হিন্দি সাহিত্যের ইতিহাসে ভারততেন্দু হরিশ্চন্দ্রের অবদান আলোচনা করো(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় ষষ্ঠ সেমিস্টার বাংলা অনার্স)।
আলোচনা শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, ভারত হিন্দু হরিশ্চন্দ্র হিন্দি সাহিত্যের ইতিহাসে ভগিরথ রূপে পরিগণিত। তার প্রধান অন্যতম কারণ হলো, তাঁর লেখনীর স্পর্শেই হিন্দি সাহিত্য নবজাগরণের যুগরূপে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। আসলে তিনি ইতিহাস প্রসিদ্ধ শেঠ আমিনচন্দের বংশজাত এবং হিন্দি সাহিত্যে আধুনিকতার প্রবর্তক। আর আধুনিকতার প্রবর্তক হিসেবে বাল্যকাল থেকেই তাঁর মধ্যে বহুমুখী প্রতিভার বিকাশ পরিলক্ষিত হয়। বলা যেতে পারে তাঁর সৃজনশীল কবি প্রতিভা এবং বহুমুখী রচনাশৈলী তাঁর জনপ্রিয় তাঁকে বহু বিস্তৃত করেছিল। আর সেখানে আমরা দেখি-
ভারতেন্দু প্রধানত কবি। তবে সাহিত্যের অন্যান্য শাখায় বিশেষ করে সম্পাদকরূপে, অনুবাদকরূপে, গদ্যকাররূপে,নাট্যকাররূপে, বহুমুখী প্রতিভা লক্ষণীয়। তবে এখানে বলে রাখা ভালো যে,আধুনিক হিন্দি নাটক এবং প্রবন্ধ রচনা ভারতেন্দুর হাত ধরেই হিন্দি সাহিত্যে শুভ জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল। কারণ তেমনভাবে প্রাক্ ভারতেন্দুর যুগে রঙ্গমঞ্চ বা নাট্যধারার বিকাশ ঘটেনি। সেই সময়ের ভ্রাম্যমাণ পার্সী থিয়েটারের দল থাকলেও চিন্তাশৈলীর এবং সামাজিক পটভূমিকায় তার যথার্থ রূপায়ণ তৎকালে দেখা যায়নি। আর এই পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় জীবন ও সাহিত্যকে উদ্ধার করে ভারতেন্দু সূর্য হিন্দি সাহিত্যের আকাশকে নতুন আলোয় উদ্ভাসিত করেছিলেন। তবে -
আমরা জানি সাহিত্যের অনেকগুলি শাখা আছে। আর সেই সকল শাখা গুলির মধ্যে অন্যতম শাখা হল নাটক। যার মাধ্যমে সামাজিক শিক্ষা, চিত্তবিনোদন, ভাব বিনিময়ের সুযোগ থাকে সর্বাধিক। তাই সাহিত্যের এই শাখার যথার্থ বিকাশ ছাড়া অন্যান্য শাখা গুলি কিছুটা হলেও দুর্বল হয়ে পড়ে। আর সেখানে ভারতেন্দু হরিশচন্দ্র এই শাশ্বত সত্যটি সুন্দরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন। যার ফলে পরাধীন ভারতবর্ষের রাষ্ট্রীয় ঐক্য এবং নবজাগরণের সূচনাকল্পে তাঁর লেখনী নবজাগরণের সূচনা হয়েছিল। আর সেখানেই তাঁর নাটক সমূহের তৎকালীন রাজনৈতিক চিন্তাধারার প্রতিফলন ঘটেছে।আর সেখানে-
•সম্পাদক রূপে ভারতেন্দুঃ আমরা জানি সম্পাদক রূপে ভারতের খ্যাতি যশ কৃতিত্ব ব্যাপক এবং উজ্জ্বলতর। আর সেই উজ্জ্বল পথে তিনি কবিবচনসুধা, হরিশচন্দ্র চন্দ্রিকা, বালবোধিণী, প্রভৃতি সাহিত্য পত্রিকার সাথে একই সাথে জড়িত ছিলেন। এই সকল পত্রিকাগুলি কেবলমাত্র তিনি প্রকাশ করেননি, সেই সাথে তিনি এই সকল পত্রিকার সম্পাদকও ছিলেন। তবে বিভিন্ন কারণে তিনি এই সকল পত্রিকা থেকে সরে যাওয়ার ফলে পরবর্তীতে এই পত্রিকা গুলি ধীরে ধীরে মুছে যেতে থাকে।
•অনুবাদক রূপে ভারতেন্দুঃ ভারতেন্দু হরিশচন্দ্র যেমন হিন্দি সাহিত্যের ভগীরথ ঠিক তেমনি অনুবাদক রূপে সাহিত্যে শ্রেষ্ঠ আসন গ্রহণ করেছিলেন। আর এই শ্রেষ্ঠ আসন পেয়েছিলেন তিনি মূলত ইংরেজী, মারাঠি, বাংলা এবং সংস্কৃত ভাষায় প্রখর ব্যুৎপত্তি জ্ঞানের জন্য। আর এই সকল ভাষাগুলি হিন্দি ভাষার পাঠকদের পরিচয় করে দেওয়ার তাগিদ একমাত্র তিনিই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। আসলে তিনি অনুবাদক রূপে হিন্দি নাট্য সাহিত্য ক্ষেত্রে প্রসিদ্ধি অর্জন করেছিলেন। তবে এখানে বলে রাখা ভালো যে,তার অনুবাদ গুলির মধ্যে কিছু হল মূল নাটকের পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ আবার কয়েকটি হল ভাবানুবাদ। আর সেই অনুবাদের মধ্য দিয়ে তিনি মৌলিক প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন।
