ইংল্যান্ডের (6th.Ssm BNGA) বঙ্গ মহিলা গ্রন্থ অবলম্বনে উনিশ শতকের ইংল্যান্ডের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা আলোচনা করো।
'ইংল্যান্ডের বঙ্গমহিলা' গ্রন্থ অবলম্বনে উনিশ শতকের ইংল্যান্ডের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার স্বরূপটি নিজের ভাষায় আলোচনা করো(পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ষষ্ঠ সেমিস্টার, বাংলা অনার্স-CC14)
• আলোচনা শুরুতেই আমরা বলে রাখি যে, 'ইংল্যান্ডের বঙ্গমহিলা'গ্ৰন্থ হতে আমরা জানতে পারি যে, ইংল্যান্ডের কোন নগরে, কোন গ্রামে বিদ্যাচর্চা ও শিক্ষার অভাব নেই। কারণ সে দেশে প্রতিটি গ্রামে কমপক্ষে দুই তিনটি করে বিদ্যালয় আছে। তবে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, এদেশে প্রতিটি গ্রামে বা নগরে কতগুলি বিদ্যালয় বা কলেজ আছে তার সংখ্যা গণনা করা বিষয়টি অসম্ভব। আর এই তথ্য থেকে প্রমাণ করা যায় যে, সে দেশের কোন গ্রামে,কোন নগরে কেউ অন্তত অশিক্ষিত হয়ে থাকতে চায়না।তবে-
• ইংল্যান্ডের কোন মানুষ শিক্ষালাভ ও শিক্ষালয় স্থাপনের ক্ষেত্রে সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকেন না। সে দেশের সাধারণ মানুষ এবং ধনী ব্যক্তিরা নিজেদের প্রচেষ্টায় সে দেশের বিদ্যালয় বা কলেজ স্থাপন করে থাকে। শুধু তাই নয়, সে দেশে পুরুষদের যেমন বিদ্যালয় আছে, ঠিক তেমনি বিভিন্ন জায়গায় বালিকাদের জন্য বিদ্যালয় দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও সে দেশের মহিলারা বড় বড় কলেজে গিয়ে পুরুষদের সঙ্গে একই সাথে,একই সময়ে তারা বিদ্যালাভ করে থাকে। শুধু তাই নয়-
• ইংল্যান্ডের শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিরা শিক্ষার প্রতি এতটাই শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন যে, কোনো কোনো ব্যক্তি সারা জীবন কেবলমাত্র বিদ্যাচর্চা করে জীবন অতিবাহিত করেছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে জ্যোতিষের আবিষ্কার করে, আবার কেউ বিজ্ঞানের অনুশীলন করে সারা জীবন কাটিয়ে দেয়। তাই সে দেশে আমরা দেখতে পাই অসংখ্য কবি সাহিত্যিকদের উপস্থিতি। যার ফলে বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন সংঘ, হাসপাতাল, ডাক্তারখানা গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলি শিক্ষিত মানুষদের দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে। যার ফলে এদেশে শিক্ষার সাথে সাথে শিক্ষিত লোকের সংখ্যা বাড়ছে এবং প্রত্যেকের জন্য কর্মের সংস্থান কঠিন হয়ে পড়ে। সেখানে কিন্তু -
• ইংরেজরা বিদ্যার কদর জানেন না, তাই তারা অর্থের দাস। তবে তারা অর্থের দাস হলেও শিক্ষাকে তারা কখনোই অবমাননা করে না। আর সেই কারণেই সে দেশে অসংখ্য বিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে। আসলে বিদ্যালয়ের প্রতি তাদের ভালোবাসা আছে বলেই শিক্ষার এই চরম উন্নতি সেদেশে। তবে বলে রাখা ভালো যে-পৃথিবীতে এমন কোন বিষয় নেই,এমন কোন দ্রব্যের আবিষ্কার হয়নি, সেই বিষয়ে বা দ্রব্য সম্বন্ধে ইংরেজিতে বই নেই।এখানে আরো উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ব্রিটিশ মিউজিয়াম ছাড়াও লন্ডনে এমন সব পুস্তাকলয় আছে যেখানে পুস্তকের সংখ্যা ৪০-৫০ হাজার আবার কোন কোন জায়গায় লক্ষাধিকও পুস্তক আছে। পাশাপাশি-
• ইংরেজদের রাজনীতি ও রাজ্য শাসনের উপর বেশ আস্থা আছে। আর এই আস্থা থাকার জন্য তারা সংবাদপত্র পাঠ করাকে একটি অন্যতম কর্ম হিসেবে তারা মনে করে। আর এই পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে কুড়িখানা দৈনিক সংবাদপত্র সকাল বেলা প্রকাশিত হয়। তবে লেখিকা মনে করেন-
