আধুনিক শিক্ষাক্ষেত্রে ফ্রয়েবেলের অবদান আলোচনা করো (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, প্রথম সেমিস্টার, এডুকেশন, মাইনর সিলেবাস)
আলোচনা শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, শিক্ষার জগতে উনবিংশ শতাব্দীর শিক্ষা সংস্কারকদের মধ্যে ফ্রয়েবেল শিক্ষার জগতে এক বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছেন। তবে এ কথা ঠিক যে, তার শিক্ষাতত্ত্বের উপর ভাববাদী আধ্যাত্মিক দর্শনের প্রভাব লক্ষণীয়। যার ফলে তার শিক্ষানীতি ও শিক্ষণ পদ্ধতি অনেক সময় দুর্বোধ্য হয়ে উঠেছে। তবুও শিক্ষাক্ষেত্রে তার অবদানগুলি আজও চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। আর সেখানে আমরা দেখি-
১) ফ্রয়েবেলই সর্বপ্রথম শিশু শিক্ষার সমগ্র প্রক্রিয়াটিকে দার্শনিক তত্ত্বের দ্বারা ব্যাখ্যা করে শিক্ষাশ্রয়ী দর্শনের ভিত্তি স্থাপন করেন।
২) ফ্রয়েবেলই প্রথম ঘোষণা করেন যে, আত্মসক্রিতাই শিশুর শিক্ষা গ্রহণের একমাত্র উপায়।
৩) আধুনিক শিক্ষার ক্ষেত্রে ফ্রয়েবেলই প্রথম খেলাকে শিশু শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন।
৪) ৩-৮ বছর পর্যন্ত শিশুদের শিক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি প্রাক্ প্রাথমিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
৫) তিনিই সর্বপ্রথম শিশুদের মধ্যে সমাজ চেতনার বিকাশ ঘটাবার জন্য যৌথ কাজকর্মের কথা উল্লেখ করেন।
৬) ফ্রয়েবেল তাঁর কিন্ডারগার্ডেন পদ্ধতিতে পুঁথিগত বিদ্যাচর্চার পরিবর্তে যে খেলাধুলো, হাতের কাজ, গল্প বলা প্রভৃতির প্রবর্তন করেছিলেন। যা পরবর্তীকালে শিশু শিক্ষার ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছিল।
৭) শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে তিনি শিক্ষাগ্রহণের ব্যাপারে শিশুকে যথেষ্ট স্বাধীনতা দেওয়ার পথ প্রশস্ত করেছিলেন।
৮) ফ্রয়েবেলই সর্বপ্রথম শিশু শিক্ষাকে সম্পূর্ণরূপে কর্মকেন্দ্রিক ও অভিজ্ঞতাকেন্দ্রিক করে তোলার ব্যবস্থা করেন।
৯) তিনিই শিক্ষাক্ষেত্রে শিশুর স্বাধীনতা বাড়ানোর জন্য শিক্ষাক্ষেত্রের যাবতীয় কৃত্রিমতা ও অস্পষ্টতাকে দূর করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন।
১০) শিশু শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ, চিত্তাকর্ষক উপকরণের ব্যবহার, আনন্দদায়ক পরিবেশ রচনা, প্রভৃতি প্রয়োগ করে তিনি পরবর্তীকালে শিক্ষাবিদদের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে
ছিলেন।
Comments
Post a Comment