Skip to main content

বৌদ্ধ দর্শন ও (1st.Sem) সংস্কৃতি চর্চায় বৌদ্ধবিহার গুলির ভূমিকা আলোচনা করো।

বৌদ্ধ দর্শন ও সংস্কৃতি চর্চায় বৌদ্ধবিহার গুলির ভূমিকা আলোচনা করো ( পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, প্রথম সেমিস্টার, বাংলা মাইনর)।

             আলোচনার শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে,বৌদ্ধদর্শন ও সংস্কৃতি চর্চায় বৌদ্ধবিহার গুলির ভূমিকা অপরিসীম। আর সেই বৌদ্ধবিহার গুলির ভূমিকা আমারা নিম্ন সুত্রাকারে আলোচনা করতে প্রয়াসী হোলাম। যেখানে--

১) শিক্ষা ও জ্ঞান চর্চার কেন্দ্র হিসেবে বৌদ্ধবিহারঃ বৌদ্ধ বিহারগুলি শুধুমাত্র ভিক্ষুদের আবাসস্থল ছিল না, বরং বলা যেতে পারে এগুলি ছিল বৌদ্ধ দর্শন, সাহিত্য, শিল্পকলা এবং অন্যান্য জ্ঞানার্জনের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।যেখানে ভিক্ষুরা ধর্মীয় গ্রন্থ অধ্যয়ন করতেন, বিতর্ক ও আলোচনায় অংশগ্রহণ করতেন এবং নিজেদের জ্ঞান ও প্রজ্ঞা বৃদ্ধি করতেন। অনেক বিহারে গ্রন্থাগার ছিল, যেখানে মূল্যবান বৌদ্ধ পুঁথি ও শাস্ত্র সংরক্ষিত থাকত। নালন্দা, বিক্রমশীলা, তক্ষশীলার মতো বিখ্যাত বৌদ্ধবিহারগুলি প্রাচীনকালে জ্ঞানচর্চার আন্তর্জাতিক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল, যেখানে ভারত এবং অন্যান্য দেশ থেকেও শিক্ষার্থীরা জ্ঞানার্জনের জন্য আসতেন।

২) ধর্ম, দর্শন প্রচারে বৌদ্ধবিহারঃ বৌদ্ধবিহারগুলি বৌদ্ধ ধর্ম ও দর্শনের মূল নীতি ও শিক্ষাগুলিকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর সেখানে ভিক্ষুরা নিয়মিত ধর্মীয় আলোচনা, সূত্রপাঠ ও ব্যাখ্যা করতেন।যে ব্যাখ্যা সাধারণ মানুষকে বৌদ্ধধর্ম সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে সাহায্য করত। বৌদ্ধবিহার গুলিতে বিভিন্ন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব পালিত হত।যে উৎসব, অনুষ্ঠান বৌদ্ধ সংস্কৃতিকে জীবন্ত রাখত এবং জনসাধারণের মধ্যে ধর্মের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করত।

৩) বৌদ্ধ সংস্কৃতির লালন,বিকাশে বৌদ্ধ বিহারঃ বৌদ্ধবিহারগুলি বৌদ্ধ সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক, যেমন - শিল্পকলা, স্থাপত্য, সঙ্গীত ও নৃত্যকলার চর্চার কেন্দ্র ছিল। বিহারের স্থাপত্যশৈলীতে বৌদ্ধ দর্শনের প্রভাব দেখা যায়। স্তূপ, চৈত্য, মূর্তিতে বুদ্ধ ও বোধিসত্ত্বদের জীবন ও শিক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন চিত্র ও ভাস্কর্য খোদাই করা থাকত, যা বৌদ্ধ শিল্পকলার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। অনেক বিহারে ধর্মীয় সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশিত হত, যা বৌদ্ধ ভাবধারাকে মানুষের কাছে আরও সহজবোধ্য করে তুলত।

৪) সামাজিক ও আধ্যাত্মিক আশ্রয় হিসেবে বৌদ্ধবিহারঃ বৌদ্ধবিহারগুলি শুধু ধর্মীয় ও শিক্ষাকেন্দ্রই ছিল না, বরং এটি সমাজের দুর্বল ও অসহায় মানুষের আশ্রয়স্থল হিসেবেও কাজ করত। ভিক্ষুরা আর্তমানবতার সেবায় নিজেদের নিয়োজিত রাখতেন এবং দরিদ্র ও অসুস্থদের সাহায্য করতেন। বিহারগুলি মানসিক শান্তির অন্বেষণে আসা মানুষদের জন্য আধ্যাত্মিক আশ্রয় প্রদান করত, যেখানে তারা ধ্যান ও যোগাভ্যাসের মাধ্যমে মানসিক শান্তি লাভ করত।

৫) ঐতিহ্য ও ইতিহাসের ধারক হিসেবে বৌদ্ধবিহারঃ বৌদ্ধবিহারগুলি প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এগুলির মাধ্যমে সেই সময়ের সমাজ, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় বিশ্বাস সম্পর্কে অনেক মূল্যবান তথ্য জানা যায়। বিহারগুলিতে প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, যেমন - লিপি, মুদ্রা, মূর্তি ইত্যাদি ইতিহাস পুনর্গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, বৌদ্ধবিহারগুলি বৌদ্ধ দর্শন ও সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে একটি অপরিহার্য ভূমিকা পালন করত। এগুলি ছিল জ্ঞান, ধর্ম, সংস্কৃতি ও মানবতার মিলনস্থল, যা প্রাচীন ভারতীয় সমাজকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। আজও এই বিহারগুলির ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব অপরিসীম বলাই শ্রেয়।

ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা নোটস সাজেশন পেতে ভিজিট করুন আমাদের "SHESHER KOBITA SUNDARBAN"Youtube channel 

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...