• বহুবছর আগে লন্ডনে দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ বসবাস করত। কিন্তু তারা শিক্ষিত না, কারণ লেখাপড়া শিখবার কোন সুযোগ সেদিন তাদের কাছে ছিল না। তবে পরবর্তীতে সেখানে আইন প্রচলিত হয় যে, প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিজের উদ্যোগে তার পুত্র সন্তানদের লেখাপড়া শেখাবেন। আর যদি তিনি সেই কাজ না করেন তাহলে তাকে জরিমানা করা হবে। দরিদ্র মানুষের সন্তানদের পড়াশোনার জন্য সরকার অনেকগুলি বিদ্যালয় স্থাপন করেছেন। যে স্কুলগুলোকে বলা হয় বোর্ডস্কুল। সেই স্কুলগুলিতে বিনা পয়সায় বা স্বল্প পয়সায় লেখাপড়া শিখবার ব্যবস্থা আছে। তবে সে দেশে শিক্ষা সংক্রান্ত আইন প্রচলিত হওয়ার কারণে এখন প্রতিটি মানুষ লিখতে এবং পড়তে পারেন।তবে-
• ইংল্যান্ডে পুরাতন প্রসিদ্ধ কতগুলি স্কুল আছে যেখানে ধনীদের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করতে পারে এছাড়া এখানে আসে মধ্যবিত্ত সম্পন্ন মানুষের ছেলেমেয়েরা। সে দেশে হ্যালো, ইটন নামক দুটি বড় ইস্কুল আছে, যে স্কুলগুলিতে পড়াশোনা হয় একেবারে মন্দ রীতি সেকেলের প্রথা অনুসারে। সেদেশে অনেক ছোট ও দুর্বল ছেলেরা বলবান বালকদের ক্রীতদাস বা চাকর স্বরূপ হয়ে থাকে। পরবর্তীতে এই নীতি কিছুটা শিথিল হয়। এছাড়াও বিদ্যালয় গুলিতে শিক্ষকরা কখনোই ছাত্রদের অতিরিক্ত শাসন করেন না। সে দেশে ছাত্ররা ল্যাটিন ও গ্রীক ভাষায় শিক্ষা লাভ করে। এই দুই ভাষাতে তারা পদ্য রচনা করেন, এছাড়াও অংক,বিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়ে ছাত্ররা পড়াশোনা করে থাকে। পাশাপাশি-
•লেখিকা কৃষ্ণাভামিনী দেবী সে দেশের অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে জানান যে, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা দেওয়া, পরীক্ষা করা, উপাধি, ছাত্রবৃত্তি ও পুরস্কার বিতরণ করা এবং ছাত্রদের নিয়ম রীতিতে রাখা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান উদ্দেশ্য। তবে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ গৃহে অনেক অধ্যাপক লেকচার ও উপদেশ দেন ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে। সেখানে অতি উত্তম পুস্তকশালা, জাদুঘর, উদ্ভিদের বাগান ইত্যাদি অনেকগুলি সাধারণ অধিষ্ঠান আছে। শিক্ষকরা ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর নজর দেন কোন ছাত্র অন্যায় করলে সেখানে শাস্তির ব্যবস্থাও ছিল।
• কলেজে প্রতিদিন সকালে ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ছাত্রদের শিক্ষাদান করা হতো। এখানে সন্ধ্যার সময় একটি বড় ঘরে একদিকে ছাত্ররা অপরদিকে কলেজ কর্তৃপক্ষ একই সাথে বসে আহার করতেন। এই আহার গ্রহণের আগে এবং পরে বৃত্তিধারী ছাত্র ঈশ্বরের প্রসাদ পাঠ করে থাকেন। সে দেশে প্রতিটি কলেজে নানা প্রকার সমাজ আছে।। শুধু তাই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ছাত্রদের একই সাথে মেশার জন্য একটি মিলন সমাজ থাকতো। এই মিলন সমাজ ছাড়াও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্য,সংগীত প্রভৃতি বিষয়ে আরো অনেক সমাজ আছে।
• পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, ইংল্যান্ডে কোনো ছাত্র কলেজে গিয়ে যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা দিতে পারে, তেমনি আবার কোন ছাত্র কলেজে না গিয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা দিতে পারে। তবে এই ধরনের ছাত্ররা কলেজ জীবনের সুখ থেকে বঞ্চিত থাকে। তবে তখনকার দিনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উপাধি পেতে বেশ ব্যয়সাধ্য ছিল। আর সে কারণে ধনী লোকের সন্তানরা সেখানে পড়াশোনা করতে যেত।
ঠিক এরূপ অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সাজেশন এবং ভিডিও পেতে ভিজিট করুন আমাদের SHESHER KOBITA SUNDORBON YOUTUBE CHANNEL।
Comments
Post a Comment