•গদ্যকাররূপে ভারতেন্দুঃ হিন্দি সাহিত্যের ইতিহাসকে আধুনিককালের গদ্যকাল বলা হয়ে থাকে। কারণ ১৯০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে পরম্পরাগত হিন্দি কবিতার অতিরিক্ত গদ্যরচনার সূত্রপাত ঘটেছিল। আর এই পর্যায়ে তিনি নাট্যকারদের কাছে প্রেরণাদায়ক ও পথপ্রদর্শক রূপে কাজ করেছেন। আসলে গদ্য সাহিত্যের ক্ষেত্রে প্রবন্ধ রচনা ছাড়াও ভারতেন্দু উপন্যাস রচনার সূত্রপাত করেছিলেন। আর এখানে কিছুটা রচিত হওয়ার পর ভারতেন্দু হরিশ্চন্দ্রের অকাল মৃত্যু হয়। তবে ভাষাশৈলীর ক্ষেত্রে এবং হিন্দিসাহিত্যে গদ্য রচনার পথপ্রদর্শক গ্রুপে ভারতেন্দুর কৃতিত্ব অভিনন্দনযোগ্য হিন্দি সাহিত্যের গদ্য রচনার জনকরূপে তাই ভারতেন্দুর স্বীকৃতি।
•নাট্যকাররূপে ভারতেন্দুঃ ভারতেন্দুর কৃতিত্ব,ব্যক্তিত্ব সর্বাধিক জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করে নাট্য রচনার মধ্যে দিয়ে। বলা যেতে পারে, তাঁর নাট্য ব্যক্তিত্ব অন্যান্য ব্যক্তিত্বকে
প্রায় ম্লান করে দিয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, তৎকালীন সময়ে বহু বিদ্বান এবং যোদ্ধা লেখকও তাঁকে নাট্যকাররূপে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তবে একথাও আমাদের মনে রাখা দরকার যে, তিনি নাট্যকারের পাশাপাশি কবি রূপেও অনেকটা সফল হয়েছিলেন।তবে-
হিন্দি সাহিত্যের ইতিহাসে ভারতেন্দুকে হিন্দি নাটকের জনক এবং সূত্রধাররূপে স্বীকার করা হয়ে থাকে। শুধু তাই নয়, ভারতেন্দুর ক্রান্তদর্শী প্রতিভা এবং প্রয়াসেই নাটকের অকালকে দূর করেছিল। এছাড়াও তিনি নিজে মৌলিক নাটক রচনা করেও নাট্য সাহিত্যের অকাল রোধ করেছিলেন। আসলে তাঁর নাটকগুলি ছিল সমাজের বৈষম্য, শোষণ এবং অবিচারকে দূর করার উদ্দেশ্য নিয়ে রচিত। সেখানে তাঁর নাটকের বিষয়বস্তু ছিল সামাজিক, ঐতিহাসিক, পৌরাণিক এবং সমকালীন বিভিন্ন বিষয়। আর সেই নাটকগুলোর মধ্যে দিয়ে তাঁর নাট্য মৌলিকত্ব যেমন চোখে পড়ে, ঠিক তেমনি তাঁর নাটকের আঙ্গিকেও আধুনিকতার স্বরূপ ধরা পড়ে।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, ভারতেন্দু হরিশ্চন্দ্র হিন্দি সাহিত্যের ইতিহাসে বিভিন্ন পর্যায়ে অনন্য সুন্দর মৌলিকতার পরিচয় দিয়েছেন। আর সেই সকল পর্যায়ে তাঁর কাব্যশৈলী যেমন পরিচ্ছন্ন,সরল ঠিক তেমনি সহজগ্ৰাহ্য। যেখানে তাঁর সহজ হৃদয়য়তা,দায়িত্ববোধ তাঁর ভাষার ব্যবহারের মধ্যে বিকশিত হয়েছে। আসলে তিনি যুগ প্রবর্তক এক অত্যাধুনিক কলাকার। তাই সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় নিজেকে স্বমহিমায় তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। বলা যেতে পারে তাঁর ব্যক্তিত্ব, তাঁর কৃতিত্ব হিন্দি সাহিত্যের এক মাইলফলক, আলোকস্তম্ভ স্বরূপ। তাই তিনি হিন্দি সাহিত্যের ইতিহাসে এক মহান জ্যোতিষ্ক।
ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা নোটস সাজেশন ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের SHESHER KOBITA SUNDARBAN Youtube channel 🙏
Comments
Post a Comment