Skip to main content

অসমীয়া কাব্যসাহিত্যে (6th.Sem-cbse) নলিনীবালা দেবীর অবদান আলোচনা করো।

অসমীয়া কাব্য সাহিত্যে নলিনীবালা দেবীর অবদান আলোচনা করো (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ষষ্ঠ সেমিস্টার,CBSE)

          আলোচনা শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, নলিনীবালা দেবী অসমীয়া কাব্য সাহিত্যে একজন খ্যাতিমান কবি ও লেখিকা। তবে সেই কবি বা লেখিকার মধ্যে ছিল না কোন আনুষ্ঠানিক শিক্ষা। তবুও তিনি অসম্ভব সাহিত্য কৃতিত্বের পরিচয় দিয়ে সাহিত্য সভার প্রথম সভাপতি হিসেবে পরিগণিত হলেন । আসলে কোন আনুষ্ঠানিক শিক্ষা তাঁর মধ্যে না থাকলেও তিনি অসমীয়া সাহিত্যে অসাধারণ পাণ্ডিত্যের পরিচয় দিয়েছেন।বলা যায়, সেই কাব্য সাহিত্যে তিনি অতিন্দ্রিয়বাদী,   বা রহস্যবাদী। কবি হিসেবে তিনি পরিচিত।আর সেখানে -

     কবি সাহিত্যিক নলিনীবালা দেবীর জীবন মোটেই সুখকর ছিল না বলা যেতে পারে, তাঁর ব্যক্তিজীবন ছিল বেদনায় জর্জরিত। আর সেখানে আমরা দেখি বিবাহের বেশ কিছু কাল পরে স্বামীর অকাল মৃত্যু হয়। তবুও তিনি তাঁর সন্তানদের নিয়ে দুঃখ কষ্টের মধ্যে কোন রকমে দিন অতিবাহিত করতে থাকেন। কিন্তু বিধাতার অভিশাপে দুর্ভাগ্যবশতঃ তার স্বামীর মৃত্যুর পর দুই পুত্রের মৃত্যু হয়। স্বামী ও দুই পুত্রের সকাল মৃত্যুজনিত কারণে তিনি নিজেকে এক ভিন্ন পথে সঁপে দিলেন। এর পরিস্থিতির মধ্যে তিনি নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সমর্পণ করলেন ঈশ্বরের পদযুগলে। আর এই সময়কালে তাঁর সৃষ্ট কাব্য প্রতিভা প্রকাশিত হয়।

      সন্ধিয়ার সুর ১৯২৮,সপোনর সুর১৯৪৩,  স্মৃতিতীর্থ ১৯৪৮,পরশমণি১৯৫৪, অলকানন্দা ১৯৬৭ প্রভৃতি কাব্যগ্ৰন্থ।

• কবি নলিনীবালা দেবীঃ  আমরা পূর্বেই আলোচনা করেছি যে, এ কবির ব্যক্তিগত জীবন সমস্যা,যন্ত্রণাময়। কিন্তু পরবর্তীকালে নিজের অক্লান্ত প্রচেষ্টার মাধ্যমে তিনি এই যন্ত্রণাকে সৃজনশীল কাজে রূপদান করতে পেরেছিলেন। অতঃপর তিনি তুলে নিলেন নিজের হাতে কলম। যে কলম সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে জীবনকে নতুন রূপ দিতে এবং তৈরি করতে তিনি সক্ষম হয়েছিলেন। এই সময় তাঁর কবিতায় দুঃখময় জীবন অতি জীবন্ত হয়ে ওঠে। আসলে-

            এ কবির মধ্যে ছিল গভীর বাস্তবতার উপলব্ধি। যে উপলব্ধির মধ্যে দিয়ে তিনি কবিতা লিখতে পেরেছিলেন। আর তাঁর কবিতাগুলি ছিল সংখ্যায় কবিতা, দেশাত্মবোধক কবিতা এবং বিভিন্ন বিষয়ের উপর কবিতা। আর এই সময় তিনি লিখলেন'পিতা', 'সন্ধ্যা' নামক কবিতা।যে কবিতার মধ্যে দিয়ে তিনি কাব্য প্রতিভার পরিচয় দিলেন।আর সেই সকল কবিতাগুলি সকলের হৃদয় স্পর্শ করে যায়।

