Skip to main content

বৈষ্ণব সাহিত্যে(1st. Sem) বিদ্যাপতি ও চন্ডীদাসের তুলনামূলক আলোচনা করো।

বৈষ্ণব পদাবলী সাহিত্যে কবি বিদ্যাপতি এবং চন্ডীদাসের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা করো ((পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, প্রথম সেমিস্টার, বাংলা, মেজর এবং মাইনর)

আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে বিদ্যাপতি ও চন্ডীদাস উভয়ই চৈতন্য পূর্ববর্তী কবি। দুজনেই রাধা কৃষ্ণের লীলা অবলম্বনে পদ রচনা করেছিলেন।আর বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এ ধরনের পদ রচনায় জন্য তারা সুখ্যাতি অর্জন করেছেন। কথিত আছে একবার নাকি উভয়ের সাক্ষাৎ ঘটেছিল গঙ্গাতীরে। এই উভয় কবির কাব্য বিচার করলে তাদের মধ্যে যেমন সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়, তেমনি লক্ষ্য করা যায় বৈসাদৃশ্য। আর সেগুলি হলো-

•সাদৃশ্য•

১) চৈতন্য পূর্বযুগের কবি বলে বিদ্যাপতি ও চন্ডীদাসের কাব্যে বৈষ্ণবী ও ষড়দর্শনের অনুশাসন নেই। এই কাব্য বিষয় স্থির করতে গিয়ে উভয় কবিকে দ্বিধান্বিত হতে হয়নি।

২) বিদ্যাপতি ও চন্ডিদাস উভয়ই মানুষের জীবন যন্ত্রণাকে প্রকাশ করেছেন রাধাকৃষ্ণের জবানীতে। কেননা, তখন কানু ছাড়া গীত ছিল না।

৩) বিদ্যাপতি ও চন্উডিদাস ভয়ই জেনেছেন মানুষের জীবনে প্রাপ্তির মুহূর্তটি বড় সংক্ষিপ্ত। অপ্রাপ্তির ক্ষণটি বড় দীর্ঘায়িত। তাই কোনো বিশেষ ধর্মীয় বন্ধনের এক্তিয়ারহীন এই দুই কবি সেই অপ্রাপ্তির ক্ষণটিকেই তাঁদের কাব্যে অবিস্মরণীয় করে দেখেছেন।

বৈসাদৃশ্য•

১) বিদ্যাপতি রাজসভার কবি। আর চন্ডীদাস পল্লী বাংলার এক নিভৃত কোণে বসবাসকারী কবি।

২) বিদ্যাপতি রাজসভার কবি বলেই তাঁর কাব্যে মন্ডন কলা-নৈপুূণ্য লক্ষ্য করা যায়। আর, চন্ডীদাসের কবিতায় পাই গ্রাম বাংলার সরস, সরল, ভাব ও ভাষা।

৩) বিরহ দু' পর্যায়ের বিভক্ত- স্থায়ী আর অস্থায়ী। অস্থায়ী বিরহের পর আছে ভাবসম্মিলন। বিরহ বস্তুগতভাবে হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করে না। আর স্থায়ী বিরহ হল মাথুর। এরপর আর মিলন নেই। চন্ডীদাস অস্থায়ী বিরহের কবি আর বিদ্যাপতি স্থায়ী বিরহের কবি। কারণ চন্ডিদাস ভাববাদী এবং বিদ্যাপতি অনেকটাই ইহবাদী। 

৪)বিদ্যাপতি মিলন ও বিরহ উভয় পর্যায়ে বড় কবি। আর চন্ডিদাস মিলনের মধ্যে বিরহের স্বাদ পান। তাই তিনি বিরহ পর্যায়ের কবি 

৫)বিদ্যাপতির কাব্যে ভাষা, অলংকার সন্নিবেশ ও ছন্দোনৈপুূণ্য লক্ষ্য করার মতো। কিন্তু চন্ডীদাসের কাব্যে প্রাণের ভাষা অলংকারহীন অলংকারে ব্যক্ত।

৬) বিদ্যাপতি রূপতন্ময় কবি কিন্তু চন্ডীদাস ভাবতন্ময় কবি।

৭) বিদ্যাপতির সুখের কবি কিন্তু চন্ডীদাস দুঃখের কবি। বিদ্যাপতি বিরহে কাতর হয়ে পড়েন। চন্ডীদাসের মিলনেও সুখ নেই। বিদ্যাপতি জগতের মধ্যে প্রেমকে শ্রেষ্ঠ বলে জেনেছেন আর চন্ডীদাস প্রেমেই জগত বলে জেনেছেন।

ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের SHESHER KOBITA SUNDORBON YOUTUBE CHANNEL ।

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...