Skip to main content

ট্রাজেডিমূলক(ষষ্ঠ সেমিস্টার বাংলা অনার্স)নাটক রচনায় শেক্সপিয়ারের অবদান আলোচনা করো।

ট্রাজেডিমূলক নাটক রচনায় শেক্সপিয়ারের অবদান আলোচনা করো(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় ষষ্ঠ সেমিস্টার বাংলা অনার্স)।

        আলোচনা শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে,জীবনের গভীর রহস্য গুলি উপলব্ধি করতে শিখেছিলেন এক দীর্ঘদিনের সাধনার ফলে। তবে ট্রাজেডি মূলত বিয়োন্তক পরিণতি হলেও তাঁর পরিণত বয়সের এই ফসল বিশেষ করে পাঠকেরা নৈরাশ্যের বদলে মনুষত্বের সুর শুনতে পেয়েছিলেন। যেখানে গ্রীক ট্রাজেডিতে নায়কেরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিজের ভাগ্য নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করেছেন। কিন্তু শেক্সপিয়ারের ট্রাজেডি নাটকের নায়কেরা তাদের নিজের ভাগ্য নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করেছে। আসলে-

     ট্রাজেডি নায়কেরা উচ্চ বংশজাত, কারণ তাঁদের জীবন এবং মৃত্যু সমগ্র রাষ্ট্র বা সমাজকে প্রভাবিত করে। সবসময় নায়কেরা হয়তো দেবচরিত্র হয় না, তবুও তাদের প্রত্যেকের মধ্যেই সুপ্ত বা প্রকাশিত মহত্বের বীজ থাকে। আসলে শেক্সপিয়ারের নায়কেরা অদৃষ্টের তাড়নায় হয়তো কোথাও মার খেতে হয় বা অপমানিত হতে হয়, এ কথা তাদের জীবনের ধ্রুব সত্য। তবে তাঁর নায়কেরা অদৃষ্টের চেয়ে পুরুষকারে বেশি বিশ্বাসী। তবে-

        শেক্সপিয়ার মূলত মধ্যযুগীয় মনীষীদের কাছ থেকে একটি সুশৃংখল বিশ্বচেতনা লাভ করেছিলেন। আর সেই বিশ্বের কেন্দ্রীয়স্তরে আছে মানুষ, সেই মানুষগুলি ছিলেন ঈশ্বরাভিমুখী। আর সেখানে তাঁর চিরন্তন নীতিবোধ ও বিরুদ্ধ শক্তির বিকৃত রুচির দোটানায় পড়ে তিনি যখন দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন সেই সময় রচিত হয় তাঁর ট্রাজেডি নাটকগুলি। যেখানে -

          শেক্সপিয়ার ট্রাজেডি নাটকে মানবীয় দুর্বলতা, ভাগ্য, ক্ষমতা এবং নৈতিকতার জটিলতা ফুটিয়ে তোলার জন্য বিখ্যাত, যা তাকে এই ধারায় শ্রেষ্ঠত্বের আসনে স্থাপন করেছে। আসলে তাঁর ট্রাজেডি নাটকগুলো মানব জীবনের গভীরতা এবং জটিলতাকে তুলে ধরে। যেখানে চরিত্রগুলো তাদের নিজস্ব দুর্বলতা, ইচ্ছা শক্তি এবং ভাগ্যের শিকার হয়ে ধ্বংসের দিকে ধাবিত হয়। শুধু তাই নয়, তাঁর নাটকগুলোতে ক্ষমতার অপব্যবহার, নৈতিক অবক্ষয় এবং প্রতিশোধের মতো বিষয়গুলি বিশেষভাবে জায়গা করে নিয়েছে। আবার পাশাপাশি-

     শেক্সপিয়ারের ট্রাজেডিতে চরিত্রগুলি প্রায়শ তাদের দুর্বলতা যেমন অহংকার, লোভ বা প্রতিশোধের কারণে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যায়। আসলে সেটি মানবীয় দুর্বলতা ছাড়া আর কিছুই নয়। তবে তার নাটকে ভাগ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। যেখানে চরিত্রগুলো তাদের নিজেদের কর্মের চেয়েও ভাগ্যের শিকার হয়ে থাকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে। কিন্তু ক্ষমতার অপব্যবহার এবং নৈতিক অবক্ষয় শেক্সপিয়ারের ট্রাজেডিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ থিম। আর সেখানে তার নাটকের চরিত্রগুলো তাদের ক্ষমতা ব্যবহার করে অন্যদের ক্ষতি করে এবং শেষ পর্যন্ত নিজেরাই ধ্বংসের পথে এগিয়ে চলে। আসলে-

        শেক্সপিয়ারের অনেক নাটককে ট্রাজেডি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ সেগুলি এমনভাবে গঠন করা হয় যা শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় চরিত্রদের মৃত্যুর দিকে টেনে নিয়ে যায়। শেক্সপিয়ারের নাটকের নায়কেরা সাধারণ তাদের নিজস্ব মারাত্মক ত্রুটি বাহ্যিক চাপ এবং ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষার কারণে চরিত্রের পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায়। আর সেখানে তার ট্রাজেডিমূলক নাটকগুলিতে দেখি-

•রোমিও এন্ড জুলিয়েটঃ নিয়তি লাঞ্ছিত রোমান্টিক প্রেমের কাহিনী এ নাটকের প্রধান বিষয়।যেখানে ভেরোনা শহরে দুই চিরসূত্র পরিবার হল মন্টেগু ও ক্যাপুলেট। মন্টেগু পরিবারের তরুণ রোমিও ক্যাপুলেট কন্যা জুলিয়েট প্রথমে প্রেমে পড়ে এবং পরে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। কিন্তু দুই পরিবারের শত্রুতার ফলে তাদের বিবাহ সার্থক হয় না। তাদের অকাল প্রাণ বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে উভয় পরিবারের শত্রুতা অবসান ঘটে। আবার ঘটনাচক্রে দুটি তরুন প্রাণের অকৃতিক ও অপ্রেমের প্রেমের করুন পরিণতি নিয়ে এই রোমিও এন্ড জুলিয়েট নাটকটি।

•হ্যামলেটঃ ডেনমার্কের যুবরাজ তরুণ হ্যামলেট তার পিতৃহন্তারক খুল্লতাত ক্লডিয়াস এবং বিশ্বাসঘাতনী মাতা গারট্রডের উপযুক্ত শাস্তি বিধানে যে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ঘটে তা এ নাটকের মূল বিষয়। অবশেষে হ্যামলেট ক্লডিয়াস ও গারট্রডের আকস্মিক ছুরিকাঘাত ও বিষপানে মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে এ নাটকের পরিসমাপ্তি ঘোষিত হয়। নাটকটিতে আমরা দেখি চক্রান্ত, হত্যা, প্রতিহিংসা, অবৈধ প্রেম সম্পর্ক, নায়ক চরিত্রের তীব্র অন্তর্দ্বন্দ্ব সব মিলিয়ে অত্যন্ত জটিল এ নাটকের কাহিনী। আসলে-

শেক্সপিয়ারের নাটকের নায়ক নায়িকারা সকলেই খ্যাতিমান এবং অভিজাত পরিবারের সদস্য,সদস্যা। আর সেখানে নাট্যদ্বন্দ্ব তাঁর নাটকের ট্রাজেডির প্রাণ। পেশাদার বিদূষক ও বিদুষকধর্মী অন্যান্য চরিত্র শেক্সপিয়ারের নাট্য সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।

            পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, আসলে শেক্সপিয়ার ছিলেন জীবন দেবতার সার্থক পূজারী। মানুষের জীবনে মেঘ আছে আবার ধেয়ে আসে ঝঞ্ঝা। আর সেই সঙ্গে ইন্দ্রধনু ও সূর্যকিরণের সমারোহ দেখতে পাওয়া যায়। তার মায়ামুকুরে মানুষের বিরাট সত্তার প্রতিবিম্ব ধরা দিয়েছে, তাই তিনি সর্বযুগের, সকল দেশের, সর্বশ্রেষ্ঠ নাট্যকার। আজ প্রায় তার মৃত্যুর পর তিনশ বছর কেটে গেল। সমাজের দেখা দিল নানা পরিবর্তন- সাহিত্যে, সমাজে, রাজনীতিতে এবং নানা ক্ষেত্রে। কিন্তু এখনও নাট্যকার শেক্সপীয়ার অবিচলভাবে কপালে জয়টিকা পরে হিমালয়ের মত স্বগর্বে এখনো দাঁড়িয়ে আছেন।

ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের SHESHER KOBITA SUNDORBON YOUTUBE CHANNEL ।

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...