কাব্যজীবনের মূল স্তম্ভঃ আমরা জানি যে,কবি নলিনীবালা দেবী তাঁর অলকানন্দা  কবিতার জন্য ১৯৬৭ সালে পেলেন সাহিত্য একাডেমিক পুরস্কার। তবে এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, অসমীয়া সাহিত্যে তিনি প্রথম মহিলা যিনি সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার পেয়েছিলেন। এই অলকানন্দা কাব্যগ্রন্থে তিনি কবিতার সাথে যুক্ত করলেন সঙ্গীত। তবে এই কাব্যগ্রন্থে তিনি স্বদেশবাদ, প্রকৃতি প্রেম, ঈশ্বরের কাছে আত্মসমর্পণ প্রভৃতি এই কাব্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য।

গদ্যকার নলিনীবালা দেবীঃ নলিনীবালা দেবী যে একজন খ্যাতিমান কবি ছিলেন শুধু তাই নয়, তিনি ছিলেন একজন অতি সুপরিচিত লেখিকা। আর সেই লেখিকার গদ্যে আমরা দেখি শিল্প স্বাধীন সত্তা, সহজ ভাষা, অর্থপূর্ণ বর্ণনা, মনস্পর্শী বিষয়। আর এই সকল বিষয়গুলি তার গদ্যে প্রতি ছত্রে ছত্রে প্রতিফলিত। শুধু তাই নয় তাঁর সাহিত্য রচনায় ও সংগীতে ভাস্কর্য প্রতিফলিত হয়। যেখানে-

        ‘স্মৃতি তীর্থ’ গ্রন্থটি আসামের সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের একটি দলিল হিসেবে প্রকাশ পায়। ‘এরি আহা দিনবুর'নলিনীবালা দেবীর একটি আত্মজীবনী গ্রন্থ। আর এই গ্রন্থটি শুধুমাত্র একটি আত্মজীবনী গ্রন্থ নয়, এটি একটি আসামে সামাজিক দলিলও বটে,যেখানে তিনি ব্যক্তিগত যাত্রার পাশাপাশি আসামের দৃষ্টিতে ভারতের স্বাধীনতার সংগ্রামের চিত্র, নারীদের জীবনের সামগ্রিক দৃশ্যপট তুলে ধরেছেন। এরপর পরপরই প্রকাশিত হয়১৯৭১ ‘সালে 'শান্তিপথ' নামক একটি প্রবন্ধ সংকলন যেখানে ভারতীয় দর্শনের প্রভাব লক্ষণীয়।

নাট্যকার নলিনীবালা দেবীঃ নলিনীবালা দেবী কবিতা, প্রবন্ধ ছাড়াও অসংখ্য নাটক রচনা করেছেন। যে নাটক গুলিতে আসামের ঐতিহ্য, সামাজিক প্রেক্ষাপট, নারীদের মর্মস্পর্শী জীবন স্থান পেয়েছে। আর সেই নাটকগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- লাস্ট প্রজা ১৯৫৮, মীরাবাঈ১৯৬৮, নবজন্ম, নটি পূজা, ভারত-বিদূষী প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।আসলে-

নলিনীবালা দেবী সমসাময়িক ভারতীয় কবিদের মধ্যে নেতৃত্ব দানের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। বলা যায় অসমীয়া মরমে কবি ধারার মধ্যে তিনি সেরা কবি। যিনি 'কাব্য ভারতী'উপাধি  লাভ করেন এবং বেসামরিক সম্মান হিসেবে 'পদ্মশ্রী' পুরস্কারে ভূষিত হন।

   পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, নলিনীবালা দেবী তৎকালীন সমাজে তাঁর অদম্য ইচ্ছাশক্তি এবং কাজের প্রতি প্রবল আগ্রহ নিয়ে সমাজ সাহিত্যে এক দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন। তবে এখানে বলে রাখা ভালো যে , তাঁর লক্ষ্য অর্জনের পথ কেউ কণ্টকাকীর্ণ করেননি। আসলে তাঁর মধ্যে ছিল কর্তব্যবোধ, দৃঢ় সংকল্প, সাহস, একাগ্রতা যা তাকে সাহিত্যের আসরে সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত করে।বলা যেতে পারে তিনি অসমীয়া সাহিত্যে, অসমীয়াদের কাছে এক মহা মূল্যবান সম্পদ।

ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা, নোটস, সাজেশন, ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের SHESHER KOBITA SUNDARBAN Youtube channel 🙏 

Comments

Popular posts from this blog

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দর্শন প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাইনর সিলেবাস)  ১)চার্বাক মতে ভূত কয়টি ও কি কি? উত্তরঃচার্বাক মতে ভূত চারটি- ক্ষিতি, অপ্ , তেজ ও মরুৎ ২) স্বভাববাদ কী? উত্তরঃ চার্বাক জড়বাদের ভিত্তি হল স্বভাববাদ। যে মতবাদ অনুসারে স্বভাব থেকেই ভূত সৃষ্টি, আবার স্বভাব থেকেই বিচ্ছেদ। যার জন্য ঈশ্বরকে স্বীকার করা প্রয়োজন নেই। ৩) অব্যাপ্যদেশ কথাটির অর্থ লেখো। উত্তরঃ অব্যাপ্যদেশ বলতে বোঝায়- অশাব্দ অর্থাৎ যাকে শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ৫) জ্ঞান লক্ষণ প্রত্যক্ষ কাকে বলে?  কোন একটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তার নিজের বিষয়ীভূত গুণ ছাড়াও যদি অপর একটি ইন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত গুণকে প্রত্যক্ষ করার হয়, তাহলে সেই প্রত্যক্ষকে জ্ঞানলক্ষণ প্রত্যক্ষ বলা হয়। ৬) ন্যায় মতে প্রমাণের প্রকার  উত্তরঃ ন্যায় মতে প্রমাণ চার প্রকার। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শাব্দ। ৭) সন্নিকর্ষ কাকে বলে? উত্তরঃ ন্যায় মতে ইন্দ্রিয় ও কোন বাস্তব পদার্থের মধ্যে একপ্রকার বিশেষ সম্পর্ক ঘটলে তবেই আমাদের একটি বস্তুর প্রত্যক্ষজ্ঞান ।আর ঐ বিশেষ বিশেষ সম্পর্কের পারিভাষিক নাম হলো সন...

ব্রিটিশ(3rd.Sem) পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাইনর সিলেবাস)। ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট প্রণীত আইন প্রভৃতির মাধ্যমে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট আইনানুগ সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব নয়। আর সেখানে আইনানুগ সার্বভৌমত্ব বলা হয়, কারণ-       যেকোনো বিষয়ে পার্লামেন্ট আইন প্রণনয়নের অধিকারী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পার্লামেন্টে কোন আইন প্রণয়নের সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কমন্সসভা তথা নিম্নকক্ষের সার্বভৌমত্বকেই বলা হয় পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব।     ••ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে সার্বভৌমত্ব বলার কারণ- ১) পার্লামেন্টের ওপর আইনগত কোনরূপ বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না। ২) পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের বৈধতার ব্যাপারে আদালত কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনা। ব্রিটেনের আদালত পার্লামেন্ট প্রণীত আইনের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার দ্বারা সীমিত করতে পারে না। ৩) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার উপর শাসনবিভাগ অনুরূপ ন...

ইতিহাস (3rd Semester) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।

 তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তৃতীয় সেমিস্টার ইতিহাস মাইনর)। ১)বন্দেগান-ই-চাহালগানি বলতে কী বোঝায়? •উত্তরঃবন্দেগান-ই-চাহালগান বলতে চল্লিশ জন তুর্কি ও অ-তুর্কি দাসদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে বোঝায়। এই বাহিনীকে ডাল চালিশা বা তুরকান-ই- চাহালগানি নামে ডাকা হতো। ২)আমির খসরু কে ছিলেন? •উত্তরঃ আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। যাঁকে 'ভারতের তোতা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ৩) মহরানা প্রতাপ কে ছিলেন?  •উত্তরঃ মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা ছিলেন মহারানা প্রতাপ সিং। যিনি রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। ৪) জায়গীরদারী সংকট কী? •উত্তরঃ জায়গিরদারী সংকট ছিল মোগল সাম্রাজ্যের একটি অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটে জমি বা জায়গিরের অভাব দেখা দিয়েছিল। যার ফলে প্রশাসনিক খরচ মেটানো এবং যুদ্ধের খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। ৫) দাক্ষিণাত্য ক্ষত কী? •উত্তরঃ দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীত...