে
থাকে।
Comments
Post a